1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আরএসএস-এর মুখে সাম্প্রদায়িক ঐক্য

৫ জুলাই ২০২১

যে আরএসএস হিন্দুত্বাদী রাজনীতির জন্য পরিচিত, তার প্রধান মোহন ভাগবত হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা শোনালেন।

https://p.dw.com/p/3w286
মোহন ভাগবত
ছবি: Strdel/AFP/Getty Images

ভারতবাসীর পরিচয়, তিনি একজন ভারতীয়। হিন্দু-মুসলিম ঐক্যই ভারতের পরিচয়। এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বললেন, আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত। তার এই বক্তব্য নিয়ে দেশ জুড়ে নতুন করে জল্পনা শুরু করেছে। কেউ বলছেন, সামনে উত্তর প্রদেশের নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এমন কথা বলেছেন ভাগবত। আবার কেউ বলছেন, ভাগবত যদি সত্যিই এ কথা মনে করেন, তাহলে বিজেপির যে নেতারা সাম্প্রদায়িক কথা বলছেন তাদের বিরুদ্ধএ ব্যবস্থা নিক আরএসএস।

ভারতে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জন্য পরিচিত আরএসএস। যার প্রধান এখন মোহন ভাগবত। আরএসএস-এর ছাতার তলায় বিশ্ব হিন্দু পরিষদ, বজরং দলের মতো অতি হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যেমন আছে, তেমনই আছে বিজেপির মতো রাজনৈতিক সংগঠন। সকলেই আরএসএস-এর হিন্দুত্ববাদী নীতি অনুসরণ করে। এই আরএসএস বহু বছর ধরে ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চেয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতির প্রচার এবং প্রসার করেছে জনসমক্ষে। ঘরওয়াপসির কথা বলেছে। অর্থাৎ, মুসলিম এবং খ্রিস্টানদের ধর্মান্তরিত করার কথা বলা হয়েছে। সেই আরএসএস-এর প্রধান যখন হিন্দু-মুসলিম ঐক্যের কথা বলেন, তখন তা অন্য বার্তা বহন করে।

রোববার মুসলিম রাষ্ট্রীয় মঞ্চের এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন ভাগবত। সেখানে তিনি বলেছেন, ''যে বা যারা গো-রক্ষার দোহাই দিয়ে গণরোষ তৈরি করে কাউকে কাউকে আক্রমণ করছেন, তারাও হিন্দুত্বের বিরোধী। মনে রাখতে হবে, ভারতের হিন্দু, মুসলিম একই উৎস থেকে এসেছে।'' অথচ এই আরএসএস-এরই একটি সংগঠন গোরক্ষক সমিতি। বিভিন্ন অঞ্চলে গোরক্ষার নামে সাম্প্রদায়িক উস্কানির অভিযোগ যাদের বিরুদ্ধে বার বার উঠে এসেছে। বস্তুত, ফ্রিজে গোমাংস রাখা থাকতে পারে, এই অপরাধে খুন হতে হয়েছে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষকে। সেখানেও হিন্দুত্ববাদীদের নাম সামনে এসেছে। প্রশ্ন উঠছে, তখন কেন চুপ ছিলেন ভাগবত? যদি সত্যিই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির কথা বলেন তিনি, তাহলে কেন গোরক্ষক সমিতির মতো উগ্র হিন্দুত্ববাদী সংগঠন আরএসএস-এর ছাতার তলায় স্থান পায়। কেন বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ঘরওয়াপসি স্লোগানের বিরোধিতা করেন না তিনি?

ভাগবত বলেছেন, ''গরু একটি পবিত্র প্রাণী। কিন্তু গো-রক্ষার কারণে যারা গণরোষ তৈরি করে অন্যত্র আক্রমণ করছেন, তারা হিন্দুত্ব থেকে বিচ্যুত হচ্ছেন। আইন আইনের পথে চলবে।'' প্রশ্ন উঠছে, উত্তর প্রদেশের মতো রাজ্যে, যেখানে একের পর এক লিঞ্চিংয়ের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে আইন অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছে? পুলিশ এবং প্রশাসন ব্যবস্থা নিচ্ছে? ম্প্রতি গাজিয়াবাদের একটি ঘটনা ফের এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে।

বস্তুত, মোহন ভাগবতের কথা শুনে এই প্রশ্নগুলিই তুলেছে এমআইএম প্রধান আসাদুদ্দিন ওয়েসি। তাঁর প্রশ্ন, নাথুরাম গডসের ভাবাদর্শে যারা বিশ্বাস করেন, যারা হিন্দুত্ববাদে বিশ্বাস করে, তারাই মুসলিমদের লিঞ্চিং করে। এবং তাদের সমর্থন দেয় হিন্দুত্ববাদী সরকার। ভাগবত কি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?

কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিং বলেছেন, ''মোহন ভাগবত কি এই শিক্ষা তার প্রচারক, অনুগামী, বিশ্বহিন্দু পরিষদের নেতাদের দেবেন? বিজেপির যে নেতারা হেট স্পিচ দেন, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন?''

বিশেষজ্ঞদের একাংশের বক্তব্য, ভগবতের এই বক্তব্য আসলেরাজনৈতিক। উত্তর প্রদেশে বিজেপি খুব ভালো জায়গায় নেই বলেই মনে করা হচ্ছে। আগামীা বছর সেখানে নির্বাচন। উত্তর প্রদেশের মুসলিম ভোটও বিজেপির দরকার। সে কারণেই এ ধরনের সম্প্রীতির কথা বলছেন ভাগবত। তবে ভগবত নিজে বলেছেন, তিনি কোনো রাজনীতির কথা বলতে চান না।

বস্তুত, উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ উগ্র হিন্দুত্ববাদী বলেই পরিচিত। তার বিরুদ্ধে একাধিকবার হেট স্পিচ দেওয়ার অভিযোগ আছে। লাভ জিহাদের বিরুদ্ধে তিনি আইন  করেছেন। সিএএ বিরোধী আন্দোলনের সময় মুসলিমদের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থা নিয়েছেন এবং প্রকাশ্যে বিবৃতি দিয়েছেন। মোহন ভগবতের বক্তৃতা সেই সমস্ত ক্ষতে মলম দেওয়ার জন্যই তৈরি বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ।

এসজি/জিএইচ (পিটিআই, আনন্দবাজার)