পরমাণু বিরোধী
১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২একজনের বয়স এখন ৮৩, অন্যজনের ৮৫৷ পৃথিবীর দুই প্রান্তে তাঁদের বাস৷ দুজনকেই বলা হলো জীবনের বীভৎসতম মুহূর্তটির কথা বলতে৷ চার ঘন্টা ধরে বলে গেলেন তাঁরা৷ শ্রোতারা নিরব৷ হিরোশিমা-নাগাসাকি আর হলোকস্টের কথা শুনে কেঁদেই ফেললেন অনেকে!
১৯৪৫ সালের আগস্ট মাস৷ সেদিন যুক্তরাষ্ট্র আণবিক বোমা ফেলায় হিরোশিমায় নোবুও মিয়াকের কী অভিজ্ঞতা হয়েছিল সেটা তাঁর বর্ণনাতেই শোনা যাক৷
‘‘তখন সকাল সোয়া ৮টা৷ আমি সবে ট্রেনে উঠেছি৷ হঠাৎ ছাদ থেকে ঠিকরে বেরুলো নীল আলো, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ চোখ যেমন ক্ষণিকের জন্য অন্ধ করে দেয়, আলোটা ছিল সেরকম৷ আমি ভাবলাম হয়তো ট্রেনে শর্ট সার্কিট হয়েছে৷ কিন্তু পরক্ষণেই বুঝতে পারলাম, মারাত্মক কিছু ঘটে গেছে৷ লাফ দিয়ে নেমে পড়লাম ট্রেন থেকে৷ নামতেই বিকট একটা শব্দ আর এক ঝটকা ঝড়, কোথায় গিয়ে উড়ে পড়লাম বলতেই পারিনা৷ গায়ে যে বোমার আঘাত লেগেছে এ নিয়ে তখন কোনো সন্দেহ ছিল না৷ মনে হলো বুঝি মরেই যাচ্ছি৷''
‘‘চারদিকে শুধু কালো ধোঁয়া আর ধুলো৷ চোখে কিছ দেখতে পাচ্ছিলাম না৷ কিন্তু মা-কে তো বাঁচাতে হবে! অন্ধের মতো ছুটে গেলাম বাড়ির দিকে৷ গিয়ে দেখি বাড়ির অর্ধেকটা ধ্বংস হয়ে গেছে, বাকি অংশ মোটামুটি ঠিক আছে৷ সেখানে বেঁচে থাকা মানুষের মাঝ থেকে মা-কে বের করেছি, অমনি দেখি শহরের দিক থেকে আগুন ছুটে আসছে৷ মাকে নিয়ে আবার ছুটলাম ট্রেনের দিকে৷ সেখানে খোলা জায়গা আছে- এই ভেবেই সেদিকে যাওয়া৷ ওই বুদ্ধিটার জন্যই আজও বেঁচে আছি৷ তবে দেখেছি মানুষের কষ্ট৷ পুড়ে মরা, আধপোড়া অবস্থায় বীভৎস চেহারা নিয়ে বেঁচে থাকা মানুষ দেখেছি৷ শুনেছি মৃত্যু যন্ত্রণার চিৎকার৷ অনেকে বলছিল, আমার গা পুড়ে যাচ্ছে, আমি নিশ্বাস নিতে পারছিনা৷ প্রত্যেকে থরথর করে কাঁপঁছিল৷ কেউ কেউ যন্ত্রণা থেকে বাঁচতে ঝাঁপ দিচ্ছিল নদীতে৷ মনে হচ্ছিল আমি যেন নরকের মাঝখানে দাঁড়িয়ে৷''
নরকযন্ত্রণা কাকে বলে তা জিসেলে সিকোইজও জেনেছেন ১৯৪৫ সালে৷ সেটা অবশ্য একটু অন্যভাবে৷ তাঁর দেশ হাঙ্গেরি তখন জার্মান নাৎসি বাহিনীর দখলে৷ চুস্ত শহরে আর সবার মতো ১৮ বছরের মেয়েটির উচ্ছল জীবনেও হঠাৎ নেমে এলো বিভীষিকা৷ হাঙ্গেরির ৮ লাখ ইহুদিকে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে ৮ সপ্তাহের মধ্যে মেরে ফেলে নাৎসিরা৷ তবে জিসেলে যে ক্যাম্পে ছিল সেখানে হত্যা করা হয় ১২ লাখ ইহুদিকে৷ জিসেলে বেঁচে গেছে ভাগ্যের জোরে৷ বেঁচেছে দিনে এক টুকরো রুটি, এক বাটি সুপ খেয়ে৷ ৩২ হাজার মেয়ের জন্য ছিল দুটি মাত্র টয়লেট৷ মেয়েরা যখন দুটো দরজার সামনে দাঁড়াতো, জিসেলের মনে হতো বুঝি রাস্তায় লাইনে দাঁড়িয়ে সবাই কিছু কিনতে চায়৷
৬৭ বছর আগের বীভৎস অভিজ্ঞতার বর্ণনা নোবুও আর মিয়েকো দিয়েছেন একই মঞ্চে দাঁড়িয়ে৷ হিরোশিমা-নাগাসাকি আর হলোকস্টের হত্যাযজ্ঞের চার প্রত্যক্ষদর্শী এখন ইসরায়েলে৷ রোববার থেকে শুরু হবে নোবুও, জিসেলেসহ চার জনের নতুন এক অভিযাত্রা৷ ‘আর নয় হিরোশিমা, আর নয় নাগাসাকি' এ বার্তা তাঁরা পৌছে দেবেন সারা বিশ্বে৷ পৌঁছাবেন নিজেদের জীবনের সেই বীভৎস অধ্যায়ের বর্ণনা দিয়েই৷
এসিবি / জেডএইচ (ডিপিএ)