1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমি খুব গর্ব অনুভব করি’

২৯ জুন ২০১১

খায়রুল বাশার নুরুল ইসলাম সাতক্ষীরার বাসিন্দা৷ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন তিনি৷ স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি বাশার নাটক করতেন৷ উদ্দেশ্য মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে উৎসাহিত করা, মুক্তিযোদ্ধাদের চাঙ্গা রাখা৷

https://p.dw.com/p/11lI4
শেখ মুজিবের ভাষণ নাড়া দেয় বাশারকেছবি: Public domain

একাত্তরের মার্চ মাসে খায়রুল বাশার ছিলেন খুলনায়৷ তখন তিনি চাকরি করতেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডে৷ ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান'এর ভাষণ বাশারকে নাড়া দেয়৷ তিনি বুঝতে পারেন, স্বাধীনতা যুদ্ধ আসন্ন৷ তাই তখনই সাতক্ষীরায় ফিরে যান বাশার৷ সমমনা তরুণদের নিয়ে শুরু করেন গেরিলা প্রশিক্ষণ৷ তখন তাদের কাছে অস্ত্র ছিল না, ডামি রাইফেল দিয়েই চলত প্রশিক্ষণ৷

সবাইকে উদ্বুদ্ধ করা

এরপর এলো ২৫ মার্চ৷ যুদ্ধ শুরু৷ বাশাররা তখন চলে গেলেন গ্রামে৷ মুক্তির লড়াইয়ে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করতে৷ ডয়চে ভেলেকে খায়রুল বাশার নুরুল ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম যে, দীর্ঘকালীন মুক্তিযুদ্ধ হয়ত সামনে চলে আসবে৷ তার জন্য আমার বিভিন্ন দলে ভাগ হয়ে গ্রামে চলে যাই৷ উদ্দেশ্য ছিল সবাইকে মুক্তিযুদ্ধে উদ্বুদ্ধ করা৷''

11: Nine members, three generations live in a single room house. DW/ Das Februar 2011 Bangladesch
‘‘শরণার্থী শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে, মুক্তাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আমরা নাটক করতাম'' : বাশারছবি: DW

সম্মুখ যুদ্ধ

এভাবে একসময় সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন বাশার৷ জুন মাসের কথা৷ তারা অবস্থান করছিলেন ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের ভোমরা অঞ্চলে৷ পাকিস্তানি সেনারা এক রাতে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উপর৷ সম্মুখ যুদ্ধ চলে দীর্ঘ সময়৷ তিনি বলেন, ‘‘সেটা বড় যুদ্ধ ছিল৷ প্রায় সতের থেকে আঠার ঘণ্টা যুদ্ধটা ছিল৷ আমাদের পক্ষ থেকে দু'জন মারা গিয়েছিল৷ তবে অনেক পাকিস্তানি সেই যুদ্ধে প্রান হারায়৷''

ছয় সহযোদ্ধাকে হারানো

সেই যুদ্ধে শেষ অবধি টিকতে পারেননি বাশাররা৷ পাকিস্তানি গোলন্দাজ বাহিনীর আক্রমণের কারণে একসময় পিছু হটতে হয় তাদের৷ মর্টারের গোলা আর বৃষ্টির মধ্যে পেছনে হটে আসার সেই চেষ্টা এখনো মনে আছে তাঁর৷ তবে একাত্তরের যুদ্ধে বাশারের কাছে সবচেয়ে মর্মান্তিক ছিল, কয়েক সহযোদ্ধাকে হারানোর ঘটনা৷ জুলাই মাসে টাকি হাসনাবাদ এলাকার যুদ্ধে ছয় সহযোদ্ধাকে হারান তিনি৷ বাশার বলেন, ‘‘আমাদের একটা দলকে পাকিস্তানিরা ঘিরে ফেলেছিল৷ রাতের বলে ওরা সাংঘাতিকভাবে গোলাগুলি করে আমাদের ছয় সহযোদ্ধাকে হত্যা করে৷''

A Bangladeshi boy places a bouquet before a portrait of country's independence leader Sheikh Mujibur Rahman at Dhanmondi in Dhaka, Bangladesh, Thursday, March 26, 2009. Bangladeshis celebrated 38 years of independence Thursday amid tight security as tens of thousands of people visited a national memorial outside the capital to mark the split from Pakistan in which millions of people died. (AP Photo/Pavel Rahman)
বাঙালি জাতির জন্য একাত্তরের বিজয় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি : খায়রুল বাশার নুরুল ইসলামছবি: AP

নাটকের দল

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেই বাশার নাটকের দল তৈরি করেন৷ একাত্তরের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন সেনা ক্যাম্প এবং শরণার্থী শিবিরে নাটক দেখায় তাঁর দল৷ এজন্য সেই কয়েকমাস তিনি ঘাঁটি গেড়েছিলেন বশিরহাট এলাকায়৷ তাঁর কথায়, ‘‘শরণার্থী শিবিরে, মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্পে, মুক্তাঞ্চলের মানুষের মধ্যে আমরা নাটক করতাম৷''

বিজয়ী বাশার

এভাবে চলে আসে ডিসেম্বর, বিজয়ের মাস৷ সেই মাসের ৩ তারিখ নাটক ছেড়ে আবারো সেনা ক্যাম্পে ফেরেন বাশার৷ তিনি বলেন, ‘‘যুদ্ধ করতে করতেই আমরা সাতক্ষীরা ঢুকি৷ ডিসেম্বরের সাত তারিখ৷''

বিজয়ের পর সাতক্ষীরার সাংস্কৃতিক অঙ্গন পুনরুদ্ধারে মনোযোগী হন বাশার৷ ৭২ সালের ২৬ মার্চ, স্বাধীনতা দিবসে খুলনায় মঞ্চ নাটক পরিচালনা করেন তিনি, নাম ‘বিপ্লবী বাংলাদেশ'৷ সেটি সম্ভবত স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথম মঞ্চ নাটক৷ এরপর বাশার ফিরে যান নিজের কর্মক্ষেত্রে৷

গর্ব, হতাশা

এই বিজয়ী সেনা জানান, বাঙালি জাতির জন্য একাত্তরের বিজয় সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি৷ কিন্তু সেই বিজয়ের পর বাংলাদেশে অনেক কিছু ঘটে গেছে, যা হতাশ করেছে তাঁকে৷ তবে একাত্তরে যুদ্ধে অংশ নিতে পেরে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হতে পেরে গর্বিত খায়রুল বাশার নুরুল ইসলাম৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি খুব গর্ব অনুভব করি৷ আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা, একটি জাতির মুক্তির যুদ্ধে আমি অংশগ্রহণ করেছিলাম৷''

গ্রন্থনা: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান