1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আমাদের ‘বৈশ্বিক' ভাবনা ও গণমাধ্যমের ‘কপিরাইট'

১৩ জুলাই ২০২১

সত্যি ভেবে পাচ্ছি না৷ কখনো ভাবছি, থাক বাদ দিই৷ শেষ পর্যন্ত ভাবলাম, লিখে রাখি৷ হয়তো কেউ পড়বেন৷ পড়লে হয়তো কথা বলবেন, আলোচনা করবেন৷ তাতে হয়তো, আগামীতে এমনটি করার আগে আরেকবার ভাববেন৷

https://p.dw.com/p/3wQnp
Cannes | Filmfestspiele | Film Rehana Maryam Noor
ছবি: Zbaer Ahmed/DW

বিষয়টা বলি৷ অনেকেই জানেন, কান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব কাভার করতে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে আমি আর আমার কলিগ অনুপম গেলাম ফ্রান্সের কান শহরে৷ করোনা, নানান বিধিনিষেধ পার হয়ে যতটুকু সম্ভব খবর দেয়ার চেষ্টা করলাম৷ এবারের উৎসবে প্রথমবার বাংলাদেশের কোনো চলচ্চিত্র কানের মূল পর্বে আনুষ্ঠানিক প্রদর্শনের সুযোগ পেলো৷ সেটিই ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রপ্রেমী ও সংশ্লিষ্টদের আগ্রহের জায়গা৷ সে অনুযায়ী আমরা চেষ্টা করেছি ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের আগ থেকে শেষ পর্যন্ত নানান প্রতিক্রিয়া দেখানোর৷

প্রিমিয়ারের পরপর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখাতে লাইভ করেছি নাম ভূমিকায় অভিনয় করা আজমেরী হক বাঁধন ও নির্বাহী প্রযোজক এহসানুল হক বাবুর সঙ্গে৷ এমনকি পরে পরিচালক আবদুল্লাহ মোহাম্মদ সাদ ও তার টিমের সঙ্গে কথা বলেছি৷ সাদ যেসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন তা দর্শকদের জন্য প্রচার করেছি৷ এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি যে ভিডিওটি সাড়া ফেলেছে তা হলো সিনেমার ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ারের পর দর্শকদের দাঁড়িয়ে অভিনন্দন জানানো এবং সিনেমা শুরুর আগে স্টেজে দাঁড়িয়ে সাদের প্রতিক্রিয়া৷ আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই তা আমাদের ফেসবুক পাতায় প্রকাশ করেছি৷

পোস্ট করার পরপর এটাতে যে আবেগটি ফুটে উঠেছে তা আমাদের পাঠক, দর্শকদের এতটাই ছুঁয়ে গেছে যে, তারা মুহূর্তে তা শেয়ার-লাইক দিতে শুরু করেছেন৷ আমাদের এই ভিডিওটি বাংলাদেশের মিডিয়া আউটলেটগুলোও (টিভি ও অনলাইন প্লাটফর্মগুলো) প্রচার করলো৷ খুব ভালো কথা! কিন্তু তাতে কেউ লিখলেন ‘সংগৃহীত', কেউ কিছুই লিখলেন না৷ হাতে গোনা দু-একটি মিডিয়া ডয়চে ভেলের কথা লিখলো!

এরপর থেকে ভাবছি৷ এমন কারেন্ট ইভেন্ট, আরেকজনের এক্সক্লুসিভ এভাবে নিজের বলে বা সংগৃহীত বলে চালিয়ে দেয়াটা কি ঠিক হলো? আপনি যদি ‘সংগৃহীত'ই বলবেন, তাহলে কোথা থেকে সংগৃহীত বললে আপনার ‘জার্নালিস্টিক ইনটেগ্রিটি ও কারেক্টনেস'টা বেশি হয়৷ আর যদি সংগৃহীত বলতেই চান, তাহলে যিনি এই ভিডিওর মালিক তার অনুমতি নিন৷ যা-ই হোক, অভিযোগ নেই৷ কিন্তু বোধোদয়টা প্রয়োজন৷

আমি তো বাংলাদেশের মিডিয়ায় অনেকদিন কাজ করেছি৷ মনে করার চেষ্টা করলাম, আমিও কি তাই করতাম? হ্যাঁ, কখনো কখনো করতাম৷ বিশেষ করে পুরোনো ঐতিহাসিক ভিডিও হলে করা হতো৷ অনেক সময় হয়তো প্রডিউসার বা আমি নিজে অনলাইন থেকে ছবি নামিয়ে বসিয়ে দিলেও তা অন্যায় ভাবতাম না৷ এটার কারণ, ‘বাংলাদেশে আর কে দেখবে?'-এমন ভাবনা৷ নিজেকে বা নিজের কাজকে দেশের গণ্ডিতেই শুধু চিন্তা করতাম৷ এটা আমিসহ আমার সতীর্থদের একটা বড় মানসিক সীমাবদ্ধতা৷

আমাদের দেশে কপিরাইট আইন নিয়ে খুব একটা কেউ ভাবেন না৷ কিন্তু এখন তো সোশ্যাল মিডিয়ার যুগ৷ ফেসবুক বা ইউটিউবে আপনার ভিডিও পাবলিশ হচ্ছে৷ সেখানে যদি ফুটেজের মূল মালিক কপিরাইট ক্লেইম করেন, তাহলে মিডিয়াগুলো তখন এই ভিডিওর জন্য ঝামেলায় পড়বেন৷ তাই সবার এ বিষয়ে সচেতন হওয়া জরুরি, যেন ভবিষ্যতে বিপদে না পড়তে হয়৷

HA Asien | Zobaer Ahmed
যুবায়ের আহমেদ, ডয়চে ভেলে

এছাড়া আমাদের নিজেদের ‘গ্লোবাল' ভাবতে শুরু করতে হবে৷ বাংলাদেশের স্থানীয় গণমাধ্যমে কাজ করছেন বলে কেউ দেখছে না, তা ভাবার অবকাশ নেই৷ বরং স্থানীয় গণমাধ্যমে কাজ করেও বৈশ্বিক পর্যায়ে অনেক অবদান ও অর্জনের সুযোগ রয়েছে৷ কিন্তু তার জন্য মানের ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে হবে৷ মান মানে শুধু সাংবাদিকতার মান নয়, কপিরাইটের মতো বিষয়গুলোও খেয়াল রাখতে হবে৷ যারা অনলাইন থেকে একটি ছবি নামিয়ে দিয়ে দেন, তারা কখনো আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গিয়ে নিজেদের কাজ তুলে ধরতে পারবেন না৷ কারণ, সেখানেই বাদ হয়ে যাবে তা৷

আর বাংলাদেশে বসে, বা কোনো ‘ছোট' মিডিয়া আউটলেটে বসেও যিনি কাজ করছেন, তার জন্যও এই সামাজিক মাধ্যমের যুগে পুরো দুনিয়াটা খোলা৷ সেই দুনিয়ায় আছে অনেক সুযোগ৷ তাই গণ্ডিটা বড় করে চিন্তা করতে হবে৷ কান চলচ্চিত্র উৎসবের আঙ্গিনায় বসেও আমরা আলাপ করছিলাম, কেন বাংলাদেশের লেখক, নির্মাতা, কলাকুশলীরা এখানে আসেন না৷ সিনেমার সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেকটি মানুষের জন্যই এসব উৎসবে অনেক সুযোগ থাকে৷ সেগুলো কেন ‘এক্সপ্লোর' করেন না৷

বাংলাদেশিরা আজকে সারাবিশ্বে কাজ করছে৷ ভালো করছে৷ তাদের সুনাম তৈরি হচ্ছে৷ এই সুনামকে এগিয়ে নিতে হলে সবাইকে চেষ্টা করতে হবে৷ সক্ষমতা আমাদের আছে৷ আমাদের সৎভাবে এগিয়ে যেতে হবে৷ আর বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রতিযোগিতা করার মানসিকতা তৈরি করতে হবে৷ ‘শর্টকাট' পথ থেকে সরে আসতে হবে৷