‘‘ফুটবল হ্যালেলুইয়া’’ প্রদর্শনী
৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৪প্রিয় ক্লাবের জার্সি পরে কবরস্থ হওয়া; সেই কবর যদি আবার স্টেডিয়ামের কাছের গোরস্থানে হয়, তাহলে তো সোনায় সোহাগা – এ সব তো ‘অন্তিম' ব্যাপার! ফ্যানের জীবদ্দশায় আসছে প্রিয় খেলোয়াড়ের ঘেমো জার্সি; কিংবা সেই প্লেয়ারের নাম ও নম্বর লেখা জার্সির ওপর মহানায়কের হস্তাক্ষর! বেদী ও প্রতিকৃতি সুদ্ধ ফুটবলের গির্জা – প্রার্থনা এবং গোল্ডেন বুট: সব কিছুই পাওয়া যাবে ‘‘ফুটবল হ্যালেলুইয়া'' প্রদর্শনীতে, যা কিনা আমস্টারডাম সেরে ‘ওয়ার্ল্ড টুরে' যাবে৷
আমস্টারডাম মিউজিয়ামের পরিচালক পল স্পিস-এর মতে বহু মানুষের কাছে ফুটবল ধর্মের জায়গা নিয়েছে, যে কারণে ‘‘স্টেডিয়ামগুলো ভর্তি, কিন্তু গির্জাতে মানুষ নেই''৷ ফ্যানদের ভাবসাব, আচার-আচরণও ক্রমেই আরো জটিল, আরো বিচিত্র হয়ে উঠছে: যেন খ্রিষ্টীয় গির্জার আচার-অনুষ্ঠানের অনুকরণে৷ তাই আমস্টারডামের এগজিবিশনে ঢোকার সময়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলের ‘হিম' বা ‘অ্যান্থেম'-টি বাজে: ‘ইউ উইল নেভার ওয়াক অ্যালোন'৷ দু'পাশে ফুটবলের দেবতা-উপদেবতাদের ছবি, সেই সঙ্গে ‘ধর্মবিশ্বাস' ও কুসংস্কারের নানা নিদর্শন৷
সুইজারল্যান্ডের বাসেল-এর ইতিহাস সংগ্রহশালা ও আমস্টারডামের মিউজিয়ামটি মিলে ট্রফি, ফ্যানদের মেমোরাবিলিয়া বা স্মারকদ্রব্য, ভিডিও, ফটোগ্রাফ ইত্যাদি সংগ্রহ করেছে৷ প্রদর্শনী চলবে ৪ঠা জানুয়ারি ২০১৫ অবধি৷ আর ফুটবল নিয়ে পাগলামির আদর্শ দেশ যদি কোথাও থাকে, তবে তা নিশ্চয় নেদারল্যান্ডস৷ কোনো আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতা এলেই গোটা দেশ কমলা রঙে ভরে যায় – সেটাই জাতীয় ফুটবল দলের জার্সির রং কিনা৷ তবে ফুটবল নিয়ে মাতামাতিতে ইউরোপের বাকি দেশগুলোও কম যায় না৷
প্রতি সপ্তাহান্তে ফ্যানরা দূর-দূরান্তের ফুটবল স্টেডিয়াম অভিমুখে পাড়ি দেন, কেননা তাঁদের প্রিয় দল সেখানে খেলছে৷ স্পিস এই স্টেডিয়ামযাত্রীদের তীর্থযাত্রীর সঙ্গে তুলনা করেন৷ খেলোয়াড়দের খ্রিষ্টীয় সন্তদের মতো ভক্তি করা হয়৷ ক্যাথলিক গির্জার সন্ত হতে গেলে শত শত বছর অপেক্ষা করতে হয়, একাধিক ‘মিরাকল' বা আশ্চর্য ঘটনা ঘটাতে হয়৷ ফুটবলে একটা দারুণ গোল করলে কিংবা একটা পেনাল্টি বাঁচালেই সন্ত হয়ে ওঠা যায়: খ্রিষ্টীয় সন্তদের ‘রেলিক্স' বা স্মৃতিচিহ্নের মতোই সেই প্লেয়ারের পুরনো, ঘেমো জার্সি এবং অটোগ্রাফ পবিত্র, মহার্ঘ বস্তু হয়ে ওঠে৷
প্লেয়ারদের যে সব ডাকনাম দেওয়া হয়, তাতেও ধর্মীয় সংশ্লেষ থাকে: ওলন্দাজ খেলোয়াড় ইওহান ক্রয়েফ-কে তাঁর ফ্যানরা ডাকতেন ‘‘ত্রাণকর্তা'' বলে৷ সেইভাবেই লিওনেল মেসির নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘‘মেসাইয়া'' – অর্থাৎ প্রভুর বার্তা বহনকারী যিশু৷ আর মারাদোনা তো ১৯৮৬ সালের বিশ্বকাপে হাত দিয়ে গোল করার পর সেটিকে ‘‘ঈশ্বরের হাত'' বলে অভিহিত করেছিলেন৷ নেপলস-এর একটি বারে মারাদোনার উদ্দেশ্যে যে প্রার্থনাবেদী সৃষ্টি করা হয়েছে, তার পাশের দেওয়ালে মারাদোনার কিছু চুলও লাগানো আছে৷ আমস্টারডামের এগজিবিশনে সেই বেদীটির একটি নকল রাখা হয়েছে বটে, কিন্তু মারাদোনার কেশ পাওয়া যায়নি!
এসি/ডিজি (ডিপিএ)