1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘আমলাদের দিয়ে রাজাকারদের তালিকা যথাযথ হবে না’

১৩ ডিসেম্বর ২০১৯

স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর রাজাকারদের একটি পূর্নাঙ্গ তালিকা প্রকাশ হতে যাচ্ছে৷ এতদিন কেন এই তালিকা হয়নি? রাজাকারের সংখ্যাটাও আসলে কত? ডয়চে ভেলেকে সে বিষয়ে খোলামেলা বলেছেন, ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির৷

https://p.dw.com/p/3UjqB
Bangladesch Dhaka Gericht Kriegsverbrechen Delwar Hossain Sayeedi Protest gegen Urteil
ছবি: picture-alliance/dpa/Monirul Alam

ডয়চে ভেলে : স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও কেন রাজাকারদের পূর্নাঙ্গ তালিকা করা যায়নি?

শাহরিয়ার কবির : দুর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু এবং তার প্রধান সহযোগী যারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাদের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পর বেশিরভাগ সময় ক্ষমতায় ছিল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতাবিরোধীদের সমর্থকরা৷ যার ফলে রাজাকার বা পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর বিবরণ মুছে ফেলতে চেয়েছে৷ এ কারণে তারা কখনই উদ্যোগী হয়নি৷ আমরাই ১৯৮৫ সালে প্রথম একাত্তরের ঘাতক দালালরা কে কোথায় একটা বই বের করি৷ সেটাই এখন বিভিন্ন জায়গায় রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার হয়৷ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা তৈরীর চেয়েও সহজ হচ্ছে রাজাকারদের তালিকা তৈরী৷ অল্পকিছু সংখ্যক লোক স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছে৷ জেনারেল নিয়াজির বইয়ে আছে তারা ৫০ হাজার লোককে রিক্রুট করেছিল, এক লাখ তাদের টার্গেট ছিল৷ তখনকার আনসার বাহিনী পুরোটাই রাজাকার বাহিনীতে রূপান্তর হয়েছিল৷ মোটামুটি ৫০ হাজারের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকার কথা৷

এখন যে তালিকাটি প্রকাশ হতে যাচ্ছে, তাতে কি পূর্নাঙ্গ চিত্র উঠে আসবে?

রাজাকারদের তালিকা করতে অসুবিধা নেই৷ কিন্তু যেসব দলীয় বাহিনী ছিল আল-বদর, আল-শামস, মুজাহিদ বাহিনী, শান্তি কমিটি এগুলোর তালিকা করা একটু দুরুহ হবে৷ কারণ জামায়াতে ইসলামী তো স্বীকার করতে চায় না, আল-বদর তাদের ঘাতক বাহিনী ছিল৷ এদের রেকর্ড জামায়াত রাখেনি৷ আমলাদের দিয়ে রাজাকার বা মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা করলে সেটা যথাযথ হবে না৷ কারণ বেশিরভাগ আমলার জন্মই হয়নি তখন৷ এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা এবং মুক্তিযুদ্ধ গবেষকদের সহযোগিতা নেওয়া দরকার৷  

‘৫০ হাজারের একটি তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে থাকার কথা’

মানবতাবিরোধী কয়েকজনের বিচার হয়েছে, কয়েকজনের বিচার চলছে৷ বিচার প্রক্রিয়ার গতি কি কমে গেছে?

বিচারের গতি তো কমেছেই৷ প্রধান বিচারপতি সিনহার সময় দু'টো ট্রাইব্যুনালকে একটা করা হয়৷ একটা বন্ধ করে দিলেন৷ সুপ্রিমকোর্টে শুনানি বিলম্বিত করে দিলেন৷ আমরা সরকারকে বারবার বলছি, দ্বিতীয় ট্রাইব্যুনালটা পুনরায় চালু করার জন্য৷ সামনে বড় রকমের চ্যালেঞ্জিং বিচার রয়েছে৷ আপনারা জানেন জার্মানিতে ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালে ব্যক্তির পাশাপাশি সংগঠনের বিচার হয়েছে৷ হিটলারের নাৎসি পার্টির হাইকমান্ডের বিচার হয়েছে৷ এখন আমরা জামায়াতে ইসলামীর বা আল-বদর বাহিনীর বিচারের জন্য অপেক্ষা করছি৷ একটা ট্রাইব্যুনাল দিয়ে এটা সম্ভব নয়৷  

মানবতাবিরোধীদের বিচারে সরকারের গা ছাড়া ভাব লক্ষ্য করেন কি-না?

লোকবলের অভাবের কথা তো আমরা শুরু থেকেই বলছি৷ কয়েকদিন আগে তুরিন আফরোজকে বাদ দেয়া হয়েছে৷ এভাবে করা ঠিক হয়নি৷ এখানে দক্ষ জনশক্তির অভাব আছে৷ এটা পূরণ করতে হবে৷ এটা সরকার কেন করছে না সেটা আইনমন্ত্রী ভালো বলতে পারবেন৷

সারাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচার কতদূর?

আমরা বলেছি, একজন যুদ্ধাপরাধীও যদি বেঁচে থাকে এবং কেউ যদি অভিযোগকারী থাকেন তাহলে তার বিচার হতে হবে৷ বঙ্গবন্ধুর সময় সাধারণ ক্ষমার পর ১১ হাজার ব্যক্তি জেলে ছিলেন৷ ৭৩টি ট্রাইব্যুনাল করা হয়েছে৷ এখন তো সেটা সম্ভব নয়৷ এখন অভিযোগকারী বা অভিযুক্ত এদের অনেকেই মারা গেছে৷ এখন ৭০০ জনের মতো একটা তালিকা আছে তদন্ত সংস্থার কাছে৷ তারা কাজ করছে৷

অনেকেই সরকারি দলে যোগ দিয়ে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আছে?

মানবতাবিরোধী কেউ সরকারি দলে গেছে এমন কোন তথ্য নেই৷ তবে জামায়াত বা বিএনপি থেকে অনেকেই সরকারি দলে যোগ দিয়েছেন নিজেদের বাঁচাতে বা সুবিধা পেতে সেগুলো আমরা জানি৷ আমরা যেটা জানি জামায়াতের অনেকেই আওয়ামী লীগে ঢুকে রেডিক্যালাইজ করার চেষ্টা করছে৷

এখনো তো দেশে জামায়াত সক্রিয়? এই দলটাকে সরকার নিষিদ্ধ করে না কেন?

সরকার চাচ্ছে বিচারের মাধ্যমে তাদের নিষিদ্ধ করতে৷ জামায়াত নিষিদ্ধকরণের বাইরেও একটা প্রচণ্ড চাপ আছে৷ আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট তো মনে করে, জামায়াত মডারেট মুসলিম পার্টি৷ তাদের নিষিদ্ধ করলে আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যাবে এবং তখন তাদের নিয়ন্ত্রণ করা আরো কঠিন হবে৷ পশ্চিম ইউরোপও এমনটাই মনে করে৷ আমরা বলছি, শুধু ৭১ এর গণহত্যার জন্য নয়, এখন যে সন্ত্রাস হচ্ছে সেটার জন্যও জামায়াতকে নিষিদ্ধ করা দরকার৷

আওয়ামী লীগ এত লম্বা সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরও যেটা হয়নি, ভবিষ্যতে কি সেটা সম্ভব?

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে মানবাতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারে যে ট্রাইব্যুনাল হয়েছে সেটা সরকারের সিদ্ধান্তে৷ কিন্তু বাংলাদেশে নাগরিক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে সরকার বিচার করতে বাধ্য হয়েছে৷ আমরা আশাবাদি, বাংলাদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ হবে এবং সব যুদ্ধপরাধীদের বিচার হবে৷ সরকারকে বুঝতে হবে জঙ্গি দমন করতে হলে তাদের দর্শন বন্ধ করতে হবে৷

ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি সমীর কুমার দে৷
সমীর কুমার দে ডয়চে ভেলের ঢাকা প্রতিনিধি৷
স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য