‘আফগানিস্তানের মানুষ সন্ত্রাসী নয়'
২৯ জুলাই ২০১৬২০ বছর বয়সি আমির নাজিয়ারজাদেহ মিউনিখের অলিম্পিয়া শপিং সেন্টারে নিরাপত্তারক্ষীর চাকরি করেন, যেখানে চলতি মাসে এক যুবক, সম্ভবত একজন উগ্র ডানপন্থি, সাধারণ মানুষের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে৷ গুলির শব্দ শুনেই তৎপর হয়ে ওঠেন নাজিয়ারজাদেহ, উদভ্রান্ত হয়ে ছুটোছুটি করতে থাকা প্রায় ২০০ মানুষকে বেসমেন্টের নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসেন৷
নাজিয়ারজাদেহ কিন্তু নিজেই একজন শরণার্থী, যিনি আফগানিস্তান থেকে পালিয়ে জার্মানি চলে এসেছিলেন প্রায় সাড়ে তিন বছর আগে৷ তাই মিউনিখ-কাণ্ডে তাঁর ভূমিকা একটি চমৎকার বার্তা বয়ে এসেছে এমন এক সময়ে, যখন একের পর এক হামলার ফলে শরণার্থী এবং অন্যদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্কের পরিবেশ বিরাজ করছে৷
ডয়েচে ভেলের সঙ্গে এক একান্ত সাক্ষাৎকারে নাজিয়ারজাদেহ জানান, এ ঘটনায় সন্ত্রাসীরা তার দেশের নামে যে ‘কলঙ্ক' ছড়াচ্ছে, তার একটা ভিন্ন চিত্র তুলে ধরতে পেরে তিনি আনন্দিত৷
ডিডাব্লিউ: আপনার নাম জার্মান মিডিয়ায় শিরোনাম হচ্ছে কিছুদিন ধরেই৷ কী করে ব্যাপারটা ঘটলো?
নাজিয়ারজাদেহ: আমি যা করেছি তা এমন কোনো মহান কাজ নয়৷ আমি মানবিকতার খাতিরেই কাজটা করেছি৷ জার্মান হোক আর শরণার্থী, সব মানুষই সমান৷ যদি পারতাম, তবে সেই আক্রমণকারীর মুখোমুখি হতাম আর তার অস্ত্র কেড়ে নিতাম৷ কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল না৷ আমার পক্ষে যা সম্ভব ছিল, তা ছিল ঐ মানুষগুলোকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে আসা৷ পুলিশ আমাদের জানায় যে, আক্রমণকারী সম্ভবত ভবনের ভেতরেই আছে৷ তাই আমি সবাইকে বেসমেন্টে নিয়ে আসি৷ আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে কয়েকজন শিশু ও একজন গর্ভবতী নারীও ছিলেন৷ তাঁদের নীচে পৌঁছে দিয়ে আমি আবারো শপিং এরিয়ায় ফরে আসি, এটা দেখতে যে জায়গাটা তখন নিরাপদ কিনা৷
আমার কোনো নির্দিষ্ট উদ্দেশ্য ছিল না৷ আসলে আমি নিজেও ভয় পেয়েছিলাম৷ সব সময় ইসলামিক স্টেট (আইএস) এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীদের এমন বীভৎস সব কর্মকাণ্ডের কথা শুনে থাকি আমরা৷ তাই সে সমস্তই আমার মাথার মধ্যে ঘুরছিল৷ আমি নিজের জন্য নয়, বরং এই মানুষগুলোর জন্য ভয় পাচ্ছিলাম৷ পুরোটা সময় আমার মনে হচ্ছিল, সেই আততায়ী এ ভবনে চলে আসবে আর এই নিরপরাধ মানুষগুলোর ওপর আক্রমণ করবে৷ আমার নিজের জীবন সেই মুহূর্তে গুরুত্বপূর্ণ ছিল না৷ আমি একজন নিরাপত্তারক্ষী৷ তাই অন্যদের নিরাপত্তা দেয়া আমার দায়িত্ব৷
সাম্প্রতিককালে এ রকম সন্ত্রাসী হামলা যারা ঘটিয়েছে, তারা সাধারণত সিরিয়া, আফগানিস্তান, পাকিস্তান বা ইরানের মতো দেশ থেকে ইউরোপে এসেছিল, শরণার্থী হয়ে৷ এ ব্যাপারটাও কি আপনার মাথায় ঘুরছিল?
আমি ভ্যুর্ৎসবুর্গে কুড়াল আক্রমণের কথা শুনেছি৷ প্রথমে বলা হয়েছিল আক্রমণকারী আফগান৷ পরে জানা গেল সে আসলে পাকিস্তান থেকে এসেছিল৷ পুরো ঘটনার সময় আমার মনে হচ্ছিল, আক্রমণকারী যেন আফগান বা মুসলিম না হয়৷ এরা ইসলামের এবং তাদের নিজেদের দেশের নাম কলঙ্কিত করেছে, যা আমাদের জন্য লজ্জার৷
আপনি কি নিজেকে ‘হিরো' মনে করেন?
সব আফগানদের নাম এই একটা ভালো কাজ করতে পেরে আমি খুশি৷ আমি চাই এখানকার মানুষ জানুক যে, আমরা সন্ত্রাসী নই৷ মানে আফগানিস্তানের মানুষ সন্ত্রাসী নয়৷ বিশ্বজুড়ে যারা আতঙ্ক ছড়ায়, তারা আমরা নই৷ জার্মানি জানুক যে, আমরা এমন কিছু করতে পারি না৷ আমাদের কিছু দেয়া হলে আমরা তার প্রতিদান দেই৷ আশা করি, সেই বার্তাটি আমি পৌঁছাতে পেরেছি৷
সাক্ষাৎকার: আমানুল্লাহ জাওয়াদ, অনুবাদ: ফাহমিম ফেরদৌস
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ