আদালতে আসামির মাথায় আইএস টুপি
২৭ নভেম্বর ২০১৯রিগান এ টুপি কোথায় পেলেন তা দায়িত্বশীল কোনো কর্তৃপক্ষ সুনির্দিষ্টভাবে বলেননি৷ রায়ের পর আদালত থেকে বের করে নেয়ার সময় রিগান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘টুপি আমি কারাগার থেকে নিয়ে এসেছি৷’’
ঘটনা তদন্তে কারা অধিদপ্তর তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে৷ আইজি (প্রিজন) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা ডয়চে ভেলেকে জানান, সারা দেশের কারাগারে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে৷
আদালতে উপস্থিত সাংবাকিদের কয়েকজন জানান, রায়ের পর প্রিজন ভ্যানে তোলা হলে ভ্যানে বসে আরো একজনকে আইএস-এর টুপি পরতে দেখা যায়৷
প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিক আমানু রহমান বলেছেন, ‘‘আসামিদের সকাল ১০টার পরপরই কোর্ট হাজতে আনা হয়৷ তাদের সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালে তোলা হয় পৌনে ১২ টার দিকে৷ রায় পড়া শুরু হয় ১২টার দিকে৷ যখন আদালতে আনা হয়, তখন রিগানের মাথায় আমরা একটা কালো টুপি দেখেছি৷ কিন্তু রায় ঘোষণার পর তার মাথায় আমরা আইএস-এর টুপি দেখি৷ রায় ঘোষণার পরও সে আদালত থেকে ওই টুপি পরেই বের হয়৷’’
আরেক সাংবাদিক তোফায়েল আহমেদও জানান, ‘‘রায় ঘোষণার পরপরই আমরা তার মাথায় আইএস-এর টুপি দেখতে পাই৷ তার আগে মাথায় একটি কালো টুপি দেখেছি৷’’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আব্দুল্লাহ আবু বলেন, ‘‘এই ঘটনায় আমি বিস্মিত হয়েছি৷ এটা কীভাবে সম্ভব হলো? আমি আদালতে সামনের দিকে থাকায় রায়ের সময় আসামির মাথায় ওই টুপি লক্ষ্য করিনি৷ তবে বের হওয়ার সময় আমি দেখেছি৷’’
তিনি বলেন, ‘‘এটা একটা বড় ধরনের গাফিলতি৷ এটা নিরাপত্তারও ত্রুটি৷ এর দায় কারা কর্তৃপক্ষ এবং দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশের৷ আমি বিষয়টি তন্তের জন্য বলেছি৷’’
কারা অধিদপ্তরের এআইজি (প্রশাসন) আব্দুল্লাহ আল মামুন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কারাগার পর্যন্ত আমাদের দায়িত্ব৷ কারাগার থেকে বের হওয়ার পর দায়িত্ব পুলিশের৷ সেখানে কী ঘটেছে সেটা আমাদের জানার কথা নয়৷ আর সে যেহেতু আদালতের রায়ের আগে দন্ডপ্রাপ্ত ছিল না তাই সে কারাবিধি অনুযায়ী যে-কেনো পোশাক পরতে পারে৷’’
আর আইজি (প্রিজন) জানান, ‘‘অ্যাডিশনাল আইজি (প্রিজন)-এর নেতৃত্বে যে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছি তারা পাঁচ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবেন৷ কারাগারের কারুর কোনো গাফিলতি প্রমাণ হলে যারা দায়ী, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে৷ এর সঙ্গে আরো অনেক চ্যানেল আছে৷’’
রিগান বলেছে যে, সে কারাগার থেকে টুপি নিয়ে এসেছে৷ এই প্রসঙ্গে আইজি (প্রিজন) বলেন, ‘‘জঙ্গিদের কথা বিশ্বাস করবেন না৷ তারা মানুষ হত্যা করে৷ তদন্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করুন৷’’
এদিকে আদালত এলাকায় আসামিদের দায়িত্বে থাকে প্রসিকিউশন পুলিশ৷ প্রসিকিউশন পুলিশের ডেপুটি কমিশনার জাফর হোসেন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা এখনো নিশ্চিত হতে পারিনি সে আইএস-এর টুপি পরে কীভাবে আদালতে গেল৷ এবং টুপিটি কীভাবে আদালতে নিয়ে গেল৷ আমরা সবাই মিলে দেখছি৷ আলাদাভাবে কিছু দেখার নেই৷’’ তিনি আরো বলেন, ‘‘এখন পর্যন্ত আমাদের কাছে যে তথ্য আছে, তাতে একজনই আইএস-এর টুপি পরেছে৷’’
আইনমন্ত্রী আনিসুল হকও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঘটনা তদন্তের কথা বলেছেন৷
প্রসঙ্গত, মামলার তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইএস-এর টুপি পরে আদালতে যাওয়া রিগান হোলি আর্টিজান হামলায় সরাসরি অংশ নেয়াদের প্রশিক্ষক হিসেবে কাজ করে৷ ২০১৫ সালে বগুড়া সরকারি শাহ সুলতান কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ে৷ তার বাড়ি বগুড়ার জামিলনগর এলাকায়, বাবা মৃত রেজাউল করিম৷
২০১৬ সালের ২৬ জুলাই কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের সময় পালাতে গেলে রিগানকে গ্রেপ্তার করা হয়৷
যা ঘটেছিল: