আদর্শের পক্ষে দাঁড়ালেন যে ক’জন
১ মার্চ ২০২১তরুণ মজুমদার৷ বাংলা সিনেমার বিখ্যাত চিত্র পরিচালক৷ সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, তপন সিংহ–দের পরের প্রজন্মের পরিচালকদের অন্যতম৷ অসুস্থ শরীরেও তিনি এসেছিলেন রোববার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডের সমাবেশে৷ পরিচালক কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়৷ এবার তিনি ব্রিগেড সমাবেশের প্রচারের জন্য স্লোগান লিখে দিয়েছেন৷ ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’খ্যাত পরিচালক অনীক দত্ত, যার পরের ছবি ‘ভবিষ্যতের ভূত’ দেখাতে বাগড়া দিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস সরকার, কারণ তাতে রাজনৈতিক কটাক্ষ ছিল৷ সেই অনীক দত্ত এবার ব্রিগেড সমাবেশের পক্ষে প্রচারে, সোশাল মিডিয়ায় শুরু থেকেই সরব ছিলেন৷ বাংলা সিনেমা, টিভি সিরিয়ালের পরিচিত মুখ সব্যসাচী চক্রবর্তী, শ্রীলেখা মিত্র, এরাও থেকেছেন প্রচারে, ব্রিগেডের সভায় গিয়েও রাজনৈতিক নেতা–কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়েছেন৷
আরেক জনপ্রিয় অভিনেতা বাদশা মৈত্র রীতিমত ঘোষকের দায়িত্ব পালন করেছেন রবিবার৷
গ্ল্যামারের ছটায়, কিংবা খ্যাতিতে এরা অবশ্যই তাদের ধারেকাছে যেতে পারেন না, যারা এর আগে, অথবা সম্প্রতি তৃণমূল কংগ্রেসে যোগ দিয়েছেন৷ বিজেপিতে যে অভিনেতারা সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন, তাদের কারও কারও সঙ্গেও হয়ত এরা জনপ্রিয়তার দৌড়ে সামান্য পিছিয়েই থাকবেন৷ কিন্তু যেটা মানুষকে সত্যিই অবাক করেছে, তা হল এই বামপন্থী পরিচালক, অভিনেতাদের স্রোতের বিরুদ্ধে হাঁটার সংকল্প এবং সাহস৷ দলবদলই যেখানে বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করছেন তাদের সতীর্থ, সহকর্মীরা, সেখানে এরা নিজেদের বিশ্বাসে স্থিত থাকতে চেয়েছেন৷ গোপনে সমর্থন জোগানো নয়, প্রকাশ্যে এসে দাঁড়িয়েছেন সেই রাজনৈতিক শক্তির পাশে, যাদের জনসমর্থন ক্রমশ গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে৷ কারণ ওরা মনে করছেন, আবার দিনবদল শুরু হবে একদিন৷
কেমন লাগল এবারের ব্রিগেডের সভা? মনে হলো কি বামপন্থার গুরুত্ব কমছে বাংলায়? প্রশ্নটা শুনে হাসলেন শ্রীলেখা মিত্র৷ বললেন, ‘‘এই জনসমাবেশ তো প্রমাণ করে দিল, ব্যাপারটা মিথ্যে কথা, বা ভুল কথা৷ এত মানুষ, এত অসংখ্য মানুষের ভিড়!তরুণ প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়েরা এসেছে৷ যাদের হয়ত অন্য দলের মতো স্টেজের ওপর হুল্লোড়, হুড়োহুড়ি করতে দেখা যায় না৷ কিন্তু তারা তৃণমূল স্তরে কাজ করছে৷ গান, পথনাটিকা নিয়ে ভীষণভাবে তারা দলে রয়েছে৷’’
কিন্তু সিনেমা–সিরিয়ালের জগতে জনপ্রিয় মুখগুলো যে এখন শক্তিধর শিবিরেই ভিড় জমায়, দেশের অবস্থা নিয়ে তাদের কোনও প্রশ্ন নেই, কোনও তর্ক নেই, এটা কেমন লাগে? অভিনেতা বাদশা মৈত্র কিন্তু আদৌ অবাক হচ্ছেন না এই প্রবণতায়৷ তার বক্তব্য, ‘‘তার জন্য তো একটা (রাজনৈতিক) পন্থা সম্বন্ধে জানার একটা ন্যূনতম আগ্রহ, একটা চর্চা থাকবে৷ কিন্তু বাম দলগুলো বাদ দিলে, বিভিন্ন দলে যারা যাচ্ছে, তারা কোনও পন্থার জন্যে যাচ্ছে না৷ মঞ্চে কোনও একজন নেতা বা নেত্রী, তিনি মুখ্যমন্ত্রী হতে পারেন, প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন— তার মুখের দিকে তাকিয়ে যাচ্ছে৷ দলের নাম তারা কেউ বলেনই না!’’
তা হলে কি বিষয়টা এরকমই, যে ভোটের টিকিট পাওয়ার লোভে, বা পদাধিকারের লোভে এরা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিচ্ছেন? বাদশা মৈত্র এই প্রশ্নের সরাসরি কোনও উত্তর না দিয়ে বললেন, মানুষ দেখছেন, মানুষ বুঝতে পারছেন সব কিছু৷ তবে ‘‘শুধু কোনও নেতা–নেত্রীকে দেখে (রাজনীতিতে) যাওয়া অপরাধ, অন্যায় বলা যেতে পারে৷ কারণ তাকে যদি কোনও দায়িত্ব দেওয়া হয়, আর তিনি যদি নিজের দেশ, সমাজ, কাল, মানুষ সম্বন্ধে তার যদি কোনও জ্ঞান না থাকে, তা হলে মানুষের প্রতি অন্যায় করা হয়৷’’