1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আডল্ফ হিটলারের ক্ষমতা দখল কি ঠেকানো যেতো?

৩১ জানুয়ারি ২০২৩

১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি আডল্ফ হিটলারের চ্যান্সেলর হিসেবে উত্থান বিশ্ব ইতিহাস বদলে দিয়েছিল৷ বার্লিনে নতুন এক প্রদর্শনী জানাচ্ছে কীভাবে এই পরিস্থিতি ভিন্ন হতে পারতো৷

https://p.dw.com/p/4Mv8D
চ্যান্সেলর হওয়ার পর এক ব়্যালিতে হিটলারছবি: akg-images/picture-alliance

১৯৩০ সালের শুরুর দিকে মনে হচ্ছিল আডল্ফ হিটলার এবং তার নাৎসি দল সম্ভবত জার্মানির ক্ষমতা নিতে পারবে না৷

১৯৩২ সালের শরৎকাল নাগাদ নাৎসি দল সমর্থন হারাতে শুরু করে৷ তখন ইউরোপের দেশটি অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে শুরু করেছিল৷ সে বছরের নভেম্বরের কেন্দ্রীয় নির্বাচনে, যেটিকে নাৎসিরা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে সর্বশেষ অবাধ এবং মুক্ত নির্বাচন বিবেচনা করা হয়, হিটলারের ন্যাশনাল সোশ্যালিস্ট জার্মান ওয়ার্কার্স পার্টি অধিকাংশ ভোট পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনে ব্যর্থ হয়৷ অর্থাৎ রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে হিটলারের জোট গড়ার প্রয়োজন হয়৷ 

সেসময় খুব অল্প মানুষই ধারনা করেছিলেন যে হিটলার ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারি জার্মানির চ্যান্সেলর হবেন, মনে করেন জেরুসালেমের হিব্রু বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক এবং লেখক ডান ডিনেইর৷

হিটলারের একনায়কতন্ত্রের পরিনতি কী হয়েছে তাতো সবাই ভালোই জানেন৷ ১৯৪৫ সালে তার মৃত্যু অবধি সময়ের মধ্যে হিটলারের যুদ্ধে গোটা বিশ্বের ছয়কোটির বেশি মানুষ প্রাণ হারান৷ হলোকস্টে ৬০ লাখ ইহুদিকে হত্যা করা হয়েছিল৷ তাদের সঙ্গে আরো অনেক সিন্টি, রোমা, বিশেষভাবে সক্ষম এবং সমকামীদের হত্যা করা হয়৷

হিটলারের কি চ্যান্সেলর হওয়ার দরকার ছিল?

১৯৩২ সালের শরতে নাৎসিদের জনপ্রিয়তা কমছিল আর দেশের অর্থনীতির অবস্থা ভালো হচ্ছিল, জানান ডিনেইর৷

‘‘আর মূলত সেসময়ে হিটলারকে রাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়৷ এটা আসলে হওয়া উচিত ছিল না,'' বলেন তিনি৷

জার্মান ভাষায় ৩০ জানুয়ারিকে ‘ক্ষমতা দখলের দিন' হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়৷ কিন্তু হিটলার আসলে ক্ষমতা দখল করেননি৷ তৎকালীন রাইস প্রেসিডেন্ট পল ফন হিন্ডেনবুর্গ নাৎসি এই নেতাকে রাইস চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন৷

বর্ষীয়ান সেই রাজনীতিবিদ একটা লম্বা সময় হিটলারকে প্রতিহত করার চেষ্টা করেন৷ এমনকি ১৯৩২ সালের নির্বাচনে হিটলারের জয়ের পরও তাকে চ্যান্সেলরশীপ দিতে চাননি৷

হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগের পেছনে অনেক নেপথ্যের রাজনীতি এবং চক্রান্ত ভূমিকা রেখেছিল৷ অনেক মানুষ সেসময় অশুভ ভূমিকা পালন করেছিলেন৷ তাদের মধ্যে একজন জার্মান জাতীয়তাবাদী-রক্ষণশীল রাজনীতিবিদ ফ্রানৎস ফন পাপেন৷ তিনি ১৯৩২ সালের নভেম্বরে রাইস চ্যান্সেলর পদ থেকে পদত্যাগ করেন এবং পুনরায় ক্ষমতায় ফেরার চেষ্টা করেন৷

পাপেন তখন হিটলারকে চ্যান্সেলর হিসেবে নিয়োগ দিতে হিন্ডেনবুর্গের উপর চাপ দেন যাতে তিনি ভাইস চ্যান্সেলর হতে পারেন৷ জাতীয়তাবাদী-রক্ষণশীল নেতারা বিশ্বাস করেছিলেন যে হিটলারকে নিয়ন্ত্রণ করা এবং একটি ‘টুল' হিসেবে ব্যবহার করা যাবে৷ কিন্তু সেই পরিকল্পনা ভেস্তে যায়৷ 

জার্মানির অভিজাততন্ত্র থেকে গণতন্ত্রে পৌঁছানোর বিশৃঙ্খল ধাপের অনিবার্য ফলাফল ছিল না হিটলার, দাবি করেন ব্রিটিশ ইতিহাসবিদ ইয়েন কারশ্৷

অর্থনৈতিক মহামন্দার সময় জার্মানির জাতীয়তাবাদী-রক্ষণশীল রাজনীতিবিদরা নিজেদের অজান্তেই হিটলারের উত্থানের স্থপতি হয়ে উঠেছিলেন৷ তারা নিজেদের আর্থিক স্বার্থরক্ষা করতে গিয়ে গণতন্ত্র, এবং সমাজতন্ত্রের হুমকিকে উপেক্ষা করেছিলেন৷

কিন্তু জার্মান প্রতিক্রিয়াশীলরা যখন আনন্দের সাথেই হিটলারের কর্তৃত্ববাদী শাসনকে সমর্থন করে যাচ্ছিলেন তখনও তারা তার উদ্দেশ্যকে এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে পরাজয়ের জাতীয় অপমানকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্য অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের ক্ষমতাকে অবমূল্যায়ন করেছিলেন, মনে করেন কারশ্৷

জার্মান ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তগুলো আলাদা হতে পারতো

‘‘রোডস নট টেকেন৷ অর: ইট কুড হেভ টার্নড আউট ডিফারেন্টলি,'' শিরোনামে জার্মানির রাজধানী বার্লিনের জার্মান হিস্ট্রি মিউজিয়ামে একটি প্রদর্শনী চলছে যেখানে ১৯৩৩ সালের ৩০ জানুয়ারিসহ আরো কয়েকটি তারিখের পুর্নমূল্যায়ন করা হয়েছে৷ এসব দিনে কার্যত জার্মানি এবং গোটা বিশ্বের ইতিহাস বদলে দিয়েছিল৷

ডান ডিনেইরের ধারনা থেকে তৈরি এই প্রদর্শনীতে ১৯৮৯ থেকে ১৮৪৮ সালের দিকে ফিরে যাওয়া হয়েছে এবং এই সময়ের মধ্যকার ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে যা একটু অন্যরকম হলে পুরো ইতিহাসই অন্যরকম হতে পারতো৷

প্রতিবেদন: ইউলিয়া হিৎস, স্টুয়ার্ট ব্রাউন/এআই