1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অ্যামেরিকায় মৃত ৩৫ হাজার

১৭ এপ্রিল ২০২০

মৃত্যুমিছিল অব্যাহত অ্যামেরিকায়। ধসে পড়ছে অর্থনীতিও। গড়ে প্রতি সাত জন শ্রমিকের এক জন কাজ হারাচ্ছেন।

https://p.dw.com/p/3b2tH
ছবি: picture-alliance/dpa/AP/A. Brandon

এক দিকে প্রতিদিন বাড়ছে মৃত্যুর সংখ্যা, অন্য দিকে কাজ হারাচ্ছেন মানুষ। সব দিক দিয়েই বিপর্যস্ত অ্যামেরিকা। বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের বিবৃতিতেও সে কথাই ধরা পড়েছে। ট্রাম্প জানিয়েছেন, হাজার হাজার মানুষের মৃত্যু সত্ত্বেও অর্থনীতির স্বার্থে জীবনযাপন স্বাভাবিক করা প্রয়োজন। নইলে অর্থনীতিকে বাঁচানো যাবে না। তিন ধাপে এ কাজ করার কথা বলেছেন তিনি। অন্য দিকে, অর্থনৈতিক সংকটে চীনও। দেশের সরকারি সংবাদপত্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথম তিন মাসে চীনের অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। ১৯৭০ সালের পরে এমন ঘটনা ঘটেনি।

অ্যামেরিকায় মৃত্যুমিছিল অব্যাহত। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত সেখানে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৩৫ হাজার লোকের। আক্রান্ত ছয় লাখ ৬৭ হাজার মানুষ। প্রতিদিনই মৃতের সংখ্যায় রেকর্ড হচ্ছে। নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির পরিস্থিতি সংকটজনক। তবে করোনার পাশাপাশি মার্কিন মুলুকের নতুন সংকট চাকরি হারানো। এক সপ্তাহ আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসের রিপোর্ট ছিল, প্রায় ৭০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা কাজ হারাতে বসেছেন। কোনও কোনও গণমাধ্যম দাবি করছিল, সংখ্যাটি প্রায় এক কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে। বৃহস্পতিবারের পরিসংখ্যান বলছে সংখ্যাটি দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে প্রায় দুই কোটি ২০ লাখ মানুষ কাজ হারিয়েছেন বা কাজ হারানোর পরিস্থিতিতে রয়েছেন। লকডাউন চললে আগামী কয়েক দিনে সংখ্যাটি আরও বাড়বে বলেই আশঙ্কা। হিসেব বলছে, এই মুহূর্তে প্রতি সাত জন মার্কিন শ্রমিকের এক জন কাজ হারাচ্ছেন।

বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, অ্যামেরিকার ইতিহাসে এ এক অভূতপূর্ব ঘটনা। ১৯৩২-৩৩ সালের মহা মন্দার সময়েও এত মানুষ কাজ হারাননি। মার্কিন প্রশাসনও বুঝতে পারছে, এ ভাবে চলতে থাকলে অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতি আরও সংকটজনক জায়গায় পৌঁছে যাবে। সে কথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, যে ভাবেই হোক, জীবনযাত্রা স্বাভাবিকের পথে নিয়ে যেতে হবে। এবং তার জন্য তিনটি ধাপের কথা বলেছেন তিনি। যে সমস্ত জায়গায় করোনার প্রকোপ কমেছে, বা আগে থেকেই কম ছিল সেখানে পরীক্ষামূলক ভাবে কিছু দোকান, স্কুল ইত্যাদি খোলা হবে। ১৪ দিন খোলা রেখে দেখা হবে তার ফলে সংক্রমণ বাড়ছে কি না। যদি না হয় তা হলে দ্বিতীয় ধাপে আরও কিছু প্রতিষ্ঠান খোলা হবে এবং পরিস্থিতির দিকে নজর রাখা হবে। তাতেও সফল হলে জীবনযাত্রা পুরোপুরি স্বাভাবিক করা হবে। তবে একই সঙ্গে ট্রাম্প জানিয়েছেন, কোন এলাকা খোলা হবে তা নির্ভর করবে সেই অঞ্চলের গভর্নরের মতামতের উপর।

বস্তুত, দেশের বিভিন্ন রাজ্যের গভর্নরের সঙ্গে বেশ কয়েক দিন ধরে বিতর্ক চলছিল ট্রাম্পের। নিউ ইয়র্কের মতো বহু রাজ্যের ডেমোক্র্যাট গভর্নররা জানিয়েছিলেন, করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত তাঁরা নিজেদের রাজ্যে স্বাভাবিক জীবনযাপনের অনুমতি দেবেন না। প্রেসিডেন্ট বললেও না। যার জেরে ট্রাম্প ডেমোক্র্যাট গভর্নরদের 'মিউটিনিয়ার' বা বিদ্রোহী বলেছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত সেই বিতর্কে অবসান ঘটালেন ট্রাম্প নিজেই। কার্যত মেনে নিলেন গভর্নরদের বক্তব্য।

এ দিকে চীনের পরিস্থিতিও সংকটজনক। এই মুহূর্তে চীনে করোনা পরিস্থিতি আয়ত্তের মধ্যে। করোনা ভাইরাসের উৎপত্তিস্থল উহান প্রদেশও দীর্ঘ লকডাউনের পরে খুলে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে ব্যবসা বাণিজ্যও শুরু করেছে চীন। বস্তুত, চীন যে ভাবে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের সরঞ্জাম বিক্রি করছে, তা নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।  স্বয়ং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জানিয়েছেন, চীনের বিরুদ্ধে তদন্ত করছে অ্যামেরিকা। কিন্তু বাস্তব বলছে, চীনের অর্থনীতিতেও ধস নেমেছে। করোনা সংক্রমণের প্রথম পর্বে বিশেষজ্ঞদের অনুমান ছিল, পরিস্থিতি এমন থাকলে চীনের জিডিপি বা অর্থনৈতিক বৃদ্ধির হার এক থেকে দুই শতাংশ কমবে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে প্রথম তিন মাসে তা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। ১৯৭০ সালের পরে এমন ঘটনা চীনের ইতিহাসে ঘটেনি। বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, আগামী তিন মাসেও চীনের অর্থনৈতিক উন্নতির বিশেষ সম্ভাবনা নেই। এরই মধ্যে, বৃহস্পতিবার টেলিফোনে কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুটিন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং।

শুধু চীন বা অ্যামেরিকা নয়, গোটা পৃথিবীই চরম অর্থনৈতিক সংকটের মুখোমুখি। তারই মধ্যে অস্ট্রেলিয়া ঘোষণা করেছে, ধীরে ধীরে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক করা হলেও আগামী এক বছর কিছু নিষেধাজ্ঞা জারি রাখা হবে। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হচ্ছে কি না, সে দিকে নজর রাখা হবে। কানাডাও জানিয়ে দিয়েছে আগামী বেশ কিছু দিনের মধ্যে অ্যামেরিকার সীমান্ত খোলা হবে না। তবে পণ্য চলাচল আগের মতোই হবে। ইউরোপের পরিস্থিতিও আগের চেয়ে ভালো। ইটালি, ফ্রান্স, স্পেনে আক্রান্তের সংখ্যা কমেছে। তবে সব দেশই ধীরে ধীরে নিষেধাজ্ঞা তোলার পক্ষপাতী। যুক্তরাজ্যও জানিয়েছে, আগামী এক বছর বহু ক্ষেত্রেই নিষেধাজ্ঞা জারি থাকবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী শুক্রবার সকাল পর্যন্ত গোটা বিশ্বে করোনায় মৃত্যু হয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার মানুষের। আক্রান্ত ২১ লাখ ৫২ হাজার।

এসজি/জিএইচ (রয়চার্স, এপি, এএফপি)