1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণমন্দির

অনিল চট্টোপাধ্যায়, নতুন দিল্লি৭ জুন ২০১৪

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে শিখ ধর্মাবলম্বীদের পবিত্রভূমি অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরে আজও প্রতিদিন হাজারো ভক্তের সমাবেশ হয়৷ অথচ এই মন্দির চত্বরই একদিন প্রত্যক্ষ করেছিল ‘খালিস্তান’ আন্দোলন এবং ‘অপারেশন ব্লু-স্টার’ নামক সেনা অভিযান৷

https://p.dw.com/p/1CDyJ
Goldener Tempel in Amritsar Indien
ছবি: DW/A. Chatterjee

দীর্ঘ ৩০ বছর আগে ‘খালিস্তান' নামে শিখ ধর্মাবলম্বীদের পৃথক ও স্বাধীন রাষ্ট্র গঠনের দাবি দমন করতে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে ‘অপারেশন ব্লু-স্টার' নামধারী সেনা অভিযান চালানো হয়েছিল৷ এর কারণ, শিখদের পবিত্র স্বর্ণমন্দির চত্বরে ঘাঁটি গেড়ে সরকার বিরোধী সহিংস তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছিলেন শিখ জঙ্গি নেতা জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালা৷

সেদিনের সেই ‘অপারেশন ব্লু-স্টার'-এর নেতৃত্ব দেন মেজর জেনারেল কুলদীপ সিং ব্রার৷ পুরো দিন এবং রাত গোলাগুলি বিনিময়ের পর সংঘর্ষ বন্ধ হয়৷ তবে এ ঘটনায় নিহত হয় চারশোর মতো মানুষ৷ গুলি-গোলাতে বিধ্বস্ত হয় স্বর্ণমন্দির৷ আর ভিন্দ্রানওয়ালার লাশ উদ্ধার করার হয় মন্দিরের গর্ভগৃহ থেকে৷

Jarnail Singh Bhindranwale Anführer Sikh Separatisten
জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালাছবি: Getty Images/AFP

‘খালিস্তান' আন্দোলন শুরু হয় ৭০-এর দশকে৷ গোড়ার দিকে এটা কিন্তু সহিংস ছিল না৷ লঙ্গোয়ালের নেতৃত্বে গঠিত ধর্মযুদ্ধ মোর্চা পাঞ্জাবের জন্য নদীর জলের ভাগাভাগি, চন্ডিগড় হস্তান্তর ইত্যাদি দাবি তোলে৷ পরের দিকে, অর্থাৎ ১৯৮৩ সালের শেষের দিকে জার্নেল সিং ভিন্দ্রানওয়ালা এই আন্দোলনের মুখ ঘুরিয়ে দেন সহিংসতার দিকে৷ অমৃতসরের স্বর্ণমন্দির চত্বর থেকে চলতে থাকে অবাধে জঙ্গি তৎপরতা, যেহেতু মন্দির চত্বরে সচরাচর পুলিশ ঢোকা বারণ ছিল৷ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বক্তব্য ছিল, ইতিহাস শিখদের প্রতি চরম অবিচার করেছে৷ ভারতভাগের পর হিন্দুরা পেল হিন্দুস্থান, মুসলমানরা পেল পাকিস্তান, কিন্তু শিখরা পেল না কোনো স্থানই৷

ইন্দিরা গান্ধীর ‘অপারেশন ব্লু-স্টার' স্বাধীন ভারতের ইতিহাসের এক রক্তাক্ত অধ্যায়৷ এতদিন পর কেউ কেউ বলছেন, খালিস্তান আন্দোলন দমনে সেনা অভিযান চালানো কি একান্তই অপরিহার্য ছিল? শিখ, অ-শিখ সম্প্রদায়ের বেশিরভাগই মনে করেন, হ্যাঁ, ছিল৷ বিচ্ছিন্নতাবাদী খালিস্তানি আন্দোলনের পরিসর যেভাবে বাড়ছিল, ছড়িয়ে পড়ছিল দেশ-বিদেশে – তাতে গোড়াতেই তা দমন করতে না পারলে পরে সামলানো কঠিন হতো৷

Goldener Tempel in Amritsar Indien
ছবি: DW/A. Chatterjee

প্রথম দিকে সরকার আলোচনার মাধ্যমে এ সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে, কিন্তু তা ব্যর্থ হয়৷ খালিস্তান সমর্থকদের শাখা তৈরি হতে থাকে প্রবাসী শিখদের নিয়ে ক্যানাডা, ব্রিটেন ও যুক্তরাষ্ট্রে৷ দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান ও কাশ্মীরের সীমান্ত বেষ্টিত পাঞ্জাবের ভূ-রাজনৈতিক গুরুত্বের প্রেক্ষিতে নতুন এক সার্বভৌম রাষ্ট্রের কথা চিন্তা করা যায় না, বলেন গুরু নানকদেব বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক বি.জি গিল৷

তাঁর কথায়, ‘‘আজ কিন্তু শিখ সম্প্রদায় সুন্দরভাবে মিশে গেছে হিন্দুদের সঙ্গে৷ কোনো বৈষম্য বা ভেদভাব নেই৷ বরং অন্যান্যদের তুলনায় শিখ সমাজের জীবনযাপনের মান অনেকক্ষেত্রেই ভালো৷ শিখ প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং ১০ বছর দেশ চালিয়ে সবে অবসর নিয়েছেন৷ সহিংস আন্দোলনে এক প্রজন্মের বহু সন্তানকে আমরা হারিয়েছি, নতুন প্রজন্মের আর কাউকে হারাতে চাই না৷'' বলা বাহুল্য, তরুণ শিখ প্রজন্ম আর এ আন্দোলনে বিন্দুমাত্র আগ্রহী নয়৷ তাঁদের নজর এখন রুজিরোজগার বাড়াবার দিকে৷ খালিস্তান আন্দোলনের বার্ষিকী পালন তাই নিছকই একটা প্রতীকীমাত্র৷

তবে যত যৌক্তিকই হোক না কেন, এই সেনা অভিযানের চরম মূল্য দিতে হয় ইন্দিরা গান্ধীকে৷ এবং পরে গোটা দেশকে৷ ক্রোধন্মোত্ত শিখ সমাজ প্রতিশোধ নিতে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে প্রাণ দিতে হয় তাঁরই শিখ দেহরক্ষীদের গুলিতে৷ এখানেই শেষ নয়, এই সেনা অভিযানের প্রতিবাদে ভারতের প্রতিরক্ষা বাহিনীর অনেক সেনা বাহিনী ছেড়ে চলে যেতে থাকেন৷ বিদ্রোহ দমনে গঠিত হয় ‘অপারেশন রোজউড'৷ ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পাল্টা প্রতিশোধ নিতে দিল্লি এবং আশেপাশের এলাকায় ঘটে শিখ নিধন যজ্ঞ৷ শিখদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়৷ তিন হাজার শিখ নিহত হয় সেই দাঙ্গায়৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য