1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভুক্ত শ্রমিকদের সাহায্যে সব দলের রাজনীতিকরা

গৌতম হোড়
৩১ মার্চ ২০২০

রাজনীতি ভুলে এখন অন্য রাজ্যে আটক বাঙালি শ্রমিকদের পাশে দাঁড়াচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের সব ক'টি রাজনৈতিক দল।

https://p.dw.com/p/3aEtt
ছবি: Reuters/A. Abidi

আপাতত রাজনীতি নয়, একে অপরের দিকে অভিযোগের আঙুল তোলাও বন্ধ, বন্ধ মুখ্যমন্ত্রী বা অন্য নেতাদের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টাও। করোনা-সঙ্কটের সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছেন সব রাজনৈতিক দলের নেতারা। পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক দলগুলি এখন ঝাঁপিয়েছে অন্য রাজ্যে আটকে পড়া অভুক্ত, বিপন্ন বাঙালি শ্রমিকদের সাহায্য করতে। মুম্বই, চেন্নাই, বেঙ্গালুরু, গোয়া, মণিপুর, ওড়িশা, দিল্লি-- ভারতের যে প্রান্তেই বাঙালি শ্রমিকরা বিপদে পড়ছেন, সেখানেই তাঁদের পাশে থাকার চেষ্টা করছে রাজনৈতিক দলগুলি। ধর্ম, জাতি, রাজনৈতিক রঙ দেখা হচ্ছে না। বরং যেভাবে সম্ভব তাঁদের কাছে পাঠানো হচ্ছে খাবার। তৃণমূল, কংগ্রেস, বিজেপি সকলেই এই কাজে নেমে পড়েছে। তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছে রাজ্যের গরিব মানুষের দিকেও।

বহরমপুরের সাংসদ এবং লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী দিল্লিতেই আছেন। এখান থেকেই সারা দেশে আটকে পড়া বাঙালিদের সাহায্য করছেন। চেন্নাই সহ তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গায়, গোয়া, বেঙ্গালুরু, মহারাষ্ট্র, হরিয়ানা, উত্তরাখণ্ড, উত্তরপ্রদেশ, ওড়িশা, পাঞ্জাবে তিনি হয়ে উঠেছেন আটকে পড়া বাঙালিদের ত্রাতা। লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা হওয়ার সুবাদে অধীরের সুবিধা অনেক। নিজের দলের সাংসদ, বিধায়ক, নেতাদের ফোন করে বললে তাঁরাও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। তা ছাড়া রাজ্যগুলির আইজি, ডিজি, সচিব বা সাংসদ বন্ধুদের সাহায্যেও তিনি দেশের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাঙালিদের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে পারছেন।

সামাজিক মাধ্যমে দুর্গত বাঙালিরা আবেদন জানালেই অধীর চেষ্টা করছেন তাঁদের সাহায্য করার। তাছাড়া নিজের জেলা মুর্শিদাবাদ বা নিজের কেন্দ্র বহরমপুরের গরিব মানুষের পাশে থাকারও চেষ্টা করছেন তিনি। বহরমপুরে 'রবিনহুড' বলে পরিচিত অধীরের এই সাহায্য করার চেষ্টার কথা তাঁর জেলার লোক জানেন। এ বার অন্য জায়গার বাঙালিরাও তাঁর সাহায্যে উপকৃত হচ্ছেন।  অধীর বলেছেন, ''করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলছে। সেই যুদ্ধে আমাদের সামিল হতেই হবে। প্রচুর বাঙালি অন্য রাজ্যে আটকে পড়েছেন। তাঁদের সাহায্য করাটা কর্তব্য।'' মঙ্গলবার তিনি ভারত সেবাশ্রমে গিয়ে রান্না করে গরিবদের হাতে খাবারও তুলে দিয়েছেন।

এই লড়াইয়ে অধীর একা নন। সব দলই নিজেদের মতো করে লড়াই চালাচ্ছে। সকাল থেকে সারা দিন শুধু ফোনেই কথা বলে যাচ্ছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় মুখপাত্র ডেরেক ও ব্রায়েন। ফোনে বা সামাজিক মাধ্যমে অন্য রাজ্যে আটকে পড়া বাঙালির খবর পেলেই শুরু হয়ে যাচ্ছে, তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছনোর চেষ্টা। তৃণমূল এই কাজটা করছে মূলত বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের মারফত। যেমন মুম্বইয়ে খবর পাওয়া গিয়েছিল, কিছু বাঙালি শ্রমিক খেতে পাচ্ছেন না। সঙ্গে সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। উদ্ধব আবার ছেলে আদিত্য ঠাকরেকে দায়িত্ব দেন । দ্রুত তাঁদের কাছে খাবার পৌঁছে যায়। চেন্নাইয়ে আটকে পড়া বাঙালি শ্রমিকদের কাছে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে ডিএমকে নেতা স্টালিনের সঙ্গে যোগাযোগ করে। ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক কয়েকজন অফিসারকে এই দায়িত্ব দিয়েছেন, তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করলেই কাজ হয়ে যাচ্ছে। ডয়চে ভেলেকে ডেরেক জানিয়েছেন, ''আমরা চাল, ডাল, তেল পাঠিয়ে শ্রমিকদের একটা কথাই বলছি, এখন পশ্চিমবঙ্গে ফেরার চেষ্টা করবেন না। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ফিরবেন। ততদিন আমরা সাহায্য করে যাব।''

একই কথা অন্য রাজ্যে আটক বাঙালিদের বলছেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারাও।এখন  রাজ্যে ফেরার কোনও চেষ্টা যেন না করেন শ্রমিকরা। তাঁদের কাছে খাবার ঠিক পৌঁছে যাবে। পশ্চিমবঙ্গের জন্য  চারজনের একটি দল গঠন করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাদের কাজ হল, অন্য রাজ্যে আটকে থাকা বাঙালিদের সাহায্য করা।  সেই দলের অন্যতম সদস্য সৌরভ শিকদার ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''আমরা রাজ্য ধরে ধরে কাজ করছি। কেরলে ২০ হাজার বাঙালি শ্রমিক আটকে আছেন। মণিপুরের মতো জায়গায় এক হাজার লোক আটকে আছেন। আমরা চাল, ডাল, ওষুধ ও দরকার হলে গ্যাসের সিলিন্ডার পৌঁছে দিচ্ছি। গত দুই দিনে অন্ততপক্ষে পাঁচ হাজার লোকের কাছে সাহায্য পৌঁছে গিয়েছে। যেখানে আমাদের সরকার আছে, সেখানে প্রশাসনকে বললেই হচ্ছে। যেখানে সরকার নেই, সেখানে দলের কর্মীরা পৌঁছে দিচ্ছেন।''

শুধু ভিন রাজ্যে নয়, পশ্চিমবঙ্গেও অনেক গরিব মানুষ বিপাকে পড়েছেন। তাঁদের পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করছেন তৃণমূল, কংগ্রেস, বাম, বিজেপি নেতারা। সঙ্কটের দিনে তাঁরা রাজনীতিকে পাশে সরিয়ে রেখে আপাতত সেবকের ভূমিকা পালন করার চেষ্টা করছেন।