1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অনিশ্চয়তা কাটাতে বার্লিনে উইচক্রাফটের রমরমা

১৮ আগস্ট ২০২১

বাণ মারা, অপরের অনিষ্ট করার জন্য কালো জাদু, ডাইনি বিদ্যা কি এই যুগেও চালু আছে? আধুনিক উইচক্রাফট পশ্চিমা জগতেও বহাল তবিয়তে রয়েছে৷ বার্লিনে এক অ্যামেরিকান নারী পেশা হিসেবে জাদুবিদ্যা প্রয়োগ করছেন৷

https://p.dw.com/p/3z7h2
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/dpa/S. Hoppe

জাদুবিদ্যা ব্যবহার যার পেশা!

ট্যারো কার্ড, তন্ত্র হোক অথবা জাদুবিদ্যা, বার্লিন শহরে এমন এসোটেরিক বা আধ্যাত্মিক কাণ্ডকারখানার জনপ্রিয়তা বেড়েই চলেছে৷ ফলে অ্যামেরিকার কেটি ক্রাচফিল্ড ওরফে মিস লিলিয়ান লাক্সের পোয়াবারো৷ মানুষ আইনি সমস্যা, দাম্পত্য কলহ অথবা আর্থিক অনটনের মতো সমস্যা নিয়ে তাঁর কাছে আসেন৷ তিনি সেই অনুযায়ী জাদুর মন্ত্র উচ্চারণ করেন৷ জাদুর এই প্রক্রিয়ার পারিশ্রমিক ১০০ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে৷ কেটি জানালেন, ‘‘গ্রাহকের দেওয়া তথ্য ভালো করে খতিয়ে দেখে আমি জাদু প্রয়োগ করতে চাই৷ যেমন নানা ধরনের ক্রিস্টাল, জড়িবুটি ও রং কাজে লাগাতে চাই৷ সেই ব্যক্তির জন্য কার্যকরভাবে উপাদানগুলি সাজাই৷ আমার শক্তি ও ইচ্ছা সেই অনুযায়ী প্রয়োগ করি৷'' 

মাত্র ১১ বছর বয়সেই কেটি ম্যাজিক সম্পর্কে প্রথম বইটি পড়েন৷ হাই স্কুল শেষ করার পর উদ্ভিদ-ভিত্তিক চিকিৎসা নিয়ে পড়াশোনা করেন তিনি৷ জাদুবিদ্যা তাঁর কাছে এমন এক প্রক্রিয়া, যার আওতায় জাদুর ক্ষমতার উপর আস্থার মাধ্যমেই ইতিবাচক শক্তি নির্গত হয়৷ নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করে কেটি ক্রাচফিল্ড বলেন, ‘‘আমি নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এই জগতে পা রাখি নি৷ আমি ডাক পেয়ে এই পথে এসেছি৷ মানুষ সব সময়ে প্রশ্ন নিয়ে আমার কাছে আসেন, তাঁদের জন্য ‘স্পেল' বা জাদু করতে বলেন, নিজেদের সমস্যা বলেন৷ আমি সাধ্য অনুযায়ী তাঁদের সব রকম সাহায্য করতে চাই৷''

পরিবর্তনের সময় অবলম্বনের সন্ধান

গত দশক ধরে নৃতাত্ত্বিক হিসেবে ভিক্টোরিয়া হেগনার নতুন ধার্মিক আন্দোলনগুলি খতিয়ে দেখছেন৷ আধুনিক উইচক্রাফট সম্পর্কে তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে৷ তার মতে, সাধারণত বড় পরিবর্তনের সময়ে এসোটেরিসিজম বা আধ্যাত্মিকতা সম্পর্কে আগ্রহ বেড়ে যায়৷ ভিক্টোরিয়া বলেন, ‘‘জাদুময় আচার অনুষ্ঠানের প্রতি আগ্রহ বার বার ফিরে আসে৷ অষ্টাদশ বা ঊনবিংশ শতাব্দীতেও সেই লক্ষণ দেখা গেছে৷ সে সময়েই উইচক্রাফটের মৌলিক কাঠামো গড়ে উঠেছিল৷ মানুষ তখন শিল্পায়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে মানিয়ে নেবার চেষ্টা করছিল৷''

টমাস ভাওলস ব্রিটেনের মানুষ হলেও গত আট বছর ধরে বার্লিনে রয়েছেন৷ তিনি হানা জয় গ্রেভস ওরফে ‘কাল্ট মাদার'-এর নিয়মিত গ্রাহক৷ আজ হানা তার জন্য ট্যারো কার্ড বিছিয়েছেন৷ পারিশ্রমিক ঘণ্টায় ৮০ ইউরো৷ টমাস বলেন, ‘‘ম্যাজিক ও আধ্যাত্মিকতা আমার জীবনের একটা বড় অংশ৷ দৈনন্দিন জীবনে স্বচ্ছতা পেতে আমি নিয়মিত রেইকি করি৷ জীবনে কোনো বড় পরিবর্তন বা বিশেষ করে ব্যবসার ক্ষেত্রে বড় সিদ্ধান্ত নেবার আগে আমি ট্যারো কার্ডের সহায়তা নেই৷'' 

জাদুবিদ্যা ব্যবহার যার পেশা!

গত এক বছর ধরে ‘কাল্ট মাদার' ট্যারো কার্ড পড়ে উপার্জন করেছেন৷ করোনা মহামারির কারণে বার্লিনে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে আধ্যাত্মিকতার প্রতি আগ্রহ বেড়ে গেছে৷ ভিক্টোরিয়া হেগনার মনে করেন, ‘‘বিশেষ করে মূল ধারার বাইরের রীতিগুলির চাহিদা সংকটের সময় বেড়ে যায়, কারণ সেগুলি পরিত্রাণের পথ বাতলে দেয়৷''

জাদুর জগতের সীমাবদ্ধতা

কেটি ক্রাচফিল্ড নিজের জ্ঞান প্রয়োগ করে গ্রাহকদের চিন্তাধারা ও অনুভূতির মধ্যে ইতিবাচক প্রভাব আনতে পারেন বলে বিশ্বাস করেন৷ কিন্তু নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷ স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কেটি বলেন, ‘‘আমার শরীরে প্রায় আমের আকারের টিউমার ধরা পড়েছিল৷ ম্যাজিক প্রয়োগ করে আমি কি নিরাময় করতে পারতাম? আমি জানি, অবশ্যই নয়৷ আমি মানুষকে সেটা স্পষ্ট জানিয়ে দিতে চাই৷ কোনো রোগব্যাধী নিয়ে মানুষ আমার কাছে এলে আমি তাদের অন্তরের শক্তি ও আবেগের ক্ষেত্রে সাহায্য করতে পারি, কিন্তু তাদের ডাক্তারেরও শরণাপন্ন হতে হবে৷''

অনিশ্চয়তার সময়ে আধ্যাত্মিক সহায়তার চাহিদা বাড়তে থাকে৷ এসোটেরিক বা আধ্যাত্মিক পথ অনুসরণ করলে কাজ হয় কি না, তা বিশ্বাসের উপর অনেকটাই নির্ভর করে৷

ইয়োসেফিন গ্যুন্টার/এসবি