1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
রাজনীতিফিলিস্তিন

অধিকৃত পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনিদের অনিশ্চিত জীবন

৫ মার্চ ২০২৩

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরে বসবাসরত ফিলিস্তিনিরা শিগগিরই তাদের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ হতে পারেন৷ যে এলাকাতে তারা বাস করছেন, সেটি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আইনি লড়াই চলছে৷

https://p.dw.com/p/4OGsF
পশ্চিম তীরের অধিকৃত এই এলাকাটিকে ইসরায়েল ‘ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট’ হিসাবে চিহ্নিত করে৷
পশ্চিম তীরের অধিকৃত এই এলাকাটিকে ইসরায়েল ‘ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট’ হিসাবে চিহ্নিত করে৷ ছবি: Tania Krämer/DW

ইসরায়েল অধিকৃত পশ্চিম তীরের দক্ষিণে একটি আধা-মরুভূমি অঞ্চল মাসাফের ইয়াত্তা৷ সেখানে বেশ কয়েকটি ফিলিস্তিনি জনপদ রয়েছে৷ ২০২২ সালের মে মাসে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট একটি মামলায় চূড়ান্ত রায় দেয়৷ রায় অনুসারে এই গ্রামীণ এলাকায় বাসরত প্রায় এক হাজার ফিলিস্তিনিকে উচ্ছেদ করার সুযোগ তৈরি হয়েছে৷ এই এলাকাটি ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট নামেও পরিচিত, যা ইসরায়েল সেনা প্রশিক্ষণ ক্ষেত্র হিসাবেও ব্যবহার করে৷

সম্প্রতি স্থানীয় গণমাধ্যম এবং ইসরায়েলের মানবাধিকার সংস্থাগুলোও আসন্ন উচ্ছেদ কার্যক্রমের ব্যাপারে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে৷

খালেট আথাবা গ্রামের ৩৫ বছর বয়সি ফিলিস্তিনি বাসিন্দা জাবের দাবাবসেহ বলেন, ‘‘প্রতিদিন যেখানে সেখানে চেকপয়েন্ট বসিয়ে ওরা আমাদের ওপর আরো বেশি চাপ প্রয়োগ করে চলেছে৷ মূলত, তারা চায় যে আমরা এখান থেকে চলে যাই৷''

পাঁচ সন্তানের বাবা দাবাবসেহ অনেক বছর ধরেই উচ্ছেদের হুমকির মধ্যেই এখানে বাস করছেন৷ তবে তিনি বলেন, দক্ষিণ হেব্রন পাহা়ড়ের এই এলাকাটিকে তিনি নিজের বাড়ি বলেই মনে করেন, এবং এখান থেকে তিনি যাবেন না৷

আদালত এবং আদালতের বাইরেও মাসাফের ইয়াত্তা নিয়ে লড়াই চলছে ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে৷

অঞ্চলটিতে সরকারি কার্যক্রম সমন্বয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর বেসামরিক শাখা অবশ্য এমন কোনো আসন্ন উচ্ছেদ কার্যক্রম নিয়ে মন্তব্য করতে চায়নি৷ তবে জানুয়ারিতে ডয়চে ভেলেকে দেয়া এক বিবৃতিতে তারা জানায়, ‘‘ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট একটি সামরিক এলাকা, যেখানে ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়৷ সে অনুযায়ী, আইডিএফ এর অনুমতি ছাড়া এখানে প্রবেশ এবং এর মাধ্যমে জীবনের হুমকি তৈরি করা একটি ফৌজদারি অপরাধ৷''

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একাধিক উচ্ছেদ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী ওই এলাকায় বেশ কয়েকটি স্থাপনা ধ্বংস করেছে৷ গত নভেম্বরে সামরিক বাহিনী একটি ছোট প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নির্মাণের কিছুক্ষণ পরেই ভেঙে ফেলে৷ খিরবেত আ-সাফাই আল-ফোকা এর একতলা কাঠামোটি অনুদানের সাহায্যে নির্মিত হয়েছিল৷ কাছাকাছি বাস করা সম্প্রদায়গুলোর ২০ জন শিক্ষার্থী সেটিতে পড়তে আসতো৷

এই স্কুলের স্থাপনা ভেঙে ফেলার পর প্রায় একই ধরনের একটি বিবৃতি প্রকাশ করে ইসরায়েল৷ সেখানা বলা হয়, তারা ‘দক্ষিণ হেব্রন পাহাড়ের ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট এ অবৈধভাবে নির্মিত একটি কাঠামোর বিরুদ্ধে প্রয়োগকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷' আরো বলা হয়, ‘বিনা অনুমতিতে এটিতে প্রবেশ করা আইনের পরিপন্থি এবং মানুষের জীবনকে বিপন্ন করছে৷'

স্কুলের স্থাপনা ভেঙে ফেলার পরপরই গ্রামবাসীরা ধ্বংসাবশেষের উপর একটি অস্থায়ী তাঁবু তৈরি করে৷ ২০২২ সালের নভেম্বরের শেষ দিকে যখন ডয়চে ভেলে সেখানে যায়, তখন তাঁবুর এক কোণে ফিলিস্তিনের প্রথম শ্রেণির ছাত্ররা ইংরেজি বর্ণমালা শিখছিল৷ আরেকদিকে আশরাফ শ্রেটেহ দুইটি টেবিলের ওপর বসে থাকা তিনজন আগ্রহী ছাত্রকে গণিত পড়াচ্ছিলেন৷

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘স্কুলটি প্রতিষ্ঠার পর আমরা বেশ আশাবাদী হয়ে উঠেছিলাম৷ স্থাপনাটি পুনর্নির্মাণ করা ছাড়া আর কোনো বিকল্প নেই৷ কিন্তু মাঝেমধ্যে সবাই হতাশ হয়ে পড়ে৷''

স্কুলের প্রধান শিক্ষক ইসা মাহামারেহ ডয়চে ভেলেকে নভেম্বরে বলেছিলেন, ‘‘আমরা আমাদের সন্তানদের জন্য একটা স্বাভাবিক জীবন চাই৷ তারা কঠোর পরিশ্রম করুক এবং ভালোভাবে পড়াশোনা করে সবচেয়ে ভালো জীবন পাক, সেটাই আমাদের চাওয়া৷''

কয়েক সপ্তাহ পরই সেই তাঁবু দিয়ে তৈরি সেই সাময়িক স্কুলটিও ভেঙে ফেলা হয়৷

জমিতে অধিকার কার?

মাসাফের ইয়াত্তার অবস্থান তথাকথিত এরিয়া সি এলাকাতে৷ ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরের যে ৬০ শতাংশ এলাকাই এই অঞ্চলে অবস্থিত৷ অঞ্চলটি পুরোপুরি ইসরায়েলের নিয়ন্ত্রণে৷

২০২২ সালের মে মাসে ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে ১৯৮০ সালে ফায়ারিং জোন নাইন ওয়ান এইট নামে পরিচিত সামরিক জোন ঘোষণা করার আগে মাসাফের ইয়াত্তার আটটি গ্রামের বাসিন্দারা এই এলাকায় তাদের বসবাস প্রমাণ করতে পারেনি৷ বলা হয়, বছরের নির্দিষ্ট, সীমিত সময়ে এলাকায় প্রবেশ করতে দেয়া হবে, এমন সমঝোতা প্রস্তাবও গ্রামবাসী প্রত্যাখ্যান করেছে৷

পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি বসতি আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে অবৈধ৷ গত কয়েক বছরে এইসব বসতি বিভিন্ন এলাকাতে বিস্তার লাভ করেছে৷ গত কয়েক সপ্তাহে জার্মানি এবং যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশ কয়েকটি দেশ ইসরায়েলের বসতি নির্মাণের পরিকল্পনার নিন্দা জানিয়েছে৷

আভিগাইল নামে একটি এলাকাতে বসতি আগে ইসারায়েলি আইন অনুসারেও অবৈধ ছিল৷ কিন্তু সম্প্রতি ইসরায়েলের নতুন কট্টর ডানপন্থি সরকার এটি সহ ইসরায়েল-অধিকৃত পশ্চিম তীরে মোট নয়টি ইসরায়েলি বসতিকে বৈধতা দেয়ার ঘোষণা দেয়৷

এসব এলাকাতে বসা করা বেশিরভাগ ফিলিস্তিনি প্রথাগত কৃষিকাজ এবং পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করেন৷ তাদের দাবি, ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে ইসারায়েল পশ্চিম তীর দখল করে নেয়ার অনেক আগে থেকেই তারা এসব এলাকাতে বাস করছেন৷

গত বছর মার্কিন কংগ্রেসের কিছু সদস্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে ফিলিস্তিনি বাসিন্দাদের বলপূর্বক উচ্ছেদের ইসরায়েলী পরিকল্পনার প্রকাশ্য নিন্দা জানানোর আহ্বান জানান৷ তারা এটিকে ‘চতুর্থ জেনেভা কনভেনশনের ভয়াবহ লঙ্ঘন' বলেও উল্লেখ করেন৷

২০১৯ সালের ছবিঘর

তানিয়া ক্র্যামার/এডিকে