1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অতিবৃষ্টিতে বন্যার আশঙ্কা পশ্চিমবঙ্গে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
৩ অক্টোবর ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় একটানা বৃষ্টি চলছে। পাশের রাজ্য ঝাড়খণ্ডেও একই পরিস্থিতি। এর ফলে উৎসবের সময় বন্যার আশঙ্কা পশ্চিমবঙ্গে।

https://p.dw.com/p/4X4LV
পশ্চিমবঙ্গ বন্যা
ছবি: Satyajit Shaw/DW

ক্যালেন্ডারে শরৎ এসে পড়লেও বর্ষার আমেজ রাজ্যে। লাগাতার বৃষ্টিতে সাতটি জেলায় বন্যাপরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে রাজ্য সরকার। হাওড়া, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম ও বাঁকুড়ায় বন্যা হতে পারে। রাজ্যের মুখ্য সচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী সোমবার সাতটি জেলার প্রশাসনের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে আগাম প্রস্তুতি নিয়ে পর্যালোচনা করেছেন।

ভারতীয় আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী পাঁচ অক্টোবর পর্যন্ত বৃষ্টি চলবে। ঝাড়খণ্ডের উপর একটি নিম্নচাপ অক্ষরেখা অবস্থান করায় অসময়ের এই বৃষ্টিপাত। দিন দশেক আগেই একইভাবে লাগাতার বৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টির জেরে জলাধারগুলির উপর চাপ বাড়ছে। জলাধার থেকে বেশি জল ছাড়া হলে অনেক এলাকা ভেসে যেতে পারে।

জল ছাড়ায় শঙ্কা

নবান্ন জানিয়েছে, এই সময় মাইথন জলাধার থেকে ৬০ হাজার ও পাঞ্চেৎ জলাধার থেকে ৭৩ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। কিন্তু সোমবার সকালে এই দুটি জলাধার থেকে এক লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এতে চাপ বাড়ছে দুর্গাপুর ব্যারেজের উপর। এখান থেকে জল ছাড়া হলে হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া ও দুই বর্ধমানের বিস্তীর্ণ এলাকায় প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।

সোমবারের বৈঠকের পর রাজ্যের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সব জেলাশাসক ও পুলিশ সুপারদের অবিলম্বে নিচু ও বন্যাপ্রবণ এলাকা চিহ্নিত করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এই এলাকাগুলিতে নজরদারি রাখতে হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।

নবান্নের নির্দেশ, বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ব্যবস্থা তৈরি রাখতে হবে। দেখতে হবে যাতে বন্যা কবলিত এলাকা থেকে মানুষকে দ্রুত উদ্ধার করা সম্ভব হয় এবং ত্রাণ পৌঁছনো যায়।

বন্যা নিয়ে সাম্প্রতিক অতীতে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে চাপানউতোর কম হয়নি। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জল ছাড়া নিয়ে কেন্দ্রের অধীন দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনকে বারবার বিঁধেছেন। 'ম্যান মেড বন্যা'র অভিযোগ করেছেন। কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আবার রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলে সমন্বয়ের অভাবকে দায়ী করেছে।

দিকে দিকে ভোগান্তি

এছাড়াও রাজ্য দাবি জানিয়েছে দামোদরের পলি সংস্কারের। কিন্তু সেই কাজ এগোয়নি। দামোদর নদের জলধারণ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় সহজেই নিম্ন অববাহিকা অঞ্চল অতিবৃষ্টিতে ভেসে যায়। এর ফল প্রতি বছর ভুগতে হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের মহাকুমা শহর ঘাটাল ও তার আশপাশের বাসিন্দাদের।

ইতিমধ্যে শিলাবতী, কংসাবতী নদীর জল ঢুকতে শুরু করেছে পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল ও চন্দ্রকোণার বিভিন্ন এলাকায়। জমা জলে কার্যত ভেনিসের চেহারা নেয় ঘাটাল। নৌকোয় তখন হয়ে ওঠে মানুষের ভরসা। বহু বছর ধরে ঘাটাল মাস্টার প্ল্যানের কথা শোনা গেলেও তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি।

বাঁকুড়ার দারকেশ্বরে জল বেড়ে কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। নিম্নচাপ অক্ষরেখাটি আগামী দু-তিন দিন পশ্চিমবঙ্গের পশ্চিম অংশের জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে বলে পূর্বাভাস রয়েছে। ফলে দুর্গোৎসবের প্রস্তুতির মধ্যেই বিপর্যয়ের মেঘ দেখা যাচ্ছে।

পলি কোথায় রাখা হবে, তার সমাধান করা যায়নি: সুভাষ

বন্যা মোকাবিলার পথ

নদীর পলি সংস্কারে অনেকটাই সমাধান হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের মত। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বাধা যে নেই তা নয়। 

রাজ্যের সাবেক সেচমন্ত্রী, প্রবীণ বাম নেতা সুভাষ নস্কর বলেন, "দামোদরের নিম্ন অববাহিকার প্লাবন রুখতে আমরা একটা প্রকল্প নিয়েছিলাম। পুরসভার সঙ্গে কথা বলে কাজ শুরু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। কিন্তু এতো বিপুল পরিমাণ পলি কোথায় রাখা হবে, তার সমাধান করা যায়নি। তাই সেই প্রকল্প বাতিল করতে হয়।"

বন্যা একটি স্বাভাবিক প্রাকৃতিক ঘটনা। একে রোখা সম্ভব নয়, প্রয়োজন জল বার করে দেয়ার পরিকাঠামো ঠিক রাখা। এমনটাই মত নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রের। 

তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "ঔপনিবেশিক আমল থেকেই রেলপথ, সড়ক এমনভাবে তৈরি হয়েছে যে জল বেরোনোর রাস্তা সঙ্কুচিত হয়ে এসেছে। নিম্ন দামোদরের পূর্বদিকে কানা দামোদর, মজা দামোদর, গাঙ্গুর, বেহুলা আর নেই বাঁধ গড়ার জন্য। এর ফলে যে জল আগে দুদিনে নেমে যেত, তাতে এখন ১০-১৫ দিন সময় লাগছে।"

প্রতিকার হিসেবে কল্যাণের পরামর্শ, "বন্যা রোখা যাবে না, মানুষের দুর্দশা কমাতে হবে। রেলপথের নীচে কালভার্ট তৈরি করা দরকার। বাড়ি যাতে ধসে না পড়ে সেভাবে নির্মাণ করতে হবে। পানীয় জলের ব্যবস্থা, বন্যার সতর্কতা, ত্রাণ বিলির ব্যবস্থা আরো উন্নত করেই দুর্দশা কমানো সম্ভব।"