1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভিপি নুরের অভিযোগ এবং আইনজীবীর পরামর্শ

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৬ ডিসেম্বর ২০১৯

টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড ও তা প্রকাশের জন্য রাষ্ট্রযন্ত্র ও গোয়েন্দা সংস্থাকে অভিযুক্ত করেছেন ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর৷ অডিওতে বিকৃতি ও সংযোজনেরও অভিযোগ করেছেন তিনি৷

https://p.dw.com/p/3UKeQ
ছবি: Privat

ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মনে করেন, এমন ক্ষেত্রে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির উচিত মামলা করা৷

আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘কারুর টেলিফোন রেকর্ড এবং প্রকাশ করা প্রাইভেসির লঙ্ঘন৷ সংবিধানে এই ব্যক্তিগত গোপনীয়তার অধিকার সব নাগরিককে দেয়া আছে৷ অন্য কোনো আইন করেও এটা ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করা সম্ভব নয়৷ কারণ, সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক কোনো আইনই বলবৎযোগ্য নয়৷ নতুন আইনে (ডিজিটাল নিরাপত্তা) কাউকে না জানিয়ে তার ছবি ধারণ করা অপরাধ৷ সেখানে গোপনে কারুর টেলিফোন কথোপকথন রেকর্ড ও প্রকাশ করা তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা ও যোগাযোগের নিরাপত্তার লঙ্ঘন৷’’
তিনি বলেন, ‘‘কেউ কেউ হয়ত বা টেলিকমিউনিকেশন আইন ২০০১-এর কথা বলবেন৷ সরকার চাইলে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা, শৃঙ্খলার কারণে করতে পারে৷ কিন্তু সেটা তো বাইরে প্রকাশ করতে পারে না৷ সংবাদমাধ্যমকে প্রকাশের জন্য দিতে পারে না৷ সংবাদমাধ্যম প্রকাশ করতে পারে না৷ আর কে রেকর্ড করে তা তো বলা হয় না৷ যদি কারুর বক্তব্য ফৌদারী অপরাধ হয় তাহলে সেটা নিয়ে তো সরকারের সংস্থা কোর্টে যাবে৷ মামলা করবে৷ তা করে না৷ সংবাদমাধ্যমকে দেয় এর কারণ হলো, সেটা অপরাধমূলক নয়৷ কারুর মান হানির জন্য৷ হেয় করার জন্য প্রচারের উদ্দেশ্যে দেয়৷’’
এতে দুটো ফৌজদারি অপরাধ হয় বলে মনে করেন তিনি৷ প্রথমত, গোপনে রেকর্ড করা এবং দ্বিতীয়ত, তা বাইরে প্রচার করা৷ এর প্রতিকার পেতে সংক্ষুব্ধ নাগরিকদের কী করা উচিত? ব্যারিস্টার বড়ুয়ার পরামর্শ, ‘‘আদালতে যেতে পারে, সেই সুযোগ তো আছেই৷’’

কারুর টেলিফোন রেকর্ড এবং প্রকাশ করা প্রাইভেসির লঙ্ঘন: জ্যোতির্ময় বড়ুয়া

এদিকে অডিও ফাঁস হওয়ার বিষয়ে নুরুল হক নুরের দাবি, ‘‘এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে৷’’

কয়েকটি সংবাদমাধ্যম সেই অডিও ‘বিকৃতভাবে’ প্রচার করেছে- এমন অভিযোগ তুলে ওই সংবাদমাধ্যমগুলোকে ক্ষমা চাইতেও বলেছেন তিনি৷
সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম ডাকসু ভিপি নুরের দু'টি ফোনালাপের অডিও প্রকাশ ও খবর পরিবেশন করে৷ এর একটি ঠিকাদারী সংক্রান্ত এবং আরেকটি প্রবাসী এক ব্যক্তির সহযোগিতার প্রস্তাব নিয়ে৷ বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল ডিবিসি নিউজের খবরে দাবি করা হয়, ‘‘ভিপি নুর তার এক আত্মীয়কে ১৩ কোটি টাকার কাজ পাইয়ে দিতে তদবির করেছেন৷ অন্যদিকে যে-কোনো আন্দোলনের ব্যাপারে আর্থিক সহায়তা পেতে টেক্সাসের এক বিএনপি নেতার সাথে যোগাযোগ হয়েছে ভিপি নূরের৷’’

সব অভিযোগ অস্বীকার করে ভিপি নুর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার আন্টির কনস্ট্রাকশন ফার্ম আছে৷ সেই ফার্ম ১৩ কোটি টাকার একটি সরকারি প্রকল্পের কাজ পেয়েছে৷ তিনি আমাদের গ্রামের বাড়ি পটুয়াখালির গলাচিপায় ছিলেন৷ তার ওই কাজের জন্য ১৩ কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রয়োজন ছিল দুই দিনের মধ্যে৷ এই সময়ের মধ্যে তার পক্ষে ঢাকায় আসা সম্ভব ছিল না৷ আমাকে এ বিষয়ে ফোনে সহায়তার জন্য বললে আমি আমার পরিচিত এক বড় ভাই, তিনিও কনস্ট্রাকশন ব্যবসা করেন, তার সাথে ওই ব্যাংক গ্যারান্টির বিষয়ে কথা বলি৷ তিনি ব্যাংক গ্যারন্টি দিয়ে সহায়তা করতে পারেন কিনা জানতে চাই৷ আন্টির ব্যবসার সঙ্গে আমি জড়িত নই৷ তাকে সহায়তার জন্যই আমি আমাার পরিচিত বড় ভাইয়ের সাথে কথা বলি৷ তাকে বলি আন্টি ঢাকায় এলে ওই ব্যাংক গ্যারান্টির টাকা তাকে দিয়ে দেয়া হবে৷’’

কথোপকথনের যে অডিও প্রচার করেছে সেখানে কিছু জিনিস কাটিং করে ঢুকানো হয়েছে: নুর

দ্বিতীয় অডিওর বিষয়ে তিনি বলেন, ‘‘আমাকে দেশ- বিদেশের অনেকেই ফোন করেন৷ এক লোক ফোন করে প্রবাসী পরিচয়ে আমাকে সহযোগিতা করতে চায়৷ কিন্তু আমি বলেছি, আপনি সহযোগিতা করতে চান আপনাকে ধন্যবাদ৷ কিন্তু এখন আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন নাই৷ আর আমরা অপিরিচিত কারুর কাছ থেকে হেল্পও নেই না৷ তখন ওই লোক বলে, ঠিক আছে আপনি হেল্প নেবেন না, আপনাকে জোর করবো না৷ কিন্তু আপনাকে ব্যক্তি হিসেবে ভালো লাগে, তাই যোগাযোগ রাখতে চাই৷ তখন আমি বলি, ঠিক আছে, আমি ফোনে এত কথা বলি না৷ আপনি প্রয়োজন মনে করলে হোয়াটসআ্যাপে মেসেজ দিয়েন৷’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘কিন্তু আমার ফোনে কথোপকথনের যে অডিও কয়েকটি সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছে, সেখানে কিছু জিনিস কাটিং করে ঢুকানো হয়েছে৷ দ্বিতীয়টিতে আপনি হোয়াটসআ্যাপ-এ যোগাযোগ করেন৷ আপনাকে সহযোগিতা করতে চাই৷ এগুলো যোগ করা হয়েছে৷ আবার প্রথমটায়, টাকা-পয়সা লাগলে এই ধরনের শব্দ অন্য কোনো কনভার্সেশন থেকে যুক্ত করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হয়েছে৷’’
তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘এটা উদ্দেশ্যমূলকভাবে করা হয়েছে৷ এর সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্র নিজেই জড়িত৷ আমার টেলিফোনের কথা রেকর্ড করে কোনো গণমাধ্যম ফাঁস করতে পারে না৷ এটা একমাত্র রাষ্ট্রযন্ত্র চাইলে ফাঁস করতে পারে এবং তারা তদারকি করতে পারে৷ আমার ধারণা, এটা গোয়েন্দা সংস্থার লোকেরা করেছে৷ বর্তমান সরকারে দুর্নীতি ও দুঃশাসনের ব্যাাপারে আমরা ছাত্রদের নিয়ে নানা ধরনের প্রতিবাদ করি৷ সম্প্রতি সরকার দেশের স্বার্থের বিরুদ্ধে ভারতের সাথে যে চুক্তি করেছে, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে, এসবের প্রতিবাদ করে আমরা মানুষের সমর্থন পাচ্ছি৷ তখন সরকার আমাদের সমর্থনের জায়গা নষ্ট করতে, আমাদের খারাপভাবে তুলে ধরতে এই কাজ করেছে৷ আর এই ঘটনা ঘটিয়েই ছাত্রলীগ ও তাদের সংগঠন মুক্তিযোদ্ধা মঞ্চ ডাকসুর ভিপির রুমে তালা লাগিয়ে পদত্যাগ চেয়েছে৷’’
তিনি বলেন, ‘‘কেউ যদি প্রমাণ করতে পারে আমি বিন্দুমাত্র অনৈতিক কোনো তদবির করেছি, কোনো অবৈধ আর্থিক লেনদেন করেছি, তাহলে আমি পদত্যাগ করব৷’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘তিনটি সংবাদ মাধ্যমকে আমরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্ষমা চাইতে বলেছি, তা না হলে আইনগত ব্যবস্থা নেবো, কারণ, প্রথমে তারা ব্যক্তির ফোনালাপ প্রকাশ করতে পারে না, দ্বিতীয়ত তারা তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়েছে৷’’