1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অঙ্কিতার চাকরি গেলেও সুকন্যা আপাতত স্বস্তিতে

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১৯ আগস্ট ২০২২

নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় স্বস্তি পেলেন অনুব্রত মণ্ডলের কন্যা৷ তার সম্পর্কে দায়ের হলফনামা চলতি টেট দুর্নীতি মামলার সঙ্গে যুক্ত থাকছে না৷ কিন্তু এই স্বস্তি কত দিন?

https://p.dw.com/p/4FlDN
কলকাতা হাইকোর্ট
বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দেন অনুব্রত কন্যা সুকন্যা মণ্ডলছবি: Jagannath Raul/Dinodia/IMAGO

গরুর পর স্কুল

গরু পাচার মামলায় হেফাজতে রয়েছেন বীরভূমের তৃণমূল জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল৷ বিদ্যালয়ে প্রাথমিক স্তরে নিয়োগের টেট দুর্নীতির মামলাতেও দাপুটে নেতার দিকে আঙুল উঠছিল৷ তার কন্যা সুকন্যা মণ্ডল টেট পাস না করে প্রাথমিক স্কুলে চাকরি করতেন বলে অভিযোগ৷ সেই মামলায় বৃহস্পতিবার কলকাতা হাইকোর্টে হাজিরা দেন সুকন্যা৷ বুধবার সুকন্যাসহ অনুব্রতের ছয় ঘনিষ্ঠকে তলব করেছিল আদালত৷ তবে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তার আগের দিনের নির্দেশ প্রত্যাহার করে নেন৷ এই মামলায় হাজিরা থেকে সুকন্যাসহ অন্যান্যদের অব্যাহতি দেন তিনি৷ এ জন্যই আপাতত স্বস্তিতে সুকন্যারা৷ তাদের আদালতে টেট পাসের সার্টিফিকেট ও নিয়োগপত্র পেশ করতে হবে না৷

সুকন্যার বিরুদ্ধে অভিযোগ

শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষা টেট-এ পাস না করেও সুকন্যা চাকরি করতেন বলে অভিযোগ৷ স্কুলে যেতেন না তিনি৷ অভিযোগ, বাড়িতে হাজিরা খাতা আসতো৷ তাতে তিনি সই করতেন, বেতন পেতেন৷ কলকাতা হাইকোর্টে টেট দুর্নীতি নিয়ে মামলা চলছে৷ সেই মামলায় অতিরিক্ত হলফনামা পেশ করে সুকন্যাসহ অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয় বুধবার৷ এর মধ্যে অনুব্রতর ভাইপো ও আপ্ত সহায়কও ছিলেন৷ সেই হলফনামা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের বৃহস্পতিবারের নির্দেশের পর আর এই মামলার সঙ্গে যুক্ত রইল না৷ তবে এ নিয়ে আলাদা মামলা দায়ের হলে ফের নজর পড়তে পারে সুকন্যার দিকে৷ চলতি টেট মামলায় পরের শুনানি পয়লা সেপ্টেম্বর৷

বোলপুরে সুকন্যার স্কুল

বোলপুরে অনুব্রতর বাড়ি থেকে একেবারে কাছে কালিকাপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়৷ এখানেই চাকরি করতেন সুকন্যা৷ হাঁটাপথে বাড়ি থেকে মিনিট পাঁচ-সাতেকের রাস্তা৷ আদৌ কি স্কুলে যেতেন তৃণমূল নেতার কন্যা? সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, সেখানকার পড়ুয়া-অভিভাবকরা সুকন্যাকে চেনেন না বলে দাবি করেছেন৷ বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন বলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা মুখ খুলছেন না৷ শুধু বলেছেন, তিনি কোনো দোষ করেননি৷ বৃহস্পতিবার অনুব্রত দাবি করেছেন, তার মেয়ে টেট পাস করেছেন৷ সেই সার্টিফিকেটও আছে, যদিও এ দিন আদালতে আসা-যাওয়ার সময় প্রশ্ন করা হলেও একটিও কথা বলেননি সুকন্যা৷ প্রশ্ন উঠছে, সংবাদমাধ্যমের সামনে কেন আত্মপক্ষ সমর্থন করলেন না তিনি? টেট পাস করেছেন, স্কুলে যেতেন, এই ধরনের মন্তব্য কেন শোনা গেল না তার কাছ থেকে?

অঙ্কিতার পর সুকন্যা

শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর মেয়ে অঙ্কিতা আদালতের নির্দেশে চাকরি খুইয়েছেন৷ তাঁকে বেতনের টাকাও ফেরাতে হয়েছে৷ সুকন্যার তেমনই কোনো পরিণতি হয় কি না, তা নিয়ে কৌতূহল ছিল দিনভর৷ অঙ্কিতার চাকরি গেলেও পরেশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি তৃণমূল৷ গরু পাচার মামলায় গ্রেফতারির পর অনুব্রতের পাশেই রয়েছে শাসক দল৷ পর্যবেক্ষকদের একাংশের বক্তব্য, অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের নিয়োগ নিয়ে ফের মামলা দায়ের হলে তিনি বিপাকে পড়তে পারেন৷ তবে এ ধরনের স্বজনপোষণের অভিযোগ বাম আমলেও ছিল৷ বাম ঘনিষ্ঠরা সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা পেতেন বলে শোনা গিয়েছিল৷ কিন্তু সেজন্য বিপুল টাকা লেনদেনের ঘটনা সামনে আসেনি যা ঘটেছে পার্থর ক্ষেত্রে৷

এখন মানুষ নিজের স্বার্থ দেখে ভোট দেয়: নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায়

সুবিধা পাবে বিরোধীরা?

তৃণমূলের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ৷ বিজেপি, বাম, কংগ্রেস নিয়মিত প্রতিবাদ কর্মসূচি নিচ্ছে কলকাতা ও জেলায়৷ অতীতে সারদা, নারদ কেলেঙ্কারির মতো অভিযোগ উঠলেও ভোটে বিপুল সমর্থন পেয়েছেন তৃণমূল৷ ভবিষ্যতে কী সম্ভাবনা? রাজনৈতিক বিশ্লেষক নীলাদ্রি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাম শাসনের ৩৪ বছরের মানুষ আদর্শের নামে ভোট দিয়েছিল৷ সেই অভিজ্ঞতা জনতার রয়েছে৷ এখন মানুষ নিজের স্বার্থ দেখে ভোট দেয়৷ তৃণমূলের জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা তারা পেয়েছে৷ পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বাড়িতে টাকা উদ্ধার হলেও সেই সুবিধা মানুষ পাবে৷’’ বিরোধীদের সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তাঁর বক্তব্য, ‘‘জ্যোতি বসু ২২ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন৷ তাঁর বিপরীতে গ্রহণযোগ্য মুখ উঠে আসেনি৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেই গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিলেন আন্দোলনের মাধ্যমে৷ তাঁর বিরুদ্ধে তেমন কোনো মুখ এখনো বিরোধী শিবিরে দেখা যাচ্ছে না৷’’