নেতৃত্ব ধরে রাখতে হেফাজতের আহ্বায়ক কমিটি
২৬ এপ্রিল ২০২১হেফাজতের কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করেন এমন একজন ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বর্তমানে হেফাজতে যারা নেতৃত্বে আছেন তাদের মধ্যে শীর্ষ দুই নেতা জুনায়েদ বাবুনগরী ও নুরুল ইসলাম জিহাদী ছাড়া অধিকাংশই বিভিন্ন ইসলামিক রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে যারা রাজনীতি করেন তাদের কার্যক্রমও রাজনৈতিক হওয়ায় স্বাভাবিক৷ এতে করে অরাজনৈতিক যারা তারা পদত্যাগ করতে শুরু করেন৷ এই পদত্যাগকারীদের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছিল৷ পাশাপাশি আহমেদ শফির ছেলে আনাস মাদানীরা এতদিন হেফাজতে খুব একটা সংগঠিত হতে পারছিল না৷ এখন পদত্যাগকারীরা যদি তাদের গ্রুপে যোগ দেন তাহলে বর্তমান নেতাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়বে৷ পাশাপাশি আনাস মাদানীদের পক্ষে তো সরকারের কিছুটা সহমর্মিতা আছেই৷ এর মধ্যে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী যাদের গ্রেফতার করেছে তারা সবাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত৷ ফলে বর্তমান নেতাদের কমিটি ভেঙে দেওয়া ছাড়া কোন পথ ছিল না৷ পাশাপাশি কওমি মাদরাসা পরিচালনার জন্য সর্বোচ্চ প্রতিষ্ঠান "আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” থেকেও হেফাজত নেতাদের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছিল৷ সবকিছু মিলিয়েই কমিটি ভেঙে দিতে হয়েছে৷ এখন তারা রাজনীতিক মুক্ত হেফাজতের কমিটি গঠন করতে চায়৷”
গত রোববার রাতে "আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” এর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে৷ সেখানেও হেফাজতের কার্যক্রমের কারণে বোর্ডের অনেক সদস্য পদত্যাগ করার অভিপ্রায় ব্যক্ত করেন৷ এই পরিস্থিতিতে তারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কওমি মাদরাসা পরিচালনার ক্ষেত্রে সব সিদ্ধান্ত নেবে নির্ধারিত বোর্ড "আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ”৷ মাদরাসা পরিচালনায় কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না হেফাজতে ইসলাম৷ এই বিষয়টি জানাতে সোমবার রাতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন বোর্ডের একটি প্রতিনিধি দল৷
"আল-হাইআতুল উলয়া লিল-জামি'আতিল কওমিয়া বাংলাদেশ” এর দফতর সম্পাদক অসিউর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বোর্ডের চাপের কারণে কি-না সেটা বলতে পারব না৷ তবে বোর্ড সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন থেকে মাদরাসা পরিচালনায় কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করতে পারবে না হেফাজতে ইসলাম৷ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড৷ আসলে আহমেদ শফির মৃত্যুর পর যারা হেফাজতে ঢুকেছেন তাদের অধিকাংশই তো কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত৷ ফলে তাদের সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রম রাজনৈতিক হওয়া স্বাভাবিক৷ যেহেতু হেফাজত একটি অরাজনৈতিক সংগঠন সেখানে রাজনীতি করার সুযোগ নেই৷ কওমি মাদ্রাসার কোন ছাত্র শিক্ষক রাজনীতিতে যুক্ত হতে পারবেন না৷ আমরা এই বিষয়টি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে অবহিত করতে সোমবার রাতে তার সঙ্গে বৈঠক করার উদ্যোগ নিয়েছি৷ বোর্ডের মিটিংয়ে হেফাজতের বিলুপ্ত কমিটির মহাসচিব ও বর্তমান আহবায়ক কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী উপস্থিত ছিলেন৷ তিনি বোর্ডের সবাইকে কথা দিয়েছেন রাজনীতিমুক্তভাবে হেফাজতের কমিটি করা হবে৷”
অবশ্য কেন হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করতে হলো সেই বিষয়টি পরিস্কার করে বলতে রাজি নন নুরুল ইসলাম জিহাদী৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "বাবুনগরী তো বলেছেন৷ সেটাই আমাদের কথা৷ এর চেয়ে বেশি পরিস্কার করা যাবে না৷ বর্তমান পরিস্থিতি কী তা আপনিও জানেন, আমিও জানি৷ এটা তো জটিল কিছু না, কমিটি বিলুপ্ত হয়েছে, আহবায়ক কমিটি বানানো হয়েছে৷” বোর্ডের মিটিংয়ে কী আপনি হেফাজতকে রাজনীতিমুক্ত করার অঙ্গীকার করেছেন? জবাবে তিনি বলেন, "যারা এই অভিযোগ করছেন, তারা বলবেন৷ আমি তো কোন অভিযোগ উত্থাপন করিনি৷ ফলে এ ব্যাপারে আমি কোন ব্যাখা দেব না৷”
হেফাজতের রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন পরিচয় গোপন রাখার শর্তে ডয়চে ভেলেকে বলেন, "রোববার কমিটি বিলুপ্ত করার পর আহবায়ক কমিটি দু'একদিন পরে করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল৷ কিন্তু এর মধ্যে আহমেদ শফির ছেলের গ্রুপের কয়েকজন নেতা মিডিয়াকে বলেছেন, শিগগিরই তারা আহবায়ক কমিটি করবেন৷ ফলে তাদের কমিটি করার আগেই রাতের মধ্যেই আহবায়ক কমিটি করা হয়েছে৷ প্রথমে তিনজনকে রাখা হলেও পরে সেটা পাঁচ জন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে আহবায়ক জুনায়েদ বাবুনগরী, প্রধান উপদেষ্টা তার মামা মহিবুল্লাহ বাবুনগরী, সদস্য সচিব নুরুল ইসলাম জিহাদী এবং দুই জন সদস্য সালাহউদ্দিন নানুপুরী ও অধ্যক্ষ মিজানুর রহমানকে যে রাখা হয়েছে তাদের কেউ রাজনৈতিক কোন সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত নন৷ এবার যে কমিটি করা হবে সেখানেও রাজনৈতিক দলের কাউকেই রাখা হবে না৷ মামুনুল হকের মতো রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কারণেই হেফাজতের অস্তিত্ব আজ হুমকির মুখে পড়েছে৷”
হেফাজতের কমিটি বিলুপ্ত করাকে আওয়ামী লীগ কীভাবে দেখছে? জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল-আলম হানিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, "তাদের কমিটি বিলুপ্ত হলো কী, হলো না সেটা আমাদের কাছে মূখ্য না৷ এটি একটি সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদী সংগঠন হিসেবে ইতিমধ্যে পরিচিতি পেয়েছে৷ ফলে এই সংগঠনের যেসব নেতা সহিংসতার সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহ অব্যহত থাকবে৷ এসব করে তারা পার পাবে না৷”