হায়নাকে ভয় পায় না ইথিওপীয়রা
হায়না শিকারি জীব; তাদের কামড় নাকি বাঘ-সিংহের চেয়েও বেশি জোরালো৷ ইথিওপিয়ার হারার শহরে মানুষজন বুনো হায়নার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছেন৷
শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান
আব্বাস ইউসুফ নগর প্রাকারের বাইরে হায়নাদের খেতে দেন৷ ২৩ বছর বয়সি ইউসুফ হলেন হারার শহরের ‘হায়না মানুষদের’ একজন৷ হারার শহরটি ইথিওপিয়ার উর্বর হাইল্যান্ডস-এ অবস্থিত৷ এখানে মানুষ, জীবজন্তু, শিকারি প্রাণী, সকলেই একসঙ্গে থাকে৷
পবিত্র শহর
হারার-এর প্রাচীন অংশটি গত ৫০০ বছরের বেশি ধরে একটি দুর্গপ্রাকার দিয়ে পরিবৃত৷ ২০০৬ সালে শহরটিকে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ বলে ঘোষণা করা হয়৷ হারার-এর পুরাতন অংশে ৮২টি মসজিদ আছে, যে কারণে শহরটি ইথিওপিয়ার মুসলিমদের কাছে পবিত্র বলে গণ্য হয়৷
প্রাচীন সংস্কার
সুদূর অতীত থেকে এখানে বন্য জন্তুদের খেতে দেওয়ার প্রথা চলে আসছে – হায়নারাও তাদের মধ্যে পড়ে, যদিও তারা মানুষের প্রিয় জীবজন্তুর মধ্যে গণ্য নয়৷ হায়নারা কুটিল স্বভাবের আর নোংরা হয় বলেই অধিকাংশ মানুষের ধারণা৷
কাপুরুষ ও বোকা?
হায়নাদের কাপুরুষ ও বোকা বলে বদনাম আছে বটে, কিন্তু পূর্ব আফ্রিকার মানুষ জানেন যে, হায়নারা অসাধারণ শিকারি – তারা দলে কিংবা একা শিকার করতে পারে৷ বিশেষ করে ইথিওপিয়ার পূর্বাঞ্চলের স্পটেড হায়নারা বিপজ্জনক বলে খ্যাত৷
হায়নার হাসি
‘স্পটেড’ বা ‘লাফিং’ হায়নার নামই এসেছে তার গায়ের বড় বড় ফোঁটা আর অট্টহাসির মতো ডাক থেকে৷ আব্বাস ইউসুফ প্রতি সন্ধ্যায় এই বিপজ্জনক জীবগুলিকে ফেলে দেওয়া মাংসের টুকরো-টাকরা খেতে দেন৷ হায়নাদের নিয়ে কোনো ভয় নেই ইউসুফের – এমনকি তাদের সঙ্গে খেলতেও বাধা নেই৷
মুদ্দোফরাশ
ইউসুফ দিনে শহরের ভিতরের বিভিন্ন কসাইখানা থেকে আবর্জনা সংগ্রহ করে এনে, সন্ধ্যায় তা হায়নাদের খাওয়ান – হারার শহরে যা বহুকালের প্রথা৷ হায়নারা এখানে মুদ্দোফরাশ; তারা ‘জিন’-দেরও খেয়ে ফেলতে পারে, বলে অনেক মানুষের ধারণা৷
হায়নার ওঝা
হারার-এর নগর প্রাকারের বাইরে হায়নারা মুক্ত, কিন্তু আফ্রিকার অপরাপর অঞ্চলে, যেমন নাইজেরিয়ায়, তাদের ধরে নিয়ে পোষা হয়৷ হায়নার ওঝারা তাদের হায়নাদের নিয়ে গ্রাম থেকে গ্রামে ঘোরে, নাচ দেখায় বা জড়িবুটি, স্বপ্নে পাওয়া ওষুধ ইত্যাদি বিক্রি করে৷