1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌হাসতে হাসতে সমাজসেবা

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
১০ এপ্রিল ২০২০

লকডাউনের দিনগুলোয় লোকে যাতে বিষণ্ণ না হয়ে পড়ে, সেজন্য লোককে হাসিখুশি রাখার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন তারা ছ'‌জন৷ আজ তাদের উদ্যোগেই মুখে খাবার উঠছে সোনাগাছির যৌনকর্মীদের৷

https://p.dw.com/p/3al6A
ছবি: Getty Images

লকডাউন৷ গণ পরিবহণ বন্ধ৷ লোকে নেহাত জরুরি দরকার না হলে, বা জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত না হলে ঘরের বাইরে পা দিচ্ছেন না৷ যৌনপল্লীতে যাওয়ার তো প্রশ্নই নেই৷ ফলে রোজগার একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়ে মহা সমস্যায় পড়েছিলেন কলকাতার সোনাগাছি এবং অন্যান্য ‘‌রেড লাইট'‌এলাকার যৌনকর্মীরা৷ তারা যেহেতু আক্ষরিক অর্থেই দিনমজুর, দিন আনেন, দিন খান, ওঁদের কারোরই তেমন জমানো পুঁজি নেই৷ ওদিকে দোকানপাটও প্রায় সব বন্ধ৷ এই অবস্থায় যে যৌনকর্মীরা অন্য কোথাও গিয়ে আশ্রয় নিতে পেরেছেন, তারা সবাই চলে গেছেন৷ কিন্তু যাদের যাওয়ার কোনো জায়গা নেই, বা সুযোগ ছিল না, সেই যৌনকর্মীরা রীতিমতো অন্নকষ্টে পড়েছিলেন৷

সোনাগাছি এলাকার যৌনকর্মীদের সুখদুঃখের সাথী যে সংগঠন, যেই দূর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতির পরিচালক ডা. স্মরজিৎ জানা কাতর আবেদন রেখেছিলেন, যদি কেউ কোনোভাবে সাহায্য করতে পারেন৷ সেটি দেখে বিচলিত হন পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম সচিব অর্জুন সেনগুপ্ত৷ খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, সত্যিই চরম দুর্দশার মধ্যে আছেন যৌনকর্মীরা৷ তখন তিনি পরিচিতদের মধ্যে সাহায্য খুঁজতে উদ্যোগী হন৷

‘‘‌কিন্তু অধিকাংশ লোকই (‌যেটুকু আমি শুনেছি)‌, যেহেতু সোনাগাছি, ব্যাপারটা নিয়ে নাক সিঁটকায়!‌''‌ডয়চে ভেলেকে বললেন অর্জুনবাবুর ছেলে, অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত নির্মাল্য সেনগুপ্ত৷ এরপরই এক অভিনব উদ্যোগ নেন নির্মাল্য এবং তার পাঁচ বন্ধু৷ সোশাল মিডিয়ায় তাদের একটা গোষ্ঠী আছে, যেখানে ঠিক হয়েছিল, লোকে যাতে লক ডাউনের দিনগুলোতে অবসাদগ্রস্ত না হয়ে পড়েন, সেজন্য হাসি-মজা করে, জোকস্‌ শেয়ার করে ওরা সবাইকে হাসিখুশি রাখবেন৷ সেখানেই ওরা আবেদন জানান, সোনাগাছির যৌনকর্মীদের জন্য অর্থসাহায্য করার৷ ‘‘‌প্রথমদিন আমরা দিয়ে এসেছি আড়াইশ' কেজি চাল, দুশ' কেজি আলু, স্যানিটারি ন্যাপকিন কেনা হয়েছে আড়াইশ' প্যাকেট৷ তার সাথে মাস্ক কেনা হয়েছে আটশ' পিসের মতো, যার মধ্যে ২০০ পিস দুর্বার সমিতিকে দেওয়া হয়েছে,''‌ জানালেন নির্মাল্য৷

পশ্চিমবঙ্গ সরকার রেশন দোকান থেকে বিনামূল্যে চাল, গম, আলু বিলি করার কাজ শুরু করেছে গত কয়েকদিন ধরে৷ সেই খাদ্য-সাহায্য যাতে যৌনকর্মীরাও পায়, সেই জন্যে তদ্বির করেছিল দুর্বার৷ কিন্তু সংগঠনের পরিচালক ডা. স্মরজিৎ জানা ডয়চে ভেলেকে জানাচ্ছেন, ‘‘‌সরকার বলেছিল, দেবে৷ মানে, যাদের রেশন কার্ড আছে, তারা শুধু পাবে৷ কিন্তু এখানে তো অধিকাংশের রেশন কার্ড নেই৷'' ‌কেন রেশন কার্ড নেই, তারও কারণ ব্যাখ্যা করলেন ডা. জানা৷ গণবণ্টন আইন অনুযায়ী, রেশন কার্ড পেতে গেলে স্থায়ী ঠিকানা দরকার হয়৷ সোনাগাছির প্রায় ১০০ শতাংশ যৌনকর্মীই সেখানে ভাড়াটে৷ তারা ভাড়া দেন, কিন্তু রসিদ পান না৷ কারণ, ভারতীয় আইন অনুযায়ী যৌন পেশা যেহেতু বৈধ পেশা নয়, যৌনকর্মীদের আইনত বাড়ি ভাড়া দেওয়া যায় না৷

ফলে এখন নির্মাল্য, বা তার বন্ধুরা, এবং অর্জুন সেনগুপ্তর মতো কিছু শুভবুদ্ধির, সহানুভূতিশীল মানুষই একমাত্র ভরসা যৌনকর্মীদের৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান