হাফিজ সাঈদের সাড়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০লস্কর-ই-তৈয়বার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, জমিয়ত-উদ-দাওয়ার প্রধান এবং জাতি সংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক জঙ্গি হাফিজ সাঈদকে সাড়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল পাকিস্তানি আদালত৷ হাফিজের আইনজীবী ইমরান গিল জানিয়েছেন, ''দুইটি আলাদা মামলায় তার সাড়ে পঁচ বছর করে সাজা হয়েছে। তবে দুইটি সাজাই এক সঙ্গে চলবে। তাই আসলে তাকে সাড়ে পাঁচ বছর জেলে থাকতে হবে। হাফিজ নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা এবং বেআইনি সম্পত্তির মালিক বলে আদালত এই শাস্তি দিয়েছে৷'' গিলের দাবি, ''এই মামলার মধ্যে কিছুই ছিল না। কিন্তু আন্তর্জাতিক সংগঠন এফএটিএফ-এর চাপে তাকে এই শাস্তি দেওয়া হল৷'' পাকিস্তানের সংবাদপত্র ডন জানিয়েছে, দুটি মামলায় হাফিজকে ১৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে৷
এফএটিএফ মানে ফিনান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্ক ফোর্স৷ বিশ্বে কোথায় কারা সন্ত্রাসে মদত দিতে অর্থ দিচ্ছে, তার দিকে নজর রাখে এই সংগঠন৷ তারা পাকিস্তানকে বলেছিল, হয় সন্ত্রাসে মদত দেওয়ার অভিযোগ থেকে তাদের মুক্ত হতে হবে, না হলে এফএটিএফ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে৷ এই সংগঠন যদি কাউকে কালো তালিকাভুক্ত করে দেয়, তা হলে তাদের আন্তর্জাতিক অর্থ সাহায্য ও ঋণ পাওয়া খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়৷ আর পাকিস্তানের অর্থনীতির একটি অংশ দাঁড়িয়ে আছে, বৈদেশিক ঋণ ও অর্থ সাহায্যের ওপর৷ এ দিকে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে এফএটিএফের বৈঠক আসন্ন৷ ফলে হাফিজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার বিপুল চাপ পাকিস্তানের ওপর ছিল বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা৷
মুম্বইয়ে ২৬/১১ সূত্রে ভারত দীর্ধদিন ধরে পাকিস্তানের কাছে দাবি করছে, হাফিজ সাঈদকে দিল্লির হাতে বিচারের জন্য তুলে দিতে হবে৷ মনমোহন সিং এবং নরেন্দ্র মোদীর জমানায় একাধিকবার পাকিস্তানের হাতে জঙ্গিদের তালিকা ও ভারতে তাদের কার্যকলাপের প্রমাণ দিয়েছে তারা৷নয়াদিল্লির দাবি, ওই জঙ্গিদের বিচারের জন্য ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে৷ বিশেষ করে হাফিজকে, যে মুম্বই-হত্যাকাণ্ডের প্রধান পরিকল্পনাকার ছিল৷
পাকিস্তানের আদালত তাকে সাজা দেওয়ার পর ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও বিবৃতি দেওয়া হয়নি। তবে মন্ত্রকের সূত্র জানিয়েছে, ''হাফিজ সাঈদের শাস্তির বিষয়টা আমরা সংবাদমাধ্যম থেকে জেনেছি৷ পাকিস্তানকে সন্ত্রাসে সমর্থন বন্ধ করতে হবে। এফএটিএফের বৈঠকের আগে এই পাকিস্তান এই রায় দিতে বাধ্য হল৷ শেষ পর্যন্ত এই রায় কতটা কার্যকর হয় তা দেখতে হবে৷ সেই সঙ্গে এটাও দেখতে হবে, পাকিস্তান বাকি জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়৷ বিশেষ করে মুম্বই, পঠানকোট হামলার সঙ্গে জড়িতদের কড়া শাস্তি দিতে হবে৷''
প্রবীণ সাংবাদিক সৌম্য বন্দ্যোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''এফএটিএফ তাদের আগের বৈঠকেই পাকিস্তানকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছিল, তারা যে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে, তার প্রমাণ দেখাতে হবে৷ না হলে তাদের কালো তালিকাভুক্ত করা হবে৷ তারপর হাফিজ সাঈদের কারাদণ্ডের খবর এল৷ আগেও তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে, মুক্তিও দেওয়া হয়েছে৷ এ বারে পাকিস্তানকেই প্রমণ করতে হবে, হাফিজকে এই শাস্তি নিছক চাপের কাছে নতিস্বীকার করে দেওয়া হয়নি৷ তারা সন্ত্রাস ও সন্ত্রাসবাদীদের বিরুদ্ধে সত্যিই ব্যবস্থা নিচ্ছে৷''
ইরান এবং দক্ষিণ কোরিয়া ইতিমধ্যে এফএটিএফের কালো তালিকায় আছে। পাকিস্তানকে তারা রেখেছ গ্রে বা ধুষর তালিকায়৷ এর পরের ধাপই হল কালো তালিকাভুক্ত করা৷ পাকিস্তান এফএটিএফকে জানিয়েছিল, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে তারা কী পদক্ষেপ নিতে চায়৷ এ বার সংগঠনটি বিচার করে দেখবে, পাকিস্তান প্রতিশ্রুতি পূরণ করছে কি না৷
জিএইচ/এসজি(এএফপি, এএনআই)