বিচার পান না ক্ষতিগ্রস্তরা
২০ সেপ্টেম্বর ২০১৩কাদের মোল্লার ফাঁসির রায়ের বিরুদ্ধে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা বুধ ও বৃহস্পতিবারের টানা ৪৮ ঘণ্টার হরতালে তিনজন নিহত হয়েছেন৷ আহত হয়েছেন অনেকে৷ আহতদের মধ্যে অগ্নিদগ্ধ হছেন তিনজন ড্রাইভার৷ আর গুলিবিদ্ধ হয়েছেন এক পুলিশ সদস্য৷ তাঁদের পরিবারের হাহাকারের ছবি বড় করে ছাপা হয়েছে পত্রিকায়, প্রচার করা হয়েছে সব সংবাদমাধ্যমে৷
গাজীপুরের বাস চালক নজরুল ইসলামের শরীরের ৫০ ভাগের বেশি পুড়ে গেছে৷ বৃহস্পতিবার তাঁর বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়ার পর, যাত্রীরা রক্ষা পেলেও তিনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেননি৷ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ‘বার্ন ইউনিট'-এ তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে৷ সেখানে তাঁর স্ত্রী এবং সন্তানদের আহাজারিতে যে কেউ নিজের চোখের জল ফেলবেন৷ নজরুল ইসলামের স্ত্রী শুধু একটি কথাই বলছেন, ‘‘তাঁর স্বামীর সঙ্গে তাঁদের পুরো সংসারই পুড়ে গেছে''৷ একইভাবে শেরপুরে পেট্রোল বোমায় পুড়েছেন ট্রাক চালক শামসুল হক এবং তাঁর সহকারী মো. শাহীন মিয়ার সংসার৷
বুধবার নোয়াখালির কোম্পানিগঞ্জে অটোরিকশা চালক আবু নাসের নিহত হন পিকেটারদের ধাওয়া খেয়ে৷ পিকেটারদের ধাওয়ায় তাঁর অটোরিকশাটি উল্টে গেলে তিনি নিহত হন৷ জানা গেছে, তিনি তাঁর পরিবারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন৷ তাই তাঁর মৃত্যুতে পরিবারটি একেবারে পথে বসে গেছে৷
এরকম করুণ কাহিনি প্রতিটি হরতালই ‘‘উপহার'' দেয়৷ কিন্তু সে পর্যন্তই৷ তারপর আর কোনো খোঁজ থাকে না৷ বিচার হয় না৷ এমনকি পাওয়া যায় না কোনো ক্ষতিপূরণ৷ রাজনৈতিক দলগুলো দায়িত্ব নেয় না৷ দায়িত্ব নেয় না পুলিশ প্রশাসনও৷
ঢাকা মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচিতে প্রাণহানিসহ নানা ঘটনায় মামলা হয়৷ তবে মামলার তদন্ত করতে গিয়ে বিপাকে পড়ে পুলিশ৷ কারণ, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সাক্ষী পাওয়া যায় না৷ আসামিদের চিহ্নিত করাও কঠিন হয়ে পড়ে৷ কারণ, যারা রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অপরাধ করে তারা কৌশলে করে৷ তাদের নাম-পরিচয় জানা যায় না৷ আর যাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত হন, তাঁরাও তাঁদের চেনেন না৷ তাই মামলাগুলোর তদন্ত ঠিকমতো এগোয় না৷ মাসুদুর রহমান জানান, দেশের প্রচলিত আইনে এরজন্য ক্ষতিপূরণেরও কোনো ব্যবস্থা নেই৷
সরকার হরতাল আহ্বানকারীদের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ আদায়ের ব্যবস্থা রেখে একটি আইন প্রণয়নের কথা আগে বললেও, এখনও পর্যন্ত তার কোনো উদ্যোগ নেই৷ সংসদের চলতি অধিবেশনে পাশ না হলে এ ধরণের আইন এই সরকারের আমলে আর হচ্ছে না৷ এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, কোনো ক্ষয়-ক্ষতি বা প্রানহাণির প্রাথমিক দায়-দায়িত্ব হরতাল আহ্বানকারীদের৷ তবে সেটা প্রমাণ করেই ক্ষতিপূরণ আদায় করতে হবে৷ তিনি মনে করেন, ক্ষতিপূরণ আদায়ের আইনটি প্রণয়ন করা উচিত৷
অবশ্য তিনি বলেন, সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হলো সরকারের৷ নাগরিকদের জীবন এবং সম্পদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা সরকারকেই দিতে হবে৷ তাই রাজনৈতিক কর্মসূচিতে জীবন এবং সম্পদের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তা যেমন নিশ্চিত করতে হবে, তেমনি জীবন ও সম্পদের ক্ষতি হলে তার বিচার, অপরাধীদের শাস্তি এবং ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে হবে সরকারকে৷ রেজাউল করিম মনে করেন, এ নিয়ে রাজনীতি হয়, কিন্তু কাজ হয় না৷ তাই সাধারণ মানুষ কোনো প্রতিকার পান না৷