সৌদি এক তরুণীর দিনলিপি
সৌদি আরবে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে৷ সেই হাওয়া নারীদের জন্য একের পর এক সুযোগ খুলে যাচ্ছে৷ সেটি উপভোগ করছেন আমিরাহ আল-তুর্কিস্তানি৷
হাসির পাত্র
২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বস্টনে পড়ালেখা শেষে সৌদি তরুণী আমিরাহ আল-তুর্কিস্তানি যখন তাঁর প্রিয় সাইকেলটি নিয়ে দেশে ফিরতে চেয়েছিলেন, তখন তাঁর বন্ধুবান্ধব তাঁকে নিয়ে হাসিতামাশা করেছিল৷ বলেছিল, ‘‘জেদ্দায় সাইকেল নিয়ে গিয়ে কী করবে? দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখবে?’’
পরিবর্তন
সৌদি আরবে এখন যে পরিবর্তনের হাওয়া বইছে, তা কি আমিরাহ ২০১৫ সালে অনুমান করতে পেরেছিলেন? কারণ, তিনবছর পর এখন তিনি একা কিংবা স্বামী-সন্তানদের সঙ্গে জেদ্দার সাগর সৈকতে সাইকেল চালাতে পারছেন৷ ছবিতে তাঁকে স্বামী ও সন্তানের সঙ্গে দেখা যাচ্ছে৷
পোশাক
সৌদি নারীদের বাইরে পরার পোশাক বলতে এখনও ‘আবায়া’৷ আমিরাহও সেটি পরেন৷ তবে আবায়া সাধারণত কালো রংয়ের হলেও আমিরাহ বিভিন্ন রংয়ের আবায়া পরেন৷ এবং সেগুলো তিনি নিজেই ডিজাইন করেন৷ ছবিতে আমিরাহকে বাস্কেটবল খেলতে দেখা যাচ্ছে৷
শিক্ষকতা
জেদ্দা ইন্টারন্যাশনাল কলেজে গ্রাফিক ডিজাইনের শিক্ষক তিনি৷ পাশাপাশি একটি ব্যবসাও করছেন৷ নিজের বাড়িতে বসেই তিনি আবায়াসহ বিভিন্ন পণ্যের নকশা করেন এবং সেগুলো বিক্রি করেন৷
নতুন প্রজন্মের অংশ
ইংরেজি, আরবি ও তুর্কি ভাষায় পারদর্শী আমিরাহ ব্যালেও জানেন৷ সৌদি আরবের তরুণ প্রজন্মের অংশ আমিরাহ অবসর সময়ে যোগব্যায়াম করেন আর ক্রসফিট স্টুডিওতে প্রশিক্ষণ নেন৷
জেদ্দা আগের মতো নেই
আমিরাহ বলছেন, ‘‘পাঁচ, ছয় বছর আগের জেদ্দার চেয়ে এখনকার জেদ্দায় অনেক পরিবর্তন এসেছে৷ পোশাক পরায় বিধিনিষেধ সহজ করা হয়েছে, নারীরাও এখন পুরুষদের সমান কাজের সুযোগ পাচ্ছে৷’’ সেলফি তুলছেন আমিরাহ৷
আগের কথা
বছর কয়েক আগেও সৌদি আরব চরম রক্ষণশীলতার চাদরে ঢাকা ছিল৷ নাগরিকরা ঠিক পোশাক পরেছেন কিনা, তা রাস্তায় দাঁড়িয়ে নজরে রাখতো ধর্মীয় পুলিশ৷ গান ও অ্যালকোহলের উপর নিষেধাজ্ঞা ছিল৷ নামাজের সময় দোকান বন্ধ রাখা হয়েছে কিনা, অনাত্মীয় নারী ও পুরুষ একসঙ্গে মিশছে কিনা সে ব্যাপারে খেয়াল রাখা হতো৷
গাড়ি চালানোর অনুমতি
আগামী গ্রীষ্ম থেকে সৌদি নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পাচ্ছেন৷ আমিরাহ সেই সুযোগ গ্রহণের জন্য মুখিয়ে আছেন৷ ‘‘এটা এমন না যে, আমি গাড়ি চালাতে চাই, তাই গাড়ি চালাবো৷ এটা আসলে প্রয়োজন,’’ বলেন দুই সন্তানের জননী আমিরাহ৷
সবাই সুযোগ পাচ্ছে না
আমিরাহ মনে করেন, সব সৌদি নারী হয়ত তাঁর মতো সৌভাগ্যবান নন৷ কারণ, তাঁর মনে হয়, নিয়মে পরিবর্তন এলেও পরিবার ও স্বামীর মানসিকতার কারণে হয়ত অনেক নারীর পক্ষে সেই সুযোগ গ্রহণ করা সম্ভব হচ্ছে না৷