1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সোনাগাছিতে প্রতিশ্রুতিই সার, কথা রাখেন না নেতারা

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২৭ মার্চ ২০২১

বিধানসভা নির্বাচন উপলক্ষে প্রতিশ্রুতির বন্যায় ভাসছে মানুষ৷ সেই সঙ্গে উঠে আসছে নানা অভাব আর অভিযোগ৷ সোনাগাছির যৌনকর্মীদের রয়েছে না পাওয়ার এমন অভিযোগ৷

https://p.dw.com/p/3rGr6
ছবি: Payel Samanta/DW

উত্তর কলকাতার সোনাগাছিতে যৌনকর্মীদের সংখ্যা আর আগের মতো নেই৷ পনেরো হাজার থেকে কমে দাঁড়িয়েছে সাত হাজারে৷ সমস্যাবহুল সোনাগাছির সহযোগীতায় কিছু স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা ও অরাজনৈতিক দলের সাক্ষাৎ মেলে৷ কিন্তু রাজনৈতিক দলগুলো কি তাদের দায়িত্ব পালন করে? অভিযোগ আছে, রাজনৈতিক দিক থেকে সমর্থন পায় না বলেই যৌনকর্মীরা আইনের স্বীকৃতি পাননি৷

সমস্যার সমাধান মেলে?

ফি বছর চাঁদার নাম করে জুলুম সহ্য করতে হয় নিষিদ্ধপল্লীর কর্মীদের৷ ইমমরাল ট্রাফিকিং প্রিভেনশন অ্যাক্টের (ITPA) দরুণ এখনও পুলিশি হেনস্তার স্বীকার হতে হয় তাদের৷ অধিকার ও সম্মানের লড়াইয়ে সামিল যৌনকর্মীদের সংগঠন ‘দুর্বার মহিলা সমন্বয় সমিতি'র সেক্রেটারি কাজল বসু বলেন, "এই ধারাগুলো বদলাতে কেউ একটা বাক্যও বলেন না৷ আমরা অ্যান্টি ট্রাফিকিং নিয়ে কাজ করি৷ বোর্ডের স্বীকৃতি পেলে কাজটা আরও ভাল করতে পারি৷ শ্রমদপ্তরে নামটুকু তুলতেও কেউ এগিয়ে আসেন না৷”

সংগঠনের প্রেসিডেন্ট বিশাখা লস্কর বলেন, ‘‘প্রত্যেক দল যা প্রতিশ্রুতি দেয়, সবই মিথ্যা৷ আমরা কোনো সমস্যা নিয়ে গেলে সেটা নেতারা গুরুত্ব দিয়ে দেখেন না৷ বরং তাদের দলের লোকেরা দোষ করলেও ছাড়া পায়৷”

‘পেশার স্বীকৃতি দিতে কোনো রাজনৈতিক দলই এগিয়ে আসে না’

ভোটের আগে সব দলের কাছেই যৌনকর্মীদের সংগঠন তাঁদের দাবিদাওয়া নিয়ে যান৷ মূলত পেশার স্বীকৃতি পাওয়াই বড় দাবি তাদের৷ যৌনকর্মীর সন্তানদের সংগঠন ‘আমরা পদাতিক'-এর সভাপতি রতন দোলুইয়ের মতে, ‘‘বর্তমান সরকারের কাছ থেকে টাকা-পয়সা পেলেও নৈতিক সাপোর্ট কিছু পাইনি৷ শ্রমের মর্যাদা বা পেশার স্বীকৃতি দিতে কোনো রাজনৈতিক দলই এগিয়ে আসে না৷’’ 

বিশাখা বলেন, "একটা সময় ভিড় বাড়ানোর জন্য আমাদের মিছিলে নিয়ে যাওয়া হত৷ রাজনৈতিক দলগুলো ভোটের কাজে ব্যবহার করে৷ তারপর ভোট মিটে গেলে ছুঁড়ে ফেলে দেয়৷’’

ভোটার কার্ডে সমস্যা

অনেক যৌনকর্মীরই নেই ভোটার কার্ড৷ রাজনৈতিক কর্তারা সে নিয়ে উদাসীন থাকতেই পছন্দ করেন৷ কিন্তু এই ভোটের দিকে নেতাদের নজর নেই কেন? রতন দোলুই বলেন, ‘‘স্বার্থসিদ্ধির জন্য রাজনৈতিক দলগুলোই কাজ করতে ব্যস্ত৷ আর যৌনকর্মীদের কোনো নির্দিষ্ট এলাকা নেই৷ আজ এখানে, কাল ওখানে৷ তাই তাদের ভোট নিয়ে নেতারা মাথা ঘামান না৷’’

নারী অধিকার আন্দোলনের কর্মী অধ্যাপিকা শাশ্বতী ঘোষ বলেন, ‘‘এখানে ভোটার কার্ড অনেকেরই নেই৷ এটা ভাবার কোনো কারণ নেই যে ওঁরা শুধু যৌনকর্মী বলেই প্রশাসন বঞ্চনা করছে৷” 

তবে নির্বাচন কমিশনের উদ্যোগে ভোটার কার্ড পেয়েছেন এলাকার অনেকেই৷ গতকালই ১৫০-২০০ জনের মতো ভোটার কার্ড হাতে পেয়েছেন বলে জানান এক বাসিন্দা৷ রেশন কার্ড করানোর জন্যও কোনো রাজনৈতিক সাহায্য পাননি তাঁরা৷         

‘ভিড় বাড়ানোর জন্য আমাদের মিছিলে নিয়ে যাওয়া হত’

বিধায়কের কাজে খুশি?

শ্যামপুকুর থানার জোড়াবাগান, রামবাগান, রবীন্দ্রসরণী, শেঠবাগান সব এলাকারই বিধায়ক ডঃ শশী পাঁজা বর্তমানে নারী ও শিশুকল্যাণ দপ্তরের মন্ত্রী৷ কিন্তু সোনাগাছির বাসিন্দাদের অভিযোগ, যৌনকর্মীদের সন্তানদের জীবনযাপনের মানোন্নয়নের জন্য যে সাহায্য দরকার সেটাও পাওয়া যায় না৷ তবে মাঝে মাঝে বিধায়ক তহবিল থেকে স্পোর্টস বা এ ধরনের কিছু অনুদান পাওয়া যায়৷ কিন্তু সোনাগাছির পরিবেশে ছোট ছোট মেয়েদের ভবিষৎ গড়তে যে আন্তরিক সাহায্য দরকার, তা এখনও অধরা৷ কাজল বসু বলেন, ‘‘শশী পাঁজা বা কাউন্সিলর কেউই কিছুই করেন না৷ পুজোর সময় শুধু বিধায়ক একবার এসে একটা শাড়ি আর একটু চাল দিয়েছিলেন৷ লকডাউনেও তিনি কিছুই করেননি৷” তাই ভোটবাক্সে গণতান্ত্রিক অধিকারে ‘নোটা'ই ভরসা? বিশাখা বলেন, "যে আমাদের স্বার্থ দেখবে, তাকেই ভোট দেব৷ তেমন না হলে নোটাই বেছে নেব৷’’  

শঙ্কা ও ভয়

সকলেই ভোট দিতে চাইলেও ভোট দেওয়ার পরিবেশ নেই বলেই জানালেন একাধিক যৌনকর্মী৷ ভোটের আগে রাতের অন্ধকারে হুমকি বা ঘরবাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়৷ এমন ভয়ের পরিবেশে অনেকেই নতি স্বীকার করে ভোট দিতে যান না৷ আবার তারা ভোট দিতে যাওয়ার আগে তাদের ভোট পড়ে যায় বাক্সে, এমন নজিরও মেলে৷

ভোট মিটলেও কি শান্তি আছে? নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এখন অনেকেই শঙ্কিত৷ শিলচরে প্রায় দু'শ যৌনকর্মী নথি দেখাতে পারেননি৷ তাদের ঠাঁই হয়েছে আটক শিবিরে৷ তাই বিপদের আশঙ্কা, ভোট মিটলে নাগরিকত্ব আইন চালু হবে না তো?