সোশ্যাল মিডিয়া আসক্তিতে ভাঙছে পারিবারিক বন্ধন
৩০ আগস্ট ২০১৯এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিদ্যা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দীন কাউসার বিল্পব৷
ডয়চে ভেলে : সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রতি মানুষের কেন এত আসক্তি?
অধ্যাপক ডা. সালাউদ্দীন কাউসার বিল্পব: এই আসক্তির অনেক রকম কারণ৷ মানুষ বিভিন্নভাবে কমিউনিকেশনকে একটা গুরুত্বপূর্ণ টুল হিসেবে ব্যবহার করে৷ এক জায়গায় বসে বহু পুরনো বা অনেক মানুষের সঙ্গে একসাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়৷ অল্প খরচে, অল্প পরিশ্রমে এটা সম্ভব হয়৷ আমাদের দেশে এটার উপযোগিতা, আপনি যদি ফাস্ট ওয়ার্ল্ডের সঙ্গে তুলনা করেন তাহলে দেখবেন তাদের থেকে আমরা অনেক আলাদা৷ আমরা ব্যক্তিগত জীবনের সবকিছু এখানে দেই৷ এটা কিন্তু বাইরের পৃথিবীতে পাবেন না৷
সামাজিক মাধ্যমে ব্যক্তি আক্রমণের এত প্রবণতা কেন?
এটা আমাদের দেশে বিতর্কিত বিষয়৷ আমাদের দেশে সুখ দুঃখে একজন অন্যজনের পাশে দাঁড়াই৷ ব্যক্তি জীবনেও আমরা এটা করি৷ একইভাবে আমরা একজন অন্যজনের বিরুদ্ধে দ্রুত ক্ষোভ প্রকাশ করে ফেলি৷ এটা আমাদের রাজনৈতিক, সামাজিক বা পারিবারিক যে বিশ্বাস তার প্রতিফলন৷ শুধু সামাজিক মাধ্যমে যে এই আক্রমণ তা নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও এটা করা হচ্ছে৷
যে কোনো বিষয় সঠিকভাবে বিশ্লেষণ না করেই মত দেয়া হচ্ছে, এর প্রভাব কী?
এটা একটা দুঃখজনক ঘটনা৷ দেখেন, কেউ যদি একটা স্ট্যাটাস দেয় তাহলে অনেকেই সেটা পুরো না পড়ে মন্তব্য করছেন৷ ভেতরের গল্পটা হয়ত অন্য৷ আসলে এখন পড়ার বা বিশ্লেষণ করার ধৈর্য আমাদের নেই৷ এখন কোনো কিছুর ভেতরে ঢুকে তার যৌক্তিকতা না বুঝেই তারা বলে দিচ্ছেন৷ এটার ইমপ্যাক্ট তো খারাপ৷ অনেক সময়ই উল্টোটা ঘটে৷ আসলে কিছু একটা বলার আগে যৌক্তিকতা বুঝে বলা উচিৎ৷
কোনো ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেই ‘বিচার' করে ফেলা হচ্ছে?এতে করে মূল ঘটনা ভিন্নখাতে প্রভাবিত হয় কি-না?
কখনও কখনও হয়৷ সবসময় যে হয় তা না৷ তবে সম্প্রতি এমন ঘটনা তো আমরা দেখেছি৷ আবার অনেক সময় প্রোপাগান্ডা ছড়িয়েও মূল ঘটনাকে ভিন্নখাতে নেওয়া হয়৷ এতে অনেক সময় না বুঝেই অনেকে ঝাপিয়ে পড়ে, তারা তখন ভিকটিম হয়ে যায়৷
সামাজিক মাধ্যমে আসার পর আবার অনেক ঘটনার তো বিচারও হচ্ছে?
অবশ্যই৷ সামাজিক মাধ্যমে যেমন আগে কোনো ঘটনার বিচার করে ফেলে একটা ভীতিকর অবস্থার তৈরি করা হচ্ছে, তেমনি এর পজিটিভ দিকও আমরা দেখি৷ যে ঘটনাগুলো একটু জাস্টিফাই করে সামাজিক মাধ্যমে আসে সেগুলোর কিন্তু ভালো মূল্যায়ন হয়৷ সেই ঘটনাগুলোর বিচারও কিন্তু হচ্ছে৷
সামাজিক মাধ্যমে আগেই বিচার করে ফেলার এই প্রবণতা থেকে কিভাবে বেরিয়ে আসা যায়?
এটা অত্যন্ত কঠিন বিষয়৷ আইন করে সব করা সম্ভব নয়৷ ব্যক্তি সচেতনতা এখানে খুবই গুরুত্বপূর্ণ৷ উন্নত দেশে আমাদের যেসব বন্ধু থাকে তারা মাঝেমধ্যেই বলেন, ব্যক্তি জীবনের এত কথা সামাজিক মাধ্যমে দেওয়ার দরকার কি? ওরা কিন্তু অনেক চিন্তা করেই কাজটা করে৷ তারা এখানে কতটা সময় দিচ্ছে তা খেয়াল করে৷ কিন্তু আমরা এটা খেয়াল করি না৷ এখানে আসলে আমরা কি করছি, নিজেরাও জানি না৷
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তরুণ প্রজন্ম কতটা বা কিভাবে প্রভাবিত হচ্ছে?
বাইরের বিশ্বের কথা আমি অতটা বলতে পারব না৷ তবে অবশ্যই আমাদের দেশে তরুণরা খুবই প্রভাবিত৷ এখানে সকাল বিকেল বা রাত নেই হাজার হাজার মানুষ সবসময় একটিভ থাকেন৷ অনেকে রাতের পর রাত ফেসবুক চালায়৷ এর ফলে সকালে তারা স্কুলে বা অফিসে হয়ত ঠিকমতো যেতেই পারছেন না৷ একজন মা আমার কাছে এসেছিলেন৷ তিনি বলছিলেন, তার তিন সন্তানের সবাই মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত৷ পারিবারিক যে আলোচনা বা বন্ধন সেটা থাকছে না৷ প্রতিটি পরিবারেই এখন এই সমস্যা৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷