1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
খেলাধুলাযুক্তরাষ্ট্র

সুপার-বোলের দেশে পাকিস্তানকে সুপার ওভারে হারালো যুক্তরাষ্ট্র

৭ জুন ২০২৪

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের শুরুতেই অঘটন। পাকিস্তানকে হারিয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্র।

https://p.dw.com/p/4gl3X
সুপার ওভারে ম্যাচ জেতার সৌরভ এভাবেই আনন্দ প্রকাশ করলেন।
ম্যাচ জেতার পর যুক্তরাষ্ট্রের সৌরভ নেত্রভালকারের উচ্ছ্বাস। ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images

আমেরিকান ফুটবলের সবচেয়ে জনপ্রিয় দলগুলোর একটি ডালাস কাউবয়জ। বাস্কেটবলের ডালাস ম্যাভেরিকস ও বেজবলের টেক্সাস রেঞ্জার্সও বেশ বিখ্যাত দল। খেলাধুলার এমন সব দলগুলোর ঘাঁটি ডালাসে এবার খোদ যুক্তরাষ্ট্র দলই এমন একটা কাণ্ড ঘটিয়ে ফেললো, যেটা দেখতে খুব বেশি ডালাসবাসী গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে ছিলেন না। নিজেদের প্রথম টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে এসে গতবারের ফাইনালিস্ট পাকিস্তানকেই নখ কামড়ানো এক থ্রিলারে হারিয়ে দিলো যুক্তরাষ্ট্র। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দেখলো প্রথম অঘটন । অ্যামেরিকার মানুষ সুপার বোল অনেক দেখেছে, এবার নিজেদের দলকে জিততে দেখলো সুপার ওভারের নাটকে। ২০ ওভারে দুই দলের স্কোর সমতায় থাকার পর যুক্তরাষ্ট্র জিতল এক ওভারের রোমাঞ্চে, পেলো অনেক অনেক দিন মনে রাখার মতো এক জয়।

ক্রিকেট যারা সামান্য অনুসরণ করেন, পাকিস্তান ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটীয় শক্তির তফাৎ তাদের না জানার কারণ নেই। সেই পাকিস্তানের চেয়ে ব্যাটে-বলে এবং ফিল্ডিংয়ে আজ পরিষ্কার এগিয়ে ছিল যুক্তরাষ্ট্র। তাদের শরীরের ভাষা, রান তাড়ার ধরন এবং প্রবল চাপের সময় নিজেদের মাথা ঠাণ্ডা রাখা দেখে মনেই হয়নি অভিবাসীদের নিয়ে জোড়াতালি দিয়ে দাঁড় করানো এই দলের অনেকের জন্য পেশাদার ক্রিকেট খেলা একটা সময় ছিল অনেক বড় স্বপ্ন। 

যুক্তরাষ্ট্র ক্রিকেট দল সেই স্বপ্নের সৌরভটাই ছড়িয়ে দিল ডালাসের গ্র্যান্ড প্রেইরি স্টেডিয়ামে। মাঠে যুক্তরাষ্টের লাল-নীল-সাদা পতাকার চেয়ে পাকিস্তানের সবুজ পতাকাই উড়েছে বেশি, তবে ‘ইউএসএ ইউএসএ' চিৎকারও কম হয়নি। 

যুক্তরাষ্ট্র যে এই ম্যাচে বড় কিছু করতে পারে সেটার আভাস পাওয়া গেছে ম্যাচের দ্বিতীয় ওভারেই। সৌরভ নেত্রভালকার পেশায় একজন কম্পিউটার প্রকৌশলী, এই বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও আছে তার। সেই নেত্রভালকারের বলটাই আজ মোহাম্মদ রিজওয়ানের জন্য হয়ে উঠল দুর্বোধ্য। বাঁহাতি পেসার নেত্রাভালকরের বল রিজওয়ানের ব্যাটে লেগে চলে গেল স্লিপে, ডান দিকে ঝাঁপিয়ে অসাধারণ এক ক্যাচ নিলেন স্টিভেন টেইলর। যে ক্যাচটা মনে করিয়ে দিল ক্রিকেট পুরাণে জায়গা করে নেয়া ২০০৭ বিশ্বকাপে বারমুডার ডোয়াইন লেভেরকের সেই ক্যাচ। টেইলরের ক্যাচটা ক্রিকেটবিশ্ব কতদিন মনে রাখবে বলা কঠিন, তবে এখনো পর্যন্ত টুর্নামেন্টের সেরা ক্যাচ এটাই। 

দারুণ বোলিং ও ফিল্ডিংয়ের এই প্রদর্শনী যুক্তরাষ্ট্র দেখিয়েছে তাদের ইনিংসের পুরোটা সময় জুড়েই। রিজওয়ানের পর উসমান খান নস্থুস কেনজিগেকে উড়িয়ে মারিতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন লং অফে, খানিক পর ফাখার জামানও যখন স্কুপ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন ২৬ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে পাকিস্তান তখন কাঁপছে। 

কাঁপছিলেন তাদের অধিনায়ক বাবর আজমও। বলে-ব্যাটে কিছুতেই কিছু হচ্ছিল না, প্রথম ৯ রান করতে খেলে ফেলেছিলেন ২৩ বল। ওপাশে শাদাব খান জাসদীপ সিংয়ের বলে পর পর দুইটি ছয় মেরে জাগিয়ে তোলেন পাকিস্তানকে। বাবরও শাদাব থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে পেলেন নিজের প্রথম চার, ১০ম ওভারে যা পাকিস্তানের ইনিংসেরই প্রথম। 

অভাবনীয় জয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটাররা বাঁধভাঙা আনন্দে ভাসলেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভাবিত জয় পেলো যুক্তরাষ্ট্র। ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images

শাদাব আর বাবর আগের ক্ষতিটা পুষিয়ে দেওয়ার জন্য এরপর দ্রুত রান তোলায় মনযোগ দিলেন। দুজন আট ওভারে তুলে ফেললেন ৭২ রান। শাদাবই ছিলেন আগ্রাসী, দ্রুত চল্লিশের ঘরে ঢুকে যান তিনটি ছয় ও একটি চারে। যখন মনে হচ্ছিল দুজনের জুটিটা পাকিস্তানকে বড় কিছুর পথে নিয়ে যাচ্ছে, শাদাব কেনজিগের বলে আউট হয়ে গেলেন ২৫ বলে ৪০ রান করে।

এবং শাদাবের আউটের পরের বলেই আউট আজম খানও, কেনজিগে পেলেন আরেকটি উইকেট। বাবর মাত্র জড়তা কাটিয়ে একটু হাত খুলে খেলতে শুরু করেছেন, কিন্তু জসদীপের বলে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন ৪৩ বলে ৪৪ রান করে। তারপরও পাকিস্তানের শেষের জন্য হাত মকশো করতে শুরু করছিলেন ইফতিখার আহমেদ, কিন্তু তিনিও ১৪ বলে ১৮ রান করে এলবিডব্লু হয়ে গেলেন নেত্রভালকারের বলে। তারপরও পাকিস্তানের রান যে ১৫৯ পর্যন্ত পৌঁছেছে সেটার পেছনে বড় অবদান শাহীন শাহ আফ্রিদির ১৬ বলে ২৩ রানের ইনিংসের। 

ডালাসের উইকেটে ১৫৯ খুব বেশি না হলেও খুব কমও ছিল না। বিশেষ করে পাকিস্তানের এমন পেস অ্যাটাকের জন্য রানটা ছিল ডিফেন্ড করার মতোই। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র শুরুটা করলো ম্যাচের পরিস্থিতি অনুযায়ী বেশ ভালো, ৩৫ রান চলে এলো ৫ ওভারের মধ্যেই। উইকেটের জন্য হন্যে হয়ে থাকা পাকিস্তানকে অবশেষে সেটা এনে দিলেন নাসিম শাহ, স্টিভেন টেলরকে ফেরালেন ১২ রানে।

তবে মোনাঙ্ক প্যাটেল দেখালেন কেন তিনি এই দলের অধিনায়ক। আন্দ্রিয়েস গউসকে নিয়ে গড়ে তুললেন দারুণ এক জুটি। খুব বেশি উচ্চাভিলাষী শট না খেলেই দুজনের জুটিতে রান উঠতে থাকল তরতর করে। শাদাবকে সীমানাছাড়া করে গউস পেলেন তাদের ইনিংসের প্রথম ছয়, পরে ইফতিখারের পর পর দুই বলে চার মারলেন মোনাঙ্ক। ১২ ওভারে ৯৪ রান তুলে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিসীমায় উঁকি দিচ্ছে অসাধারণ এক জয়। 

ছয় মারছেন শাদাব খান।
শাদাব খান দলকে জেতাতে পারলেন না। ছবি: Andrew Caballero-Reynolds/AFP/Getty Images

কিন্তু এরপর ম্যাচটা দুলতে থাকল পেন্ডুলামের মতো। ১৪তম ওভারে গউসকে ৩৫ রানে ফিরিয়ে হারিস রউফ এনে দিলেন পাকিস্তানের জন্য দরকারি এক ব্রেকথ্রু। মোনাঙ্ক ছিলেন তখনো, ৩৭ বলে এর মধ্যে পেয়ে গেছেন দারুণ এক ফিফটি। কিন্তু পরের ওভারে তিনি ফিরে গেলেন আমিরের বলে। 

তারপরও সাত উইকেট হাতে রেখে  ৩০ বলে ৪৫ রানের সমীকরণ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য ভালোমতোই সম্ভব ছিল। কিন্তু আমির আর নাসিমরা দারুণ বল করে সেই কাজটা কঠিন করে তুললেন। শেষ ২ ওভারে তাই ২১ রানে চলে গেল সমীকরণ, শেষ ওভারে দরকার হলো ১৫। 

হ্যারিস রউফের শেষ ওভারে চতুর্থ বলে ছয় মেরে আবার ম্যাচটা যুক্তরাষ্ট্রের দিকে নিয়ে এলেন আগের ম্যাচে তাদের নায়ক অ্যারন জোন্স। শেষ বলে ছয় মারলে জয়, আর চার মারলে সুপার ওভার। নীতিশ কুমার মারলেন চারই, ম্যাচ নিয়ে গেলেন সুপার ওভারে। 

মোহাম্মদ আমিরের করা সুপার ওভারটাও ছিল পাকিস্তানের জন্য বিভীষিকার। একের পর এক ওয়াইড করে গেলেন আমির, কোনো ছয় না মেরেও যুক্তরাষ্ট্র তুলে ফেলল ১৮ রান। সেই রান তাড়া করে পাকিস্তান করতে পারলো মাত্র ১৩ রান। শুরুর মতো শেষটাও রাঙালেন নেত্রভালকার, অসাধারণ এক সুপার ওভারে নায়ক হয়ে দলকে এনে দিলেন জয়। যে জয়টা হয়তো জাগিয়ে তুলতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রিকেটকেই!