1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা

২৬ এপ্রিল ২০২৩

সুদানে আধা সামরিক বাহিনী আরএসএফের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সংঘর্ষের মধ্যে রাজধানী খার্তুমে হামলার শিকার হয়েছে বাংলাদেশ দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসভবন৷

https://p.dw.com/p/4QYoh
ছবি: Etat-major des armees/REUTERS

সুদানের বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে বলে জানান সেখানকার বাংলাদেশ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স তারেক আহমেদ৷

তিনি বলেন, 'আমাদের কর্মীরা এখন পর্যন্ত দূতাবাস প্রাঙ্গণে প্রবেশ করতে পারেননি৷'

তিনি আরও বলেন, 'যদিও কিছুই চূড়ান্ত নয়, আমরা আশা করছি যে এই মাসের মধ্যে বা আগামী মাসের প্রথম দিকে বাংলাদেশিদের সরিয়ে নেওয়ার কাজ শেষ হবে। প্রবাসীদের তথ্য সংগ্রহ করছি৷'

এক প্রশ্নের জবাবে তারেক আহমেদ বলেন, 'পশ্চিমের দেশগুলো দূতাবাস সরিয়ে নিলেও ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও বাংলাদেশসহ আরও কয়েকটি দেশের দূতাবাস এখনো চালু আছে।'

তিনি জানান, রাজধানী খার্তুমের যে এলাকায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও বাংলাদেশ হাউস সেখানে নিরাপত্তা ও সুরক্ষা পরিস্থিতি এখনো অস্থিতিশীল৷

'যদিও খার্তুমের কয়েকটি অঞ্চলে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতির তথ্য পাওয়া গেছে তবুও পুরো খার্তুমের পরিস্থিতি অপ্রত্যাশিত৷ মিশন কর্মকর্তা ও তাদের পরিবারসহ আমরা রাজধানীর বাইরে নিরাপদে আছি,' যোগ করেন বাংলাদেশ মিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স৷

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তার ভাষ্য, গুলিতে দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসার ক্ষতি হলেও এতে কেউ হতাহত হননি৷

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সুদানে বাংলাদেশ দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন৷

তাদের ভাষ্য, গুলিতে দূতাবাস ও ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের বাসার ক্ষতি হলেও এতে কেউ হতাহত হননি৷

কর্মকর্তারা জানান, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতসহ দূতাবাসের কর্মকর্তারা খার্তুম থেকে ২৪০ কিলোমিটার দূরে মাদানী শহরে রয়েছেন৷

তারা আরও জানান, গত ১৫ এপ্রিল আরএসএফ ও সেনাদের সংঘর্ষের মধ্যে ২২ এপ্রিল বাংলাদেশ দূতাবাসের জানালা ও দেয়াল ভেদ করে গুলি ঢুকে পড়ে৷

বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনা হচ্ছে

সুদানে সংঘাতময় পরিস্থিতির মধ্যে বাংলাদেশিদের ফিরিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার৷

পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মঙ্গলবার ফেসবুকে এক পোস্টে লিখেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে কীভাবে কোন পদ্ধতিতে তারা যাত্রা করবেন৷ সবাইকে দূতাবাসের নির্দেশনা মেনে রেজিস্ট্রেশন এবং প্রয়োজনীয় কাজ করার অনুরোধ করছি৷'

তিনি আরও লিখেন, ‘বাংলাদেশের সাংবাদিকদের অনুরোধ করছি দূতাবাসে যোগাযোগ না করার জন্য৷ কারণ সবাই ব্যস্ত এবং রুটগুলো নিরাপত্তার খাতিরে না জানানোই ভালো৷ আমরা সকলের সহযোগিতা কামনা করছি৷'

এপ্রিলের মাঝামাঝিতে সুদানে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর দেশটিতে মানবিক সংকট দেখা দেয়৷ এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের সশস্ত্র বাহিনী ইতোমধ্যে খার্তুম থেকে তাদের দূতাবাস কর্মীদের সরিয়ে নিয়েছে৷ বিভিন্ন দেশ তাদের নাগরিকদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে তৎপরতা শুরু করেছে৷ সশস্ত্র সংঘর্ষের মধ্যে শনিবার বাংলাদেশিদের সুদান ভ্রমণ না করার পরামর্শ দিয়ে সতর্কতা জারি করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷

চলমান সংঘাতের মধ্যে সুদান থেকে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকদের সরিয়ে নিলেও সেখানে মিশন চালু রাখার সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ৷ দেশটিতে বসবাসরত দেড় হাজারের মতো বাংলাদেশির কথা বিবেচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়৷

৭২ ঘণ্টার যুদ্ধবিরতি

সুদানে সাময়িক যুদ্ধবিরতিতে সোমবার রাজি হয় দুই প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপ৷ ওই দিন রাত ১০টা থেকে এই যুদ্ধবিরতি চুক্তি কার্যকর হওয়ার কথা বলে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের বরাতে জানায় বিবিসি৷

ব্লিঙ্কেন জানান, আরএসএফ ও সেনাবাহিনীর মধ্যে দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টা আলোচনার পর যুদ্ধবিরতিতে রাজি হয় দুই পক্ষ৷

সর্বশেষ ঘোষণা করা যুদ্ধবিরতি চুক্তি এই যুদ্ধের মধ্যে ঘোষণা করা তৃতীয় চুক্তি, তবে কার্যত এতে সমাধান আসেনি৷ ঈদুল ফিতরের জন্য যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও সহিংসতা থামেনি সুদানে৷

সুদানের সামরিক নেতৃত্বের দুই অংশের মধ্যে ক্ষমতার দ্বন্দ্বের কারণে এই সহিংসতা শুরু হয়৷ বেশ কিছু দিন ধরে চলা সহিংসতায় রাজধানী খার্তুমেবোমা বিস্ফোরণ,  গোলাবর্ষণ ও গোলাগুলি অব্যাহত রয়েছে৷

খার্তুমের বাসিন্দারা বলছেন, যে শহরে ঈদের সময়টায় পরিবেশ উৎসবমুখর থাকে, সেখানে এখন বিরাজ করছে ভূতুড়ে পরিবেশ৷

সংঘাতের কারণ

সুদানে কীভাবে বেসামরিক শাসন ফিরিয়ে আনা হবে, মূলত তা নিয়ে দুই অধিনায়কের দ্বন্দ্ব থেকে এই লড়াই চলছে বলে জানিয়েছে বিবিসি৷

দেশটিতে বর্তমান সামরিক সরকার চলে মূলত সেনাপ্রধান জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বে৷ তার সঙ্গে উপনেতা হিসেবে আছেন আধা-সামরিক বাহিনী আরএসএফ প্রধান মোহাম্মদ হামদান হেমেদতি দাগালো৷

বেসামরিক শাসনে প্রত্যাবর্তনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই দুটি বাহিনীকে একীভূত করার কথা, কিন্তু আরএসএফ তাদের বিলুপ্ত করার বিপক্ষে এবং এই পরিকল্পনা থামানোর জন্য তাদের বাহিনীকে রাস্তায় নামায়৷ এ ঘটনা সেনাবাহিনী ও আরএসএফের মধ্যে পূর্ণমাত্রার লড়াইয়ে রূপ নেয়৷

জাতিসংঘ জানিয়েছে, সুদানে সংঘর্ষে চার শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন৷ ১০ থেকে ২০ হাজার মানুষ সুদান ছেড়ে পালিয়েছে পাশের দেশে যাদের বেশির ভাগ নারী ও শিশু৷

এনএস/কেএম (দ্য ডেইলি স্টার, নিউজ বাংলা টোয়েন্টিফোর ডটকম)

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য