সিয়েনার পালিও ঘোড়দৌড়, যেন জেমস বন্ডের ছবির সেট
ইটালির সিয়েনা শহরের পিয়াৎসা দেল কাম্পা চত্বরে বছরে দু’বার করে বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ঘোড়দৌড়ের আয়োজন করা হয়ে থাকে৷ ‘পালিও’ নামের এই ঘোড়দৌড়টি আসলে সিয়েনার বিভিন্ন পাড়ার মধ্যে প্রতিযোগিতা; চলে আসছে মধ্যযুগ থেকে৷
অতীতে ফিরে যাওয়া
১৬০৫ খ্রিষ্টাব্দে সিয়েনার ১৭টি পাড়া ‘পালিও’-তে পরস্পরের বিরুদ্ধে ঘোড়দৌড়ে নামে প্রথমবারের মতো৷ বোধহয় তারই স্মরণে আজও মানুষজন ঘোড়দৌড়ের আগে মধ্যযুগীয় পোশাক পরে একটি শোভাযাত্রা করেন৷ ছবিতে ‘অন্দা’ পাড়ার এক বাসিন্দাকে মেক-আপ নিতে দেখা যাচ্ছে৷ শোভাযাত্রায় প্রত্যেক পাড়ার যে দল থাকে, তাতে একজন থাকে পতাকা হাতে; এছাড়া থাকে ঢুলি আর সেকালের নাইটদের বালকভৃত্যের সাজে কিছু লোক...
মানুষের ভিড়ে রেসের ঘোড়া
আসল দৌড়ের আগে বার পাঁচেক রিহার্সাল করা হয় – ঘোড়া ও সওয়ারিসহ৷ ছবিতে ‘কালো চিতা’ পাড়ার আরব ঘোড়াটিকে ট্র্যাকের দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে৷ ঘোড়াগুলো কিন্তু পাড়ার নিজের সম্পত্তি নয়, এমনকি তাদের বাছাই করার কাজও একটি পরিষদের হাতে৷
ঐতিহাসিক চত্বরে উদ্দাম ঘোড়দৌড়
শঙ্খের আকৃতির পিয়াৎসা দেল কাম্পায় ষাট হাজার মানুষ ভিড় করেন পালিও দেখতে – কিন্তু তাদের এক মুহূর্তের জন্যও অন্যমনস্ক হলে চলবে না; কেননা, দৌড় চলে মাত্র ১০০ সেকেন্ড: চুনাপাথর আর বালি মেশানো বিশ সেন্টিমিটার পুরু বিশেষ ট্র্যাকের উপর দিয়ে ঘোড়সওয়ারদের মাত্র তিনটি চক্কর দিতে হয়৷ ট্র্যাকের দৈর্ঘ হলো সাকুল্যে ৩০০ মিটার; প্রস্থে সাড়ে সাত মিটার৷
ভাড়া করা জকি ও জকি ভাঙানোর প্রচেষ্টা
‘ফান্তিনি’ বা জকিরাও স্থানীয় নন; তাঁদের অধিকাংশ সার্ডিনিয়ার মানুষ, পালিও-র জন্য তাদের ভাড়া করে আনা হয়৷ জকি ভাড়া করা কিন্তু পাড়াগুলোর কাজ; কাজেই জকি ভাঙানো বা বেপাড়ার জকিদের ঘুষ দিয়ে তাঁদের রেসে হারার প্রলোভন দেখানোর ঘটনা যে একেবারে ঘটে থাকে না, এমন নয়৷ পাড়াগুলোর মধ্যেও সখ্য, বৈরিতা, সবই আছে৷ কাজেই ফুটবলের মতো পালিও-তে গট-আপ গেমের প্রথাও প্রায় এই ঘোড়দৌড়ের মতোই সুপ্রাচীন৷
জেমস বন্ড ছবির সেট
২০০৭ সালের ‘কোয়ান্টাম অফ সোলেস’ ছবিটি যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা মনে করতে পারবেন, বন্ড কিভাবে পালিও-র ঠিক আগে দর্শকদের ভিড়ে এক খুনিকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে৷
লাগামছাড়া
পালিও-র ঘোড়াগুলো লাগাম পরে থাকলেও, ঘোড়দৌড় হিসেবে পালিও-র নিয়ম-কানুন রীতিনীতি হলো – পালিও-র কোনো নিয়ম-কানুন বা রীতিনীতি নেই: অন্য ঘোড়ার পথ আটকে দেওয়া কিংবা তাকে চেপে দেওয়া, এ সবই চলে৷ তবে কোনো সওয়ারিকে তাঁর ঘোড়া থেকে ঠেলে ফেলে দিলে চলবে না৷ অর্থাৎ পালিও যেন পোলো আর রাগবির একটা জংলি সংমিশ্রণ! তার দাম দেয় চারপেয়ে জীবগুলো৷ ১৯৭০ সাল থেকে এ পর্যন্ত পালিও-য় মোট ৫০টি ঘোড়া প্রাণ হারিয়েছে৷
সওয়ারির চেয়ে ঘোড়ার কদর বেশি
তার প্রমাণ হলো এই যে, কোনো পাড়ার ঘোড়া সবার আগে ফিনিশিং লাইনে পৌঁছালেই সেই পাড়া জিতেছে, বলে ধরে নেওয়া হবে – তা সেই ঘোড়ার সওয়ারি যদি মাঝপথে মাটিতে পড়ে গিয়েও থাকেন, তাতেও কোনো ক্ষতি নেই৷
২০১৭-র প্রথম পালিও-তে জিতেছে ‘জিরাফ’ পাড়া
গত দোসরা জুলাই-এর প্রথম পালিও-তে ‘জিরাফ’ পাড়ার সওয়ারি জোনাতান বার্তোলেত্তি প্রথম স্থান অধিকার করেন৷ মনে রাখবেন, পালিও-তে দ্বিতীয় হওয়াটা সবার শেষে পৌঁছনোর, অর্থাৎ লাস্ট হওয়ার চেয়েও বেশি লজ্জাকর! কাজেই এ বছরের প্রথম পালিও-তে যদি ডিগবাজি খেয়ে থাকেন, সেক্ষেত্রে ১৭ই আগস্টের দ্বিতীয় পালিও-তে প্রথম হবার চেষ্টা করতে পারেন৷