সিরিয়ায় তুর্কি-মার্কিন সংঘাতের বিভিন্ন দিক
সিরিয়ার জটিল সংকটে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক শক্তি নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করতে জড়িয়ে পড়েছে৷ বিশেষ করে তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংঘাত সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ছে৷ রাশিয়া, ইরান ও আসাদ সরকার পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য রাখছে৷
গৃহযুদ্ধের জটিল সমীকরণ
বহু জাতি-ধর্ম-সম্প্রদায়ের দেশ সিরিয়ায় গ্রহযুদ্ধ শুধু বাশার আল আসাদ সরকার বনাম বিরোধীদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়৷ আইএস-বিরোধী সংগ্রামেও ঐক্যের অভাব রয়েছে৷ প্রতিবেশী, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তি বিভিন্ন গোষ্ঠীর প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাচ্ছে৷ তুরস্ক ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও তাদের মধ্যে অন্যতম৷
তুরস্কের কুর্দি ‘জুজু’
সীমানার মধ্যে সংখ্যালঘু কুর্দি জনগোষ্ঠীকে কমবেশি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলেও প্রতিবেশী দেশগুলিতে কুর্দিদের তৎপরতা নিয়ে লাগাতার দুশ্চিন্তায় থাকে তুরস্কের সরকার৷ সিরিয়াও তার ব্যতিক্রম নয়৷ সেখানে আফ্রিন অঞ্চলে আসাদ প্রশাসনের অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে কুর্দি ওয়াইপিজি গোষ্ঠী জাঁকিয়ে বসেছে৷ কয়েক বছর ধরে কার্যত স্বাধীন হয়ে উঠেছে সিরিয়ার কুর্দি অঞ্চল৷
তুর্কি-মার্কিন সংঘাত
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট-এর বিরুদ্ধে সংগ্রামে ওয়াইপিজি গোষ্ঠীকে সহযোগী হিসেবে দেখে মার্কিন প্রশাসন৷ তাই তাদের আর্থিক ও সামরিক মদত দিয়ে চলেছে ওয়াশিংটন৷ অন্যদিকে তুরস্কের এর্দোয়ান সরকার তাদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে গণ্য করে৷ কুর্দিদের দমন করতে সরাসরি সামরিক অভিযানও চালাচ্ছে তুরস্ক৷ দুই ন্যাটো সদস্য দেশের মধ্যে এমন স্বার্থের সংঘাত নতুন সংকট সৃষ্টি করছে৷
বিপজ্জনক পরিস্থিতি
ওয়াইপিজি যোদ্ধারা আইএস জঙ্গিদের বিতাড়ন করার পর মার্কিন প্রশাসন সিরিয়ার উত্তরে তাদের নিয়ে ৩০,০০০ সদস্যের এক সীমান্তরক্ষী বাহিনী সৃষ্টি করার উদ্যোগ নিয়েছে৷ কুর্দি গোষ্ঠীর এই শক্তিবৃদ্ধি প্রতিরোধ করতেই সামরিক অভিযানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তুরস্ক৷ ফলে কুর্দি এলাকায় সক্রিয় মার্কিন সৈন্যরাও সেই হামলায় জড়িয়ে পড়তে পারে৷
রাশিয়ার সঙ্গে বোঝাপড়া
সিরিয়ায় নিজস্ব স্বার্থ রক্ষা করতে তুরস্ক রাশিয়া ও ইরানকে তুষ্ট রাখার উদ্যোগ চালিয়ে যাচ্ছে৷ কুর্দিদের দমন করতে সিরিয়ার আকাশে নির্বিঘ্নে বোমারু বিমান চালাতে চায় তুরস্ক৷ ওয়াইপিজি গোষ্ঠীর দাবি, রাশিয়া পরোক্ষভাবে তুরস্কের আকাশ অভিযানে মদত দিচ্ছে৷ রাশিয়ার ঘনিষ্ঠ আসাদ সরকার হুমকি সত্ত্বেও তুরস্কের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না৷
সম্ভাব্য পরিণতি
তুরস্কের চাপে ওয়াইপিজি গোষ্ঠী কোণঠাসা হয়ে পড়লে আংকারার মদতপুষ্ট ‘ফ্রি সিরিয়ান আর্মি’ নিয়ন্ত্রিত দুই বিচ্ছিন্ন এলাকা যুক্ত হতে পারে৷ সে ক্ষেত্রে আসাদবিরোধী এই গোষ্ঠীর শক্তিবৃ্দ্ধি হলেও কুর্দি জনগোষ্ঠীর সঙ্গে তাদের নতুন সমীকরণের প্রয়োজন হবে৷ সেই অবস্থায় আসাদের স্বার্থরক্ষায় রাশিয়া ও ইরান কী করবে, তা-ও স্পষ্ট নয়৷
ওয়াশিংটনের সঙ্গে বোঝাপড়া
যে কোনো মূল্যে ওয়াইপিজি গোষ্ঠীকে কোণঠাসা করতে আংকারা সরকার বদ্ধপরিকর৷ ওয়াশিংটনের সঙ্গে সংঘাত এড়াতে তারা কুর্দি যোদ্ধাদের ইউফ্রেটিস নদীর পূর্বে চলে যাবার প্রস্তাব দিয়েছে৷ মানবিজ এলাকায় তুর্কি ও মার্কিন সৈন্যদের যৌথভাবে মোতায়েনেরও প্রস্তাব দিয়েছে তুরস্ক৷