1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সিরিয়ার কারাগারে নারী নির্যাতন

১ মে ২০১৮

বাশার আল আসাদ সরকারের আমলে হাজারো সিরীয় নারীকে কারাগারে নির্যাতন করা হয়েছে৷ যাঁরা পালিয়ে বেঁচেছেন, তাঁদের কাছ থেকে এমন তথ্যই বের করে এনেছেন ডয়চে ভেলের ইউলিয়া হান৷

https://p.dw.com/p/2wxGG
Zeichnung syrisches Gefängnis
ছবি: Senem Demirayak

মুনা মুহাম্মাদের এক একটি ক্ষণ মনে আছে৷ বন্দি জীবনের প্রতিটি ক্ষণ, প্রতিটি যন্ত্রণা আর অত্যাচার৷ ‘‘আমার মাথা একটি প্লাস্টিক ব্যাগ দিয়ে বাধা ছিল৷ এরপর উলটো করে সিলিং থেকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল,'' বলছিলেন ৩০ বছর বয়সি মুনা৷

এই দুঃসহ স্মৃতি তাঁকে এখনো তাড়িয়ে বেড়ায়৷ কারাকক্ষের প্রহরী বলছিলেন, এভাবে মাথার ভেতর থেকে সব ‘কুচিন্তা' বেরিয়ে আসবে৷

সিরিয়ায় সংগীতের শিক্ষক ছিলেন মুনা৷ দাঈর এজ-জর-এ প্রেসিডেন্টবাশার আল আসাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকরায় ২০১২ সালে গ্রেফতার হন তিনি৷ জিজ্ঞাসাবাদের পর ছেড়ে দেয়া হলেও সেনা গোয়েন্দারা পরে আবার তাঁকে গ্রেফতার করেন৷ তাঁকে দামেস্কে নিয়ে আসা হয়৷ সিরিয়ার সামরিক গোয়েন্দাদের যেই সেলটি তাঁকে গ্রেফতার করেছে, সেই সেলকে ‘ব্রাঞ্চ অফ হেল' বা ‘নরকের শাখা' বলে ডাকা হয়৷ যে লোকটি তাঁকে অত্যাচার করছিলেন, একদিন তিনি মুনাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘‘তোমার হৃৎপিণ্ড কোথায়?'' মুনার ভাষায়, ‘‘আমি আঙুল দিয়ে দেখাতেই, সেখানে আঘাত করা হলো৷''

নরকের শাখার দিনগুলি

Muna Muhammad
মুনা মুহাম্মাদছবি: DW/J. Hahn

মাসের পর মাস মুনাকে কখনো একটি নির্জন কক্ষে বা কখনো অন্যদের সঙ্গে বন্দি রাখা হতো৷

‘‘একদিন তারা এক ষোড়শী তরুণীকে জিজ্ঞাসাবাদ করছিলেন৷ আমরা তাঁর চিৎকার শুনছিলাম৷ মনে হচ্ছিল, তারা হয়তো মেয়েটিকে মেরে ফেলছে৷'' অনেক নারীকে ধর্ষণ করা হয়৷ অপরাধ স্বীকার না করলে তাঁকেও ধর্ষণ করার হুমকি দেয়া হয়েছিল বলে জানান মুনা৷

কারাগারে সবসময় টয়লেটে যাওয়া বা গোসল করার অনুমতি ছিল না মুনাদের৷ বন্দিদের সঙ্গে শিশুও ছিল৷ ‘‘এক মা ও মেয়ের কথা মনে আছে৷ অন্ধকার ঘরে শিশুটি সারাদিন কাঁদতো৷ আর দরজার নীচ দিয়ে আলো ধরার চেষ্টা করতো,'' বলছিলেন মুনা৷

এক সময় মুনাকে ছেড়ে দেয়া হয়৷ ২০১৬ সালে তিনি তুরস্কে পালিয়ে যান৷ আরো প্রায় পাঁচ লাখ সিরীয় নাগরিকের সঙ্গে তুরস্কের গাজিয়ানটেপ শহরে থাকেন তিনি৷

কত নারী সিরিয়ার কারাগারগুলোতে অন্তরীণ আছেন, তা নিশ্চিত নয়৷ তবে সেখানকার নাগরিকদের অধিকার নিয়ে কাজ করে, এমন একটি এনজিও'র কর্ণধার ফাদেল আবদুল ঘানির মতে, সাত হাজারেরও বেশি নারীকে বন্দি করা হয়েছে৷

‘পরিকল্পিত নির্যাতন'

২০১৭ সালে প্রকাশিত অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিবেদন অনুযায়ী, কারাগারে সিরীয় গোয়েন্দা সংস্থার অত্যাচারে কমপক্ষে ১৭ হাজার নাগরিক মারা গেছেন৷ সেইদনায়া সামরিক কারাগারে প্রায় ১৩ হাজার নাগরিককে হত্যা করা হয়েছে৷ অ্যামনেস্টি এই হত্যাযজ্ঞকে সাধারণ নাগরিকের ওপর সরকারের ‘পরিকল্পিত নির্যাতন' বলে উল্লেখ করেছে৷

বাশার আল-আসাদ অবশ্য এই প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে, এটি ভুয়া খবর৷

Torture in Syrian prisons

প্রতিকার প্রকল্প

সিরিয়ার কারাগারগুলোতে কী হচ্ছে তা বিশ্বকে জানাতে চান মুনা৷ তিনি বলেন, কথায় কথায় অপমান করা অত্যাচারের একটি অংশ ছিল৷ একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে তাঁর৷ এক ব্যক্তির কাছে তাঁর পেশা কী জানতে চাইলেন প্রহরী৷ লোকটি জানালেন, তিনি একজন ডাক্তার৷ এরপর ঐ প্রহরী তাঁকে বললেন, এক পায়ের ওপর লাফিয়ে লাফিয়ে বলতে যে, তিনি একটি খরগোশ৷

‘‘লোকটি প্রথমে আস্তে আস্তে বলছিলেন৷ প্রহরীরা তাই তাঁকে মারছিল৷ এরপর লোকটি জোরে জোরে বলছিল যে, আমি খরগোশ, আমি খরগোশ৷''

মুনা তাঁর জীবনের গল্পটি লিখেছেন৷ নির্যাতনের শিকার অন্য নারীদের ঘটনাগুলোও লিখে রাখছেন তিনি৷ এই নারীদের জন্য একটি ‘প্রতিকার প্রকল্প' চালু করেছেন তিনি৷

‘‘অনেকেই কারাগারে কী ঘটেছে, তা নিয়ে কথা বলতে চান না৷ অন্যরা এতটাই ভেঙে পড়েন যে, কান্না থামাতে পারেন না৷'' বলছিলেন মুনা৷ ‘‘আমি তাঁদের শক্ত থাকার পরামর্শ দিই৷ বলি যে, যা ঘটেছে তার জন্য তাঁরা দায়ী না৷'' তিনি বলেন, ‘‘আমি তাঁদের নতুন জীবন শুরু করার কথা বলি৷''

তুরস্কে মুনা তাঁর নতুন জীবন শুরু করেছেন৷ তবে একদিন তাঁর ওপর যে অত্যাচার হয়েছে, এর বিচার পাবেন সে প্রত্যাশা করেন তিনি৷

ইউলিয়া হান/জেডএ