সাবেক প্রতিমন্ত্রী কায়সারের বিরুদ্ধে রায়
২০ আগস্ট ২০১৪
বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যাল ২-এর চোয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারক প্যানেল মামলার যুক্তি তর্ক শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রাখে৷ এ নিয়ে ট্রাইব্যুনাল ২-এ মোট দুটি মামলা রায়ের অপেক্ষায় থাকল৷ এর আগে ৪ঠা মে এই ট্রাইব্যুনালে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে মামলার কার্যক্রম শেষ হয়৷ ঐ রায় এখনো ঘোষণা করা হয়নি৷
মঙ্গলবার কায়সারের মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ হয়৷ রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ও অ্যাডভোকেট রানা দাসগুপ্ত বুধবার সমাপনি যুক্তিতর্ক তুলে ধরেন৷ রানা দাশগুপ্ত সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি একাত্তরে সৈয়দ কায়সারের অপরাধের শিকার বা ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ক্ষতিপূরণ দাবি করেন৷
তিনি বলেন, ৪২ বছর আগে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জসহ বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে কায়সার যে অপরাধ সংঘটিত করেছিলেন – তা তিনি সচেতনভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে করেছিলেন৷ তখন তিনি ২৮ বছরের যুবক ছিলেন৷ সৈয়দ কায়সার সে সময় ড্রাগনের ভূমিকা পালন করেছিলেন৷
গত বছরের ২১শে মে পুলিশ কায়সারকে গ্রেপ্তার করার পর ট্রাইব্যুনাল তাঁকে কারাগারে পাঠান৷ তবে শারীরিক কারণে জামিনের আবেদন জানালে ৫ই আগস্ট ট্রাইব্যুনাল কায়সারকে জামিন দেয়৷
চলতি বছরের ২রা ফেব্রুযারি কায়সারের বিরুদ্ধে ১৬টি অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে তাঁর বিচার শুরু হয়৷ অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, মুক্তিযুদ্ধকালে কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ একটি৷ এছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে হত্যা, নির্যাতন, অগ্নিসংযোগ ও লুণ্ঠনের অভিযোগ ১৩টি এবং ধর্ষণের অভিযোগ দুটি৷ ৯ই মার্চ থেকে ২৩ই জুলাই পর্যন্ত রাষ্ট্রপক্ষে ৩২ জন সাক্ষ্য দেন৷ এর মধ্যে প্রথমবারের মতো ক্যামেরা ট্রায়ালে সাক্ষ্য দেন এক যুদ্ধশিশু৷
রাষ্ট্রপক্ষে প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ অভিযোগ করেন, একাত্তরে হবিগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার স্থানীয় মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের নিয়ে সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সার ‘কায়সার বাহিনী' গঠন করেন এবং পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে নৃশংসতায় অংশ নেন৷ ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কায়সার বাহিনী স্থানীয় মিলিশিয়া বাহিনীর ভূমিকাও পালন করেছে বলে অভিযোগ৷ কায়সার বাহিনীর সদস্যদের নাকি বিশেষ পোশাক ছিল৷
সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে বলা হয়েছে৷ বলা হয়েছে, ‘‘১৯৭১ সালের ১৫ই নভেম্বর কায়সারের নেতৃত্বে ‘কায়সার বাহিনী', শান্তি কমিটি ও রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে যৌথভাবে ব্রহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার দেউড়া, নিশ্চিন্তিপুরসহ ২২টি গ্রামে হামলা চালায়৷ হামলা চালিয়ে তারা ১০৮ জনকে হত্যা করে৷ ২২টি গ্রামের প্রায় সবগুলো গ্রামই ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এবং যে ১০৮ জনকে হত্যা করা হয়েছিল, তার বেশির ভাগই ছিলেন হিন্দু ধর্মাবলম্বী৷ ''
অভিযোগ গঠনের আদেশ অনুসারে, ৭৩ বছর বয়সি কায়সার ১৯৬২ সালে কনভেনশন মুসলিম লীগে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করেন৷ এরপর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িয়ে পড়েন৷ তারপর ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় অর্জনের সময়ে তিনি যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমান৷ ১৯৭৫ সালে সপরিবারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ১৯৭৮ সালে তিনি দেশে ফিরে আসেন৷ দেশে ফেরার পরই তিনি বিএনপিতে যোগ দেন৷ পরবর্তীতে তিনি এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন এবং ১৯৮৬ এবং ১৯৮৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) আসনের সাংসদ হন৷ এরশাদ আমলে তিনি কৃষি প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন৷