সাত বছর পর কেন এই দাবি?
২২ মার্চ ২০১৭জানা গেছে, ঐ কট্টর ইসলামপন্থি ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে কলকাতার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের কয়েকজন মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠতা রয়েছে৷ ভারতে দায়িত্বপালনরত বাংলাদেশের একজন কূটনীতিক ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, ‘‘বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যটি বেকার হোস্টেলে আছে সাত বছর ধরে৷ সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন বা অন্য কেউ কখনও এর বিরোধিতা করল না, তাহলে এখন কেন প্রশ্ন উঠছে?’’
স্বাভাবিকভাবেই বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষ তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমেও খবরটি শেয়ার করা হয়েছে বহুবার৷ কেউ কেউ জানিয়েছেন তাঁদের প্রতিক্রিয়াও৷ সর্দার আমিন ফেসবুক পাতায় লিখেছেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের বিহারী মুসলিমরা সবাই রাজাকার, পাকিস্তানের কট্টর সমর্থক৷ এরাই বেকার হোস্টেলের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানিয়েছে৷’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘কোনো বাঙালি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই মহানায়কের জন্য গর্ব না করে পারে না৷ মমতা রাজাকার তোষণ করেন৷ এদের বিরুদ্ধে একটা কঠিন ব্যবস্থা নেয়া জরুরি৷’’
আবুসালাহ সেকান্দার লিখেছেন মূর্তি আর ভাস্কর্য কী এবং ইসলামে কী বলা হয়েছে সে প্রসঙ্গে৷ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মূর্তি (মূলত মূর্তি পূজা) ও ভাস্কর্য এক জিনিস নয়৷ এদের কে বোঝাবে? মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) অথবা ইসলামের অবস্থান কখনও ভাস্কর্য অথবা কোনো শিল্পকর্মের বিরুদ্ধে ছিল না৷ তিনি মূলত বলেছেন: মূর্তিগুলো প্রকৃত সৃষ্টিকর্তা নয়৷ দ্বিতীয়ত, সৃষ্টিকর্তার ইবাদত মূর্তিপূজার মাধ্যমে সম্ভব নয়৷’’
তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘এখানে মূর্তি মুখ্য বিষয় নয়৷ ইসলামের মূল বার্তাটা আগে বোঝা দরকার৷ বাংলাদেশ ও ভারতের মূর্তিপূজাকারীরা মুসলিমদের প্রধান প্রতিপক্ষ৷ তাই এখানেও মূর্তি মূল আলোচনায় থাকে সব সময়৷ অন্যদিকে ইরানে অথবা পারস্যে মূর্তি নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয় না, কারণ সেখানে মুসলিমদের প্রতিপক্ষ ছিল মূর্তি পূজক নয়, আগুন উপাসকরা৷ তাই ইরানে ভাস্কর্য নির্মিত হলে তারা আমাদের মতো মূর্তিপূজার সাথে ভাস্কর্যকে গুলিয়ে ফেলে না৷’’
সৈকত বিশ্বাস বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধু ভাস্কর্য স্থাপনের ইতিহাস শেয়ার করেছেন৷ তিনি ফেসবুকে লিখেছেন, ‘‘মধ্য কলকাতার রফি আহমেদ কিদওয়াই রোডের মৌলানা আজাদ কলেজের পড়ুয়া ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান৷ তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের অন্তিম লগ্নে বেকার হোস্টেলের ২৩ এবং ২৪ নম্বর কক্ষ বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি বিজড়িত কক্ষ হিসেবে সংরক্ষণ করা হয়৷ ওই কক্ষের প্রবেশ পথে শ্বেতপাথরের মার্বেল দিয়ে তৈরি বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপন করা হয়৷ ২০১১ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি বঙ্গবন্ধুর ওই ভাস্কর্য উন্মোচন করেন৷’’
রতন কুমার মজুমদার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ছবিসহ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘‘কলকাতার বেকার হোস্টেল৷ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রজীবনে কলকাতার এ ছাত্রাবাসে থাকতেন৷ বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যটি সরানোর দাবি তুলছে কলকাতার বেকার হোস্টেলের ছাত্রদের একাংশ৷ যারা এ দাবি তুলেছে তাদের পাকিস্তানে নির্বাসনে পাঠানো যেতে পারে৷ দেশে দেশে সব শিয়ালের এক রা!’’
মো. ফিরোজ আহমেদ প্রশ্ন তুলেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকে কেন্দ্র করেই কি ইসলামপন্থিদের এই আন্দোলন? তিনি লিখেছেন, ‘‘২০১৭ সালে প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকে কেন্দ্র করে ‘সারা বাংলা সংখ্যালঘু যুব ফেডারেশন'-এর পক্ষ থেকে যে কোনো মূল্যে ভাস্কর্য সরানোর দাবি জানানো হয়েছে, নতুবা তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দেয়া হয়েছে৷ এতদিন ধর্মীয় আবেগ কাজ করেনি৷ এত বছর পর কাজ করা শুরু করেছে? এগুলো সুমহান রাজনীতি৷ মমতাদির ফযিলত, তিস্তার চুক্তিকে ধামাচাপা দেয়ার চক্রান্ত৷ এরপরেও তারা আমাদের বন্ধু!!! পরম আত্মীয়!’’
সংকলন: অমৃতা পারভেজ
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
বন্ধু, ইসলামপন্থিদের এই আন্দোলনের পিছনে কী কারণ থাকতে পারে ? লিখুন নীচের ঘরে৷