সাক্ষী যখন তোতা!
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ঘটনাটি ঘটেছিল ২০ ফেব্রুয়ারি, আগ্রার বালকেশ্বর কলোনিতে৷ খুন হয়েছিলেন স্থানীয় হিন্দি পত্রিকার সম্পাদক বিজয় শর্মার স্ত্রী নিলম শর্মা৷ ঐ বাড়িতে দুটি পোষা প্রাণী ছিল৷ একটি কুকুর এবং অন্যটি তোতা পাখি৷ নিলম শর্মার সঙ্গে খুন হয় পোষা কুকুরটিও৷
প্রথমে কেউই তোতার আচরণ লক্ষ্য করেনি৷ প্রথম লক্ষ্য করেন বিজয় শর্মা নিজেই৷ তিনি দেখেন, বাড়িতে যখনই তাঁর ভাতিজা আশুতোষ ঢোকে তখনই তোতাটির আচরণ অস্বাভাবিক হয়ে ওঠে৷ বিজয় শর্মার ভাই অজয় শর্মাও জানান, যখনই আশুতোষ পাখিটির খাঁচার পাশ দিয়ে যায় তখনই এটি চিৎকার করতে থাকে৷ এই থেকেই তাঁদের মনে সন্দেহ হয়৷ এরপর তাঁরা একটি পদ্ধতি অবলম্বন করেন৷ পরিবারের সদস্যরা পাখিটির সামনে সন্দেহভাজন কয়েকজনের নাম উচ্চারণ করেন৷
অজয় জানান, যখন আশুতোষের নাম উচ্চারণ করা হয় তখন পাখিটি হিন্দিতে বলে ওঠে ‘উসনে মারা', ‘উসনে মারা', অর্থাৎ ও মেরেছে৷ এরপর পরিবারের সদস্যরা পুলিশকে বিষয়টি জানায়৷ তারা আশুতোষকে আটক করে এবং জিজ্ঞাসাবাদে আশুতোষ তার অপরাধ স্বীকার করে৷
আশু পুলিশকে জানায়, সে এবং তার বন্ধু রনি বিজয় শর্মার বাড়িতে ঢুকে নিলমকে ভয় দেখিয়ে টাকা-পয়সা ও অন্য মূল্যবান জিনিস দিতে বলে৷ পরে তাঁদের মনে প্রশ্ন জাগে যে, নিলম তাদের সম্পর্কে যদি পুলিশকে বলে দেয়? তাই আশুতোষ ছুড়ি দিয়ে উপর্যুপরি আঘাত করে হত্যা করে নিলমকে৷ এ সময় কুকুরটি চিৎকার করতে থাকলে তাকেও মেরে ফেলে তারা৷
মঙ্গলবার আশুতোষ ও রনি দু'জনকেই আটক করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে হত্যা ও লুটপাটের অভিযোগ আনা হয়৷ পুলিশও স্বীকার করে যে, পোষা তোতা পাখির সহায়তা ছাড়া খুনিকে পাকড়াও করা খুব সহজ হতো না৷
তোতা সম্পর্কে কয়েক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য
তোতা বা টিয়া মানুষের শব্দ উচ্চারণ করতে পারে, অর্থ বুঝতে পারে এবং অনেক শব্দ মনে রাখতে ও বাক্য তৈরি করতে পারে৷ ভালো মতো প্রশিক্ষণ দিলে তারা ছয় পর্যন্ত গুনতে পারে এবং অনেক জিনিস চিহ্নিত করতে পারে৷ এছাড়া তারা সহজ প্রশ্নের উত্তর দিতে পারে এবং তাদের ঠোঁটকে যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করতে পারে, যেমন ছবি আঁকার ক্ষেত্রে৷
বাংলাদেশেও তোতা বিলুপ্তির পথে
মৌলভীবাজার জেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান বাংলাদেশে অবশিষ্ট চিরহরিৎ বনের একটি উল্লেখযোগ্য নমুনা৷ এটি একটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল৷ এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির দুর্লভ জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ এবং উদ্ভিদ৷ কিন্তু তোতা পাখিসহ এখানকার ২০ প্রজাতির বন্যপ্রাণী বিলুপ্ত হতে চলছে৷
জাতীয় উদ্যানের পাশের বিভিন্ন চা বাগানগুলোতে ক্ষতিকর কীটনাশক এবং ওষুধ প্রয়োগ এবং বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে নিরাপদ অভয়াশ্রম না থাকায় এসব প্রাণী বিলুপ্ত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন৷
পরিবেশবাদী ও সচেতন মহলের ব্যাপক প্রতিবাদ সত্ত্বেও ২০০৮ সালে বহুজাতিক তেল-গ্যাস কোম্পানি শেভরন লাউয়াছড়া ও তার আশেপাশের বনভূমি এলাকায় ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধান শুরু করে৷ ত্রিমাত্রিক অনুসন্ধানের জন্য বনের অভ্যন্তর ও আশপাশের এলাকায় নির্বিচারে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়৷ এসময় বন এলাকায় সৃষ্ট ভূকম্পনে বন্যপ্রাণী আতঙ্কিত হয়ে পড়ে, বনের কয়েক জায়গায় আগুন ধরে যায়৷ পাশাপাশি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে হারিয়ে হুমকির মুখে রয়েছে এলাকার জীববৈচিত্র্য৷
এপিবি/ডিজি (পিটিআই, উইকিপিডিয়া)