1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সর্বধর্মের বসন্ত পঞ্চমী নিজামউদ্দিন দরগায়

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
৩০ জানুয়ারি ২০২০

বসন্ত পঞ্চমীর দিন দিল্লির হযরত নিজামউদ্দিন দরগায় গান, ফুল, রঙের মধ্য দিয়ে পালিত হলো প্রেম আর আনন্দের উৎসব৷ 

https://p.dw.com/p/3X0Ka
ছবি: DW/S. Gosh

চারপাশে শুধু বাসন্তীর সমারোহ৷ বাসন্তী রঙের চাদর, যা চড়ানো হবে দরগায়৷ তার ওপর উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে সূর্যমূখির পাপড়ি৷ মাথায় বাসন্তী রঙের পাগড়ি, গলায় একই রঙের অঙ্গবস্ত্র জড়িয়ে চাদর ধরে আছেন জনা দশেক লোক৷ আশপাশের লোকের পোশাকেও একইরকমভাবে হলুদের ছোঁয়া৷ সঙ্গে গান, 'আজ বসন্ত মানা লে সুহাগন, আজ বসন্ত মানা লে৷' ঢোলকের বোলের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাততালি৷ গান যে রাগে বাঁধা, তার নামও বসন্ত৷ এ ভাবেই বসন্ত পঞ্চমীর দিনে আনন্দে উতরোল হল দিল্লির হজযরত নিজামউদ্দিন দরগা৷ সুফি সাধকের দরগায় গান রোজই হয়। তবে তা কাওয়ালি৷ কিন্তু বসন্ত পঞ্চমীর উৎসবে সেখানে কেবলই বসন্তের গান৷

এখান থেকে পনেরো-কুড়ি কিলোমিটার দূরে শাহিনবাগ৷ যেখানে সিএএ নিয়ে একমাসের বেশি সময় ধরে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছে৷ শুধু শাহিনবাগই নয়, দিল্লির মোট তেরোটি জায়গায় চলছে এই ধরনের বিক্ষোভ৷ আর সেই প্রতিবাদকে সাম্প্রদায়িক রঙ দিয়ে শুরু হয়েছে বিভাজনের রাজনীতিও৷ এই আবহে একেবারেই ব্যতিক্রমী হযরত নিজামউদ্দিন দরগার বসন্ত উৎসব৷ এখানে একটাই রঙ৷  বাসন্তী৷ উৎসবের রঙ, সম্প্রীতির রঙ, শান্তির রঙ, সৌহার্দ্যের রঙ৷  

বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ শুরু হল উৎসব৷ মূল প্রবেশদ্বারে পৌঁছলেন গাইয়েরা৷ সঙ্গে ঢোল৷ বিশাল চাদর হাতে তৈরি বাকিরা৷ হাতে সর্ষে ফুল নিয়ে সাজ্জাদা নাশিন শোনাতে শুরু করলেন কাহিনি৷ দরগায় বসন্ত উৎসব শুরুর কাহিনি৷  সৈয়দ আফসর আলি নিজামি ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন সেই ইতিহাস৷ ''সাতশো বছর আগে হজরত নিজামউদ্দিনের ভাগ্নের অকালপ্রয়াণের পর সুফি সন্ত বিষন্ন হয়ে যান৷ মুখ থেকে হাসি চলে যায়৷ তাঁর এই অবস্থা দেখে প্রবল চিন্তিত হন সুফি কবি আমির খসরু৷ তিনি একদিন দরগা থেকে বেরিয়ে একটু দূরে গিয়ে দেখতে পান, কিছু লোক বাসন্তী পোশাক পরে বাসন্তী রঙা ফুল নিয়ে গান গাইছেন। তাঁদের কাছে খসরু জানতে চান, এ কীসের উৎসব? লোকেরা জানান, বসন্ত উৎসব। বসন্ত পঞ্চমীর দিন এভাবেই তাঁরা উৎসব পালন করেন৷ আর এ হল আনন্দের উৎসব৷ খসরু জানতে চান, এভাবে গেলে হজরত নিজামুদ্দিনের মুখে হাসি ফিরবে? তাঁরা বলেন, ফিরবে৷ খসরু তখন বাসন্তী রঙের পোশাক পরে, সর্ষে, সূর্যমুখি ফুল হাতে নিয়ে, বসন্তের গান গাইতে গাইতে ঢুকলেন দরগায়৷ দেখেই হযরত নিজামউদ্দিনের মুখে হাসি ফুটল৷ তারপর থেকে সাতশো বছর ধরে এভাবেই আনন্দের উৎসব পালন করা হচ্ছে দরগায়৷''

Indien Neu-Delhi Hazrat Nizamuddin Dargah
ছবি: DW/S. Gosh

চাদর নিয়ে নিয়ে যাওয়া হল হযরত নিজামউদ্দিনের মাজারে৷ সঙ্গে গাইয়ের দল। ঢোলও৷ সৈয়দ গুলাম নিজাম বলছিলেন, ''এই একদিনই ঢোল ঢোকে মাজারের ভিতরে৷ এমনিতে রোজ সন্ধ্যায় কাওয়ালি হয়৷ তবে আজ শুধু বসন্তের গান৷ খসরুর নিজের লেখা, কিছু সংগ্রহ করে সামান্য বদল করে নেওয়া৷'' হজরত নিজামুদ্দিনের মাজার থেকে বেরিয়ে গাইয়েরা বসলেন সামনের চাতালে৷ চারপাশে ভিড় করে অজস্র মানুষ৷ হিন্দু-মুসলিম সকলেই আছেন৷ শুরু হল গান৷ 'আজ বসন্ত মানা লে৷' বারবার উড়িয়ে  দেওয়া হচ্ছে হলুদ ফুলের পাপড়ি৷ মাঝে মধ্যে গানের দলের ওপর টাকা বৃষ্টিও হচ্ছে৷ বসন্ত রাগের আবেশে, ঢোলের ছন্দে বাহিত হয়ে আনন্দের পরশ লাগছে লোকের মনে৷

গান শেষ হল, গাইয়েরা চললেন খসরুর মাজারে৷ তারপর অন্য মাজারেও৷ খসরুর মাজারের পাশের চাতালে আবার বসলেন তাঁরা৷ শুরু হল আরেক দফা গান৷ তারপর নামাজের বিরতি৷  মসজিদে গিয়ে প্রার্থনার সময়৷ তার আগেই মাজারের সামনে দুয়া হয়ে গিয়েছে, শান্তি ও সম্প্রীতি কামনা করে৷ নামাজ শেষ হতেই আবার শুরু হল বসন্তের গান৷ ততক্ষণে সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে৷ আঁধার নেমেছে৷ কিন্তু উৎসবের রঙ ফিকে হয়নি৷ গান শুরু হতেই বর্ষিত হতে থাকল ফুলের পাপড়ি৷ ছড়িয়ে গেল বসন্তের আমেজ ও আনন্দের লহরী৷