1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত অসহযোগ আন্দোলনের ডাক

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৩ আগস্ট ২০২৪

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার মন্ত্রিসভার পদত্যাগের একদফা দাবি ঘোষণা করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন৷

https://p.dw.com/p/4j54E
শহীদ মিনারে সমাবেশ
শহীদ মিনার থেকে সরকার পদত্যাগের দাবি ঘোষণা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোেলনেরছবি: Sazzad Hossain/DW

প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে শনিবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ছাত্র জনতার সমাবেশ থেকে আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মো. নাহিদ ইসলাম এই ঘোষণা দেন

সংগঠনটির অন্যতম সমন্বয়ক সারজিস আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা সব সমন্বয়ক একমত হয়ে দেশের মানুষের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের পদত্যাগ চেয়েছি৷ এই দাবিতে রবিবার থেকে আমাদের অসহযোগ আন্দোলন চলবে৷ সরকার পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে৷''

এর আগে সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের তার সঙ্গে গণভবনে আলোচনায় বসার আহবান জানান৷ এর প্রতিক্রিয়ায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা আলাদা আলাদাভাবে বিবৃতি ও ফেসবুক পোস্টে প্রধানমন্ত্রীর আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে এক দফা (প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ) দাবির কথা বলেন৷ আর বিকেলে সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবির ঘোষণা দেন৷ সেসময় সেখানে আরো পাঁচ সমন্বয়ক ছিলেন৷

অন্যতম সমন্বয়ক আসিফ ইসলাম বলেন, ‘‘আমরা জীবনের নিরাপত্তা, বাংলাদেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে আমরা সবাই এই সিদ্ধান্তে  উপনীত হয়েছি যে কোনোভাবেই এই সরকারের আর এক মিনিটও ক্ষমতায় থাকার অধিকার নাই৷ এক দফা এক দাবি শেখ হাসিনার পদত্যাগ৷''

পদত্যাগ দাবি না করলে মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করত: সারজিস

তিনি বলেন, ‘‘শেখ হাসিনা বলেছেন আমাদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা আছে৷ আপনাকে গণভবনের দরজা খোলা রাখতে হবে৷ আমরা আপনাকে উদ্ধার করতে আসব৷ আমরা শেখ হাসিনা ও সব মন্ত্রীর পদত্যাগ চাই৷ শুধু পদত্যাগ করলেই চলবে না৷ এই দেশে খুন, দুর্নীতির বিচার করতে হবে৷ শুধু শেখ হাসিনার পদত্যাগ নয় তাকে বিচারের আওতায় আনতে হবে৷''

সমন্বয়ক সারজিস আলম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই সরকারের আচরণে পুরো বাংলাদেশের মানুষ ক্ষুব্ধ৷ এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে এই সরকার স্বাধীনতার পর সবচেয়ে বেশি মানুষকে হত্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে৷ তাই দেশের মানুষের দাবি, এই সরকারের পদত্যাগ৷ আমরা দেশের মানুষের দাবির প্রতি একমত হয়ে সরকারের পদত্যাগ দাবি করেছি৷ আমরা যদি আজ সরকারের পদত্যাগ দাবি না করতাম তাহলে দেশের মানুষ আমাদের প্রত্যাখ্যান করত৷''

তিনি বলেন, ‘‘দেশে স্বৈরশাসন চলছে৷ এখন এই সরকারের পদত্যাগের মাধ্যমে এর অবসান চাই এবং একটি নির্বাচিত সরকারের মাধ্যমে এই দেশ চলবে৷ পদত্যাগের পর সেই সাংবিধানিক প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে৷ আমরা  কোটা সংস্কারসহ ৯ দফা দাবিতে ছিলাম৷ সরকারকে বার বার সময় দিয়েছি৷ কিন্তু সরকার নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপণ করে দমন নির্যাতন করেছে৷ এই পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী৷''

সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘গণভবনের দরজা খোলা৷ আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আমি বসতে চাই, তাদের কথা শুনতে চাই৷ আমি সংঘাত চাই না৷''

শেখ হাসিনা বলেন, ‘‘আমি আবারো বলছি, আন্দোলনকারীরা চাইলে আমি এখনো আলোচনায় রাজি৷ তারা যেকোনো সময় (গণভবনে) আসতে পারে৷ দরকার হলে তারা তাদের অভিভাবকদের নিয়েও আসতে পারে৷''

একই অনুষ্ঠানে তিনি আন্দোলনে আটক সব শিক্ষার্থীদের মুক্তির নির্দেশের কথা জানান৷ প্রতিটি হত্যার বিচারের কথাও বলেন তিনি৷ আর বিশ্ববিদ্যালয়, সায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য প্রস্তাবিত সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়' বাতিল করার ঘোষণা দেন৷

এদিকে রংপুরে পুলিশের গুলিতে নিহত বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশের একজন সহকারী উপপরিদর্শকসহ (এএসআই) দুই পুলিশ সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে রবিবার৷ তারা হলেন রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এএসআই আমির হোসেন ও তাজহাট থানার কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায়৷ সাময়িক বরখাস্তের  কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, ‘অপেশাদারী আচরণস্বরূপ' শটগান থেকে ফায়ার করা৷

শনিবার রাতেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রধানমন্ত্রী আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন৷ তাদের একজন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, ‘‘আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি৷ আশা করি তাদের সঙ্গে আলোচনা হবে৷ তারা যা বলছে তা আমার তা পর্যবেক্ষণ করছি৷''

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাজিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. মেহাম্মদ তানজিম উদ্দিন খান বলেন, ‘‘এই পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী৷ সরকার চাইলে শুরুতেই এই সমস্যার সমাধান করতে পারত৷ কিন্তু তা না করে সরকার দমন পীড়ণ ও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে৷ এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না৷ এটা স্বাধীন দেশে সবচেয়ে বেশি মানুষকে হত্যার ঘটনা৷ এখন গণআন্দোলন বা গণভ্যুত্থান হয়েছে৷ সরকারের তাই সরে যাওয়া উচিত৷ সেটা যদি সরকার না করে তাহলে পরিস্থিতি আরো জটিল হবে৷ তার দায় দায়িত্বও সরকারকে নিতে হবে৷ এখানে আলোচনার আর কোনো জায়গা নেই৷ সেই পথ সরকার আগেই বন্ধ করেছে৷''

পরিস্থিতির জন্য সরকারই দায়ী: তানজিম

এই ঘটনায় গঠিত গণতদন্ত কমিশনের সদস্য অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন, ‘‘এই ছাত্ররা এক নতুন আন্দোলন গড়ে তুলেছে৷ সরকারকে তো হত্যাকাণ্ডের দায় নিতে হবে৷  ছাত্রদের এই নেতৃত্বকে আমাদের সম্মান জানাতে হবে৷ তাদের দাবির প্রতি সম্মান জানাতে হবে৷ তাদের এখন এক দফা দাবি সেটা সরকার কীভাবে বিবেচনা করবে সেটা সরকারের দায়িত্ব৷ সরকার চাইলে সেটা সাংবিধানিক প্রক্রিয়াই সম্ভব৷ চাইলে কেয়ারটেকার সরকার ব্যবস্থাও ফিরিয়ে আনা সম্ভব৷''

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক বলেন, ‘‘আর যাতে কোনো রক্তপাত না হয় সরকারকে সেই ব্যবস্থা করতে হবে৷ সরকারের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যদি সংযত আচরণ করে তাহলে দুই-তিন দিনের মধ্যে আলোচনার পরিবেশ তৈরি হতে পারে৷ তবে আর কোনো রক্তপাতের ঘটনা ঘটলে তার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে৷''

কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সরকারের  পদত্যাগের এক দফা দাবির পর এখনো সরকারের আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিক্রিয়া জানা যায়নি৷

তবে এর আগে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এক ব্রিফিং-এ বলেন, ‘‘প্রধানমন্ত্রী নিজেই বলেছেন আলোচনার দরজা খোলা৷ কাজেই বিভিন্নভাবে যোগাযোগ হতে পারে৷ আমাদের যোগাযোগের দরজা খোলা৷ আমরা কোনো সংঘাত চাইনা৷''

আন্দোলনকারীরা আলোচনায় না বসলে আওয়ামী লীগ কী করবে, এমন প্রশ্নের ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘আমি আমার পজিটিভ বিষয়টা বললাম৷ নেগেটিভে যাবো কেন? দরজা খোলা রাখছি৷''

রবিবার থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সর্বাত্মক অসহযোগের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘‘আমাদের কর্মসূচি বলে দিয়েছি৷ এ জন্য আমরা জমায়েত করছি৷''

আওয়ামী লীগ নতুন করে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে৷ রবিবার রাজধানীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে এবং জেলা ও মহানগরে জমায়েত করবে দলটি৷ আর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৫ আগস্ট যারা নিহত হয়েছেন এবং সাম্প্রতিক সহিংসতায় যারা নিহত হয়েছেন, তাদের স্মরণে সোমবার বেলা তিনটায় রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনের সামনে থেকে বঙ্গবন্ধু ভবন পর্যন্ত শোকমিছিল করবে আওয়ামী লীগ৷

এই পর্যন্ত আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ২১৩ জন নিহত হওয়ার খবর দিয়েছে বাংলাদেশের স্থানীয় সংবাদমাধ্যম৷