1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সরকার গঠনের ক্ষেত্রে কী কী সমস্যায় পড়তে পারেন মোদী-শাহ

৫ জুন ২০২৪

নীতীশ কুমারের জেডিইউ এবং চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি-র কাছে ইতিমধ্য়েই বার্তা পাঠিয়েছে কংগ্রেস। এটাই বিজেপির সবচেয়ে বড় চিন্তা।

https://p.dw.com/p/4geOU
মোদীকে মালা পরিয়ে দিলেন বিজেপির তিন শীর্ষ নেতা
বিজেপি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু তো বটেই, লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসওয়ানও বিজেপির উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেছেনছবি: Manish Swarup/AP/picture alliance

এনডিএ জোট সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও দল হিসেবে একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পায়নি বিজেপি। ম্য়াজিক ফিগার ২৭২ থেকে বেশ অনেকটাই পিছনে আছে নরেন্দ্র মোদীর দল। ফলে সরকার গঠনের ক্ষেত্রে তাদের ভরসা করতে হবে এনডিএ জোটের সহযোগী দলগুলির উপর। আর এটাই বিজেপির সবচেয়ে বড় চিন্তার কারণ।

২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসে বিজেপি। বলা হয়, মোদীর নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার আসলে মোদী-শাহের সরকার। অর্থাৎ, এই সরকারের দুই প্রধান মুখ নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ। ২০১৯ সালেও এই দুই মুখই বিজেপিকে বিরাট সংখ্যা গরিষ্ঠতা এনে দেয়। ফলে খাতায় কলমে এনডিএ জোট থাকলেও মোদী-শাহকে কখনোই জোটসঙ্গিদের উপর নির্ভর করতে হয়নি। অভিযোগ, নির্ভর করতে হয়নি বলে জোটসঙ্গিদের সে অর্থে কখনো গুরুত্বও দেয়নি মোদী-শাহের বিজেপি।

যে কারণে, যত দিন গেছে এনডিএ ছেড়ে বেড়িয়ে গেছে একাধিক দল। পাঞ্জাবের শিরোমনি আকালি দল, শিবসেনার উদ্ধব শিবির, দক্ষিণের এআইএডিএমকে-র মতো গুরুত্বপূর্ণ দল বিজেপিকে ছেড়ে চলে গেছে। যারা থেকে গেছে, তারাও বার বার অভিযোগ করেছে, জোটের ভিতর তাদের কার্যত গুরুত্ব নেই। এই পরিস্থিতিতে ২০২৪ সালের নির্বাচন তাদের সামনে নতুন রাস্তা খুলে দিয়েছে।

বিজেপি-র অন্দরে

বিজেপি সূত্র ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছে, নীতীশ কুমার, চন্দ্রবাবু তো বটেই, লোক জনশক্তি পার্টির নেতা চিরাগ পাসওয়ানও বিজেপির উপর চাপ তৈরি করতে শুরু করেছেন। মন্ত্রিসভায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদগুলি নিয়ে দর কষাকষি শুরু হয়ে গেছে। কোনো কোনো সূত্র থেকে এমনো শোনা যাচ্ছে, নীতীশ কুমার উপ প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতো দর হেঁকে রেখেছেন। পিছিয়ে নেই চন্দ্রবাবুও।

মোদী-শাহের সামনে আরেকটি চ্য়ালেঞ্জ তৈরি করতে পারেন তাদের দলেরই একটি অংশ। বিজেপির সূত্রের দাবি, সংঘ-ঘনিষ্ঠ নীতিন গডকড়ীর মতো নেতারা মোদী-শাহের উপর চাপ তৈরি করতে পারেন। মন্ত্রিসভা বদলের দাবি উঠতে পারে বিজেপিরই অন্দরে মোদী-শাহ বিরোধী শিবির থেকে। কারণ, বিজেপিরই একাংশ মনে করছে, এনডিএ জোট জিতলেও এই ভোট মোদী-শাহের বিরুদ্ধে গেছে।

অঙ্কের খেলা

ভোটের আগে ২৮টি দল নিয়ে লড়াইয়ে নেমেছিল বিজেপি। তাদের মোট আসন সংখ্যা ২৯৩। এর মধ্য়ে বিজেপি একা পেয়েছে ২৪০টি আসন। অর্থাৎ, ম্য়াজিক ফিগার থেকে ৩২টি আসন কম। চন্দ্রবাবুর তেলুগু দেশম পার্টি (টিডিএস) পেয়েছে ১৬টি আসন। এবং নীতিশ কুমারের জেডিইউ পেয়েছে ১২টি আসন। অর্থাৎ, টিডিএস এবং জেডিইউ-এর মোট আসন সংখ্যা ২৮। এই দুই দলই বিভিন্ন সময় কংগ্রেসের নেতৃত্বে বিরোধী জোটে ছিল। জেডিইউ ২০২৪ এর আগে তৈরি ইন্ডিয়া জোটেও ছিল। ফলে ইন্ডিয়া জোট ইতিমধ্যেই তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বলে প্রকাশ্য়েই জোটের নেতারা বলতে শুরু করেছেন। উদ্ধব ঠাকরে এ কথা জানিয়েছেন, কংগ্রেসের নেতা সলমন খুরশিদও সাংবাদিকদের একথা জানিয়েছেন। নীতীশ কুমার এবং চন্দ্রবাবু নায়ডু যদি শিবির পরিবর্তন করেন, তাহলে বিজেপির এনডিএ-এর কাছে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকবে না। তারা নেমে আসবে ২৬৫টি আসনে। অন্য়দিকে ইন্ডিয়া জোটের কাছে এখন ২৩৪টি আসন আছে। জেডিইউ এবং টিডিএস-এর সমর্থন পেলে তারা পাবে ২৬২টি আসন। সেক্ষেত্রে কোনো পক্ষের কাছেই সরকার বানানোর মতো সংখ্য়াগরিষ্ঠতা থাকবে না।

কোন ভারত চান ভারতের বাউল-ফকিররা?

শিবসেনা ফ্য়াক্টর

ভোটের কিছুদিন আগে মহারাষ্ট্রে শিবসেনার ভিতর ফাটল ধরেছিল। শিবসেনার নেতা শিন্ডে দল ভেঙে একটি অংশকে নিয়ে বিজেপি শিবিরে যোগ দিয়েছিলেন। শিন্ডের শিবসেনা এখন এনডিএ-এর অংশ। তাদের হাতে আছে ৭টি আসন। শিবসেনা সূত্র জানাচ্ছে, শিন্ডের শিবির থেকে কোনো কোনো নেতা ফের উদ্ধবের দিকে ফিরে আসতে পারেন। এছাড়া আছে চিরাগ পাসওয়ানের এলজেপি। রাম বিলাস পাসওয়ানের তৈরি এই দল বরাবরই ক্ষমতার কাছাকাছি থাকতে পছন্দ করে। বিহারের এই দল এনডিএ-এর অংশ। তাদের হাতে আছে পাঁচটি আসন। মাত্র পাঁচটি আসন নিয়েই তারা বড় মন্ত্রণালয়ের জন্য় বিজেপির উপর চাপ সৃষ্টি করতে শুরু করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।

ইন্ডিয়ায় ভাঙন

এই পরিস্থিতিতে বিজেপির জন্য় সবচেয়ে সুবিধাজনক কৌশল হলো, ইন্ডিয়া জোটে ভাঙন ধরানো। ইন্ডিয়ার বেশ কিছু নেতার সঙ্গে বিজেপি কথা বলার চেষ্টা করছে বলে সূত্র জানাচ্ছে। যে কারণে, ৪ জুন রাতেই জরুরি বৈঠকে বসেছিলেন ইন্ডিয়া জোটের কোনো কোনো নেতা। বুধবার ফের তাদের বৈঠকে বসার কথা। ইন্ডিয়া জোটের নেতারাই বলছেন, বিজেপি চেষ্টা করবে ইন্ডিয়া জোট ভেঙে এনডিএ-এর নম্বর আরো বাড়িয়ে নিতে। সে ক্ষেত্রে এনডিএ থেকে কোনো দল বেরিয়ে গেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা যাবে।

অদূর ভবিষ্য়ত

ভারতীয় সংবিধানের নিয়ম মেনে সব চেয়ে বেশি আসন পাওয়া দলকেই রাষ্ট্রপতি প্রথমে সরকার গড়তে ডাকবেন। সবচেয়ে বেশি আসন পাওয়া বিজেপিকেই ডাকা হবে, তা নিশ্চিত। এরপর সংসদে বিজেপিকে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে হবে। আর তখনই এই সমস্ত রাজনৈতিক সমীকরণ সামনে আসবে বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

ডয়চে ভেলের দিল্লি প্রতিনিধি স্যমন্তক ঘোষ
স্যমন্তক ঘোষ ডয়চে ভেলে, দিল্লি ব্যুরো