সময়ের হিসেব রাখে কে
সময়ের হিসেব রাখে ঘড়ি, কিন্তু ঘড়ির আবার রকমফের আছে: সূর্যঘড়ি থেকে শুরু করে বালিঘড়ি ও জলঘড়ি হয়ে হাতঘড়ি ছুঁয়ে একেবারে স্মার্টওয়াচ অবধি! সে এক ইতিহাস৷
সূর্যঘড়ি
পিরামিডের আমল থেকে চলে আসছে সূর্ষঘড়ি, আজও দেয়ালে, চত্বরে কিংবা বাগানে তার দেখা পাওয়া যায়৷ ইউরোপের বহু শহরে এই সূর্যঘড়ি আবার শহর সাজানোর একটা উপকরণও বটে৷ ঘড়ি তো ভালোই, দম দেওয়া নেই, তেল দিতে হয় না, আপনিই চলে – কিন্তু মেঘ থাকলে?
বালিঘড়ি
বালিঘড়ির নীতি হলো, একটা ছোট ফুটো দিয়ে বালি ঝরে পড়তে যতোটা সময় নেয় – দু’পাশে ডম্বরুর মতো দু’টি কাচের ঘর৷ সব বালি ঝরে নীচের ঘরে চলে গেলে ঘড়িটা আবার উল্টে দিলেই হলো৷ যেহেতু সব বালি ঝরে যাওয়া পর ঘড়িটা বন্ধ থাকে, তাই বালিঘড়িকে স্টপওয়াচ হিসেবে ব্যবহার করা চলে৷
জলঘড়ি
ছবিতে একটি আধুনিক জলঘড়ি দেখা যাচ্ছে, তবে যন্ত্রটি যোড়শ শতাব্দী থেকে চলে আসছে৷ নীতিটা বালিঘড়ির মতোই, শুধু এখানে পদার্থটা বালির বদলে পানি৷ জলঘড়ির একটি ঘর থেকে আরেকটি ঘরে জল যেতে যতটা সময় লাগে, সেটাই হলো জলঘড়ির মাপ৷ বার্লিনের একটি শপিং মলের এই জলঘড়িটি বসানো হয় ১৯৮২ সালে৷
পকেট ঘড়ি
পকেট ওয়াচকে রিস্টওয়াচ বা হাতঘড়ির জনক বলে গণ্য করা হয়৷ এককালে জেন্টলম্যানরা চেইনে করে তাদের ভেস্টপকেটে রাখতেন এই পকেট ঘড়ি৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সে ফ্যাশন উধাও হলেও, সম্প্রতি আবার পকেট ঘড়িকে দেখা যাচ্ছে ফ্যাশন সচেতন পুরুষ ও মহিলাদের ট্যাঁকে৷
লাক্সারি ওয়াচ
রিস্টওয়াচ বা হাতঘড়ির তেমন তেমন দাম হলে, তা লাক্সারি ওয়াচ হয়ে দাঁড়ায় – অর্থাৎ শুধু ব্যবহারিক নয়, বরং বিলাসের বস্তু৷ রোলেক্স, ওমেগা, রাডো, টাগ হয়ার ইত্যাদি ব্র্যান্ডের নাম কে না শুনেছে৷ অবশ্য লাক্সারি ওয়াচকে ‘ব্লিং’ হয়ে উঠতে হলে তার দামকেও সেভাবে বাড়তে ও বাড়াতে হবে৷ বাজারে আজকাল দশ লাখ ইউরোর বেশি মূল্যের ঘড়ি পাওয়া যায়৷
‘সোয়াচ’
ফ্যান্সি ঘড়ি কেনা যাদের পক্ষে সম্ভব নয়, তাদের জন্য আছে সোয়াচ৷ আশি আর নব্বই-এর দশকে ব্র্যান্ডটি দুনিয়া ছেয়ে ফেলে৷ আসলে একটা রঙচঙে, নতুন ডিজাইনের প্লাস্টিকের ঘড়ি; কিন্তু সময় দেখার চেয়ে ফ্যাশন অ্যাক্সেসরি হিসেবেই বোধহয় বেশি ব্যবহার হয়৷
পাঞ্চ ক্লক
কারখানায় ঢোকার সময় শ্রমিকরা যে ঘড়িতে তাদের কার্ড পাঞ্চ করে সময়টা লিখিয়ে নেন – আবার বেরনোর সময় পাঞ্চ করেন, যার ফলে তারা কত ঘণ্টা কাজ করলেন, তার হিসেব থাকে৷ এর ফলে কারখানার ভোঁ বাজার দরকার নেই, শিফট ডিউটিরও দরকার নেই, যে যার নিজের হিসেব মতো কাজ করলেই হলো৷
পার্কিং মিটার
পার্কিং মিটার মানে টিকিট নিতেই হবে – আবার বেশিক্ষণের জন্য নেওয়ার উপায় নেই৷ ওদিকে ঐ সীমিত সময়ের জন্য গাড়ি পার্ক করতে হলে যে পরিমাণ অর্থদণ্ড দিতে হয়, তা পার্ক গ্যারেজ বা আন্ডারগ্রাউন্ড পার্কিং-এর চেয়ে অনেক বেশি৷ অনেক পার্কিং মিটার আবার আজও কয়েন ছাড়া ক্রেডিট কার্ড নেয় না৷ বিশ্বের প্রথম পার্কিং মিটার বসানো হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওকলাহোমা সিটিতে, ১৯৩৫ সালে৷
আণবিক ঘড়ি
অ্যাটমিক ক্লক বিশ্বের সবচেয়ে নির্ভুল ঘড়ি, কেননা তাতে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাব পর্যন্ত পড়ে না৷ আণবিক ঘড়ি কীভাবে কাজ করে, তা জানতে গেলে পদার্থবিদ্যার তত্ত্ব ঘাঁটতে হবে৷ তবে এটুকু বলা যায় যে, আণবিক ঘড়ি জিপিএস-এর মতো আন্তর্জাতিক নেভিগেশন সিস্টেমের ভিত্তি৷
স্মার্ট ওয়াচ
ঘড়িও কম্পিউটার যুগে এসে পড়েছে – আর পড়বে না-ই বা কেন? স্ক্রিন তো ঘড়িতেও থাকে, যাকে এককালে বলা হতো ‘ডায়াল’৷ সেই ডায়ালটাকে যদি টাচস্ক্রিন করে দেওয়া যায়, তাহলেই তো ঘড়ি হয়ে যায় কম্পিউটার আর কম্পিউটার হয়ে যায় হাতঘড়ি৷ অ্যাপল-এর মতো কোম্পানিরা ঠিক সেই কাজেই নেমেছে...৷
প্রতিবেদন: সের্টান স্যান্ডারসন/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ