1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সবুজ দল ও নির্বাচন যুদ্ধ: দ্বৈত নেতৃত্ব, দুই ব্যক্তিত্ব - ক্যুনাস্ট ও ট্রিট্রিন

১৭ সেপ্টেম্বর ২০০৯

জার্মানির রাজনৈতিক অঙ্গনে ছোট দলগুলির মধ্যে অন্যতম সবুজ দল৷ আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে তাদের পক্ষ থেকে দেয়া হয়েছে দুজন প্রার্থী৷ রেনাটে ক্যুনাস্ট ও ইউর্গেন ট্রিট্রিন৷ গতবারের নির্বাচনে সবুজ দল পেয়েছিল ৮ শতাংশ ভোট৷

https://p.dw.com/p/JiGc
ছবি: AP

এবারের নির্বাচনে আগের চেয়েও বেশি ভোট পাবে বলে আশা করে সবুজ দল৷

মহাজোট সরকারের কাছ থেকে হিসাব নিকাশ করে কি পাওয়া গেল? এ প্রশ্নের উত্তরে রেনাটে ক্যুনাস্ট উষ্মার সঙ্গে বলেন, ‘‘বড় বড় সমস্যার সমাধানের জন্যই এসেছিল বৃহৎ কোয়ালিশন৷ কিন্তু দেখা গেল, বহু সুযোগ নষ্ট করা হয়েছে৷ ছোটখাট বিষয় নিয়েই মাথা ঘামানো হয়েছে বেশি এবং পাওয়া গেছে শুধু স্থবিরতাই৷ ''

চার বছর ধরে বিরোধী দলের শক্ত আসনে বসে প্রতিপক্ষকে বাক্যবাণে ঘায়েল করার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন ক্যুনাস্ট৷ ৫৩ বছর বয়স্কা সবুজ দলের সংসদীয় প্রধান রেনাটে ক্যুনাস্ট রাখঢাক করে কথা বলেন না৷ রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে সরাসরি তীক্ষ্ণ সমালোচনা করতে ছাড়েন না তিনি৷ অর্থনৈতিক মন্দা আয়ত্তে আনতে সরকারের নানারকম পুনরুদ্ধার কর্মসূচি সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন ক্যুনাস্ট, ‘‘সরকার যত্রতত্র কোটি কোটি ইউরো বিসর্জন দিচ্ছে৷ কেউ জানেনা কে পরে এই ঋণ শোধ করবে৷ অনেক পদক্ষেপ তো রীতিমত হাস্যকর৷''

সবুজ দলের আরেক শীর্ষ প্রার্থী ইউর্গেন ট্রিট্রিন কিন্তু স্বভাবের দিক দিয়ে একেবারে উল্টো৷ রেনাটে ক্যুনাস্ট যখন রাজনৈতিক বিরোধীদের উদ্দেশে বকাঝকা করেন, তখন তিনি ধীর স্থিরভাবে তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকেন৷ মনে হয় পৃথিবী রসাতলে গেলেও বুঝি তাঁর কোনো প্রতিক্রিয়া হবে না৷ শ্র্যোয়ডার সরকারে প্রাক্তন পরিবেশমন্ত্রী ট্রিট্রিন সরকারের পরামাণুশক্তি উৎপাদন কার্যক্রমের সমালোচনায় মন দেন৷ এটা তাঁর প্রিয় বিষয়৷

চ্যান্সেলার গেয়ারহার্ড শ্র্যোয়ডারের সময় পরমাণু শক্তিউৎপাদন কার্যক্রম থেকে সরে আসার কাজ শুরু করেছিলেন তিনি৷ জলবায়ু সংরক্ষণের ব্যাপারেও বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন ট্রিট্রিন৷ তবে ৫৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিক প্রয়োজনে মুখ খুলতেও ছাড়েননা৷ সবুজ দলের সম্মেলনে বলেন তিনি, ‘‘এই সংকট থেকে পরিত্রাণ পেতে একমাত্র সবুজরাই এগিয়ে আসতে পারে৷ আর এ জন্য পরিবেশবিষয়ক অর্থনীতি সম্পর্কে ধারণা থাকতে হবে৷ এ ক্ষেত্রে অন্য দলগুলি সবুজদলের তুলনায় অনেক পেছনে৷''

অবিচলিত, তীক্ষ্ণ কিন্তু ধীর স্থির, এই ভাবেই জার্মান সংসদের নিম্নকক্ষে ইউর্গেন ট্রিট্রিন সবুজ দলের বক্তব্য তুলে ধরেন৷ সরকারে থেকে দেশ শাসন ও বিরোধী দলে থেকে সরকারের সমালোচনা এই দুটোতেই পারদর্শী সমাজবিজ্ঞানী ট্রিট্রিন ও আইনজীবী ক্যুনাস্ট৷ ঘনিষ্ঠ বন্ধু না হলেও দুজন একসঙ্গে মিলে মিশে কাজও করতে পারেন ভালভাবে৷

গতবারের সাধারণ নির্বাচনে শীর্ষ প্রার্থী নিয়ে সবুজ দলের তেমন মাথা ঘামাতে হয়নি৷ তিনি ছিলেন তখনকার জনপ্রিয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইওশকা ফিশার৷ ফিশার রাজনীতি থেকে সরে দাঁড়ানোর পর সবুজ দল আবার তাদের চিরাচরিত দ্বৈত নেতৃত্বের দিকে ফিরে যায়৷ দলের সাধারণ সদস্যরা মনে করেন ট্রিট্রিন ও ক্যুনাস্ট নির্বাচন যুদ্ধে যাবার ব্যাপারে সেরা প্রার্থী৷ তাই তারা ৯০ শতাংশ ভোটে নির্বাচন করেন এই দুজনকে৷ দুজন সবুজদলের ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার ভোটার আকৃষ্ট করতে পারবেন৷ ট্রিট্রিন বামঘরানার, ক্যুনাস্ট মধ্যবিত্ত শ্রেণিকে কাছে টানতে পারবেন৷ এই আশা সবুজ দলের সাধারণ সদস্যদের৷

গত জুন মাসের ইউরোপীয় নির্বাচনে মুক্ত গণতন্ত্রীদের চেয়ে এগিয়ে ছিল সবুজ দল৷ ১২ শতাংশ ভোট পেয়ে সংসদের নিম্নকক্ষ বুন্ডেসটাগে তারা এফডিপি ও বাম দল ‘ডি লিঙ্কে'র চাইতে ভাল ফলাফল দেখাতে পেরেছিল৷ আগামী সাধারণ নির্বাচনে খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল, খ্রিষ্টীয় সামাজিক দল ও সামাজিক গণতন্ত্রী দলের পরে তৃতীয় স্থানে আসতে পারবে বলে আশা তাদের৷ ট্রিট্রিন বলেন, ‘‘ নির্বাচন এখনও হয়ে যায়নি৷ যারা হাসিমুখে ঘোরাঘুরি করছে ও মনে করছে, যে কালো হলুদ দলের জয় প্রায় হয়েই গেছে, তাদের আমি বলতে চাই৷ না এখনও তা হয়নি৷''

সবুজ দলের দ্বৈত প্রধান হলেন ক্লাউডিয়া রোঠ আর চেম ওয়েজদেমির৷

নির্বাচনী যুদ্ধে পরমাণু শক্তিউৎপাদন কর্মসূচি থেকে সরে আসা , জলবায়ু রক্ষা ও শিক্ষায় অর্থ বিনিয়োগ করার ওপর জোর দিচ্ছে সবুজ দল৷ চার বছর বিরোধী দলে থাকার পর আবার সরকারে অংশ গ্রহণ করতে আগ্রহী তারা৷ তবে প্রশ্ন এই যে কার সঙ্গে জোট বাঁধা যায়৷ সবুজ দলের ইচ্ছা তো সামাজিক গণতন্ত্রী দল বা এসপিডির সঙ্গে৷ কিন্তু জনসমীক্ষার ফলাফলে তেমন কোনো আশার আলো দেখা যাচ্ছে না৷ নির্বাচনে লাল সবুজের প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার সম্ভাবনা কম৷ তবে লাল, হলুদ ও সবুজদলের কোয়ালিশন করার সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না৷ অন্তত রেনাটে ক্যুনাস্টের তাতে আপত্তি নেই৷ অবশ্য সুবজ দলের সাধারণ সদস্যরা তা চিন্তাই করতে পারেনা৷ বাজার অর্থনীতির কট্টর প্রবক্তা এফডিপির সঙ্গে এক সঙ্গে কাজ করা? না ধন্যবাদ৷ দলের নির্বাচনী সম্মেলনে স্পষ্টই জানিয়ে দিয়েছে তারা৷ রক্ষণশীল শিবির সিডিইউ ও সিএসইউ-এর সঙ্গে আদৌ কোয়ালিশন করা সম্ভব কিনা এ নিয়েও কথা উঠেছে সবুজ দলের মধ্যে৷ ওই দু দলের সঙ্গে জোট নিয়ে আলোচনা? তা হলে সেটা হবে খুব ছোট্ট আলাপচারিতা৷ এই ছিল শুকনো মন্তব্য ইউর্গেন ট্রিট্রিন-এর৷ আপাতত আগের চেয়ে ভাল ফলাফল করার দিকেই মনোনিবেশ করছে সবুজ দল৷ দেখা যাক না ২৭ শে সেপ্টেম্বরে কি হয়? এমনটাই এখন ভাবছে সবুজদল৷

প্রতিবেদকঃ রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক