বাংলাদেশের সংসদে অসংসদীয় ভাষা
২২ জুন ২০১৩জাতীয় সংসদে অসংসদীয় ভাষার ব্যবহার নিয়ে ক্ষুব্ধ স্বয়ং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী৷ তিনি বার বার চেষ্টা করেও সংসদ সদস্যদের নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হন৷ সংসদে এই ধরনের ভাষা ব্যবহার না করতে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে নির্দেশনা দিলেও তাতে থামছেন না কতিপয় সংসদ সদস্য৷ নবম জাতীয় সংসদের আঠারোতম অধিবেশনে বিরোধী দল যোগ দেয়ার পর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷
এবার অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে প্রধানত নারী সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে৷ তবে বিরোধী দল বিএনপির নারী সংসদ সদস্য শাম্মী আক্তার দাবি করেন, সরকারি দলের সংসদ সদস্যরাই এর জন্য দায়ী৷ তারা বিরোধী দলীয় নেত্রীকে ইঙ্গিত করে আপত্তিকর মন্তব্য করে অসংসদীয় ভাষা ব্যবহারে উস্কে দিচ্ছে৷ তাদের কথার জবাবাতো দিতেই হবে৷ তাঁর জানামতে, তাঁর দলের সংসদ সদস্যরা অসংদীয় ভাষা ব্যবহার করেন না৷
জবাবে সরকার দলীয় নারী সংসদ সদস্য নাজমা আক্তার বলেন, ‘‘বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যদের অসত্য কথার জবাবতো দিতেই হয়৷ তা দিতে গেলে পাল্টাপাল্টি কিছু কথা হয়৷ আর বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরাই উস্কানিমূলক কথা বলে সংসদে খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করে৷''
তাঁর দাবি, জেনেশুনে সরকার দলীয় সংসদ সদস্যরা অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেন না৷
তবে নারী নেত্রী সুলতানা কামাল বলেন, ‘‘পরস্পরকে দোষারোপ করে কেউ দায় এড়াতে পারেন না৷ সংসদে যা হয়েছে তা পুরো জাতি দেখেছে৷ বাজেট অধিবেশনের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিবেশনে মূল আলোচনা বাদ দিয়ে পরস্পরকে সংসদ সদস্যরা যেভাবে অসংদীয় ভাষায় আক্রমণ করেছেন, তা চরম রুচিহীনতার প্রকাশ৷ এর মাধ্যমে জাতির সামনে শুধু নিজেদের নয় সংসদকেও হেয় করা হয়েছে৷''
সুশাসনের জন্য নাগরিক বা সুজনের প্রধান ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করে সংসদ সদস্যরা জাতীয় সংসদের অবমাননা করেছেন৷ স্পিকার অথবা বিশেষ অধিকার কমিটির বিষয়টি আমলে নিয়ে দায়ী সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া উচিত৷ তিনি বলেন, ‘‘এই সংসদ সদস্যরা শুধু জনগণের অর্থ আর সময়ের অপচয়ই করছেন না, তারা জাতিকে বিভ্রান্তও করছেন৷ তারা সংসদ সদস্য হওয়ার যোগ্য কিনা তা ভেবে দেখতে হবে৷''
সুলতানা কামাল মনে করেন, এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে শুধু সংসদে ভাষা ব্যবহার এবং আচরণবিধি নিয়ে সুনির্দিষ্ট আইন করে কাজ হবে না৷ বরং সংসদ সদস্যদের শিক্ষা, রুচিবোধ এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার দিক থেকে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে৷