1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘সংখ্যালঘুর নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের’: খতিব

শহীদুল ইসলাম ঢাকা
৭ আগস্ট ২০২৪

সরকার পতনের পর সৃষ্ট হওয়া পরিস্থিতিতে সবাইকে মিলেমিশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মাওলানা মুফতি রুহুল আমিন৷

https://p.dw.com/p/4jD9b
দূর্গাপুজার ছবি
সরকার পতনের পর ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও তাদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটেছেছবি: Sumit

এদিকে, কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে মানুষের মধ্যে নেতিবাচক ধারণা তৈরি করতে সংখ্যালঘুদের বাড়িতে হামলা করা হচ্ছে বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত৷

প্রধানমন্ত্রীর পদ ছেড়ে শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর গত ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বেশ কিছু ভাস্কর্য গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়৷ ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে লুটপাট ও আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়৷

সরকার পতনের পর থেকে সারা দেশে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলা হয়েছে৷ ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও তাদের উপাসনালয়ে হামলার ঘটনা ঘটছে৷ দেশের কয়েক স্থানে আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকজনের মসজিদ ও বাড়িঘরেও হামলা হয়েছে৷ জলের গানের দলনেতা রাহুল আনন্দের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুর্বৃত্তরা তার বাড়িতে থাকা সহস্রাধিক যন্ত্র ভাঙচুর করেছে৷

মঙ্গলবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যানটিনে সংবাদ সম্মেলন করে রাষ্ট্রীয় স্থাপনা, ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর বাড়ি ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে হামলা রুখে দাঁড়াতে সারা দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বামপন্থি সাতটি ছাত্রসংগঠনের মোর্চা গণতান্ত্রিক ছাত্র জোট৷

জড়িতদের যেন আইনের আওতায় আনা হয়: খতিব



বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব রুহুল আমিন বুধবার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমি সকলের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি- আমরা কোনো ধরনের সহিংসতা এবং কোনো ধরনের লুটতরাজ, জ্বালাও-পোড়াও বা আক্রোশমূলক কিছু করব না৷ আমরা সকলে এগুলো পরিহার করবো৷

‘‘আমরা সবাই মিলেমিশে থাকবো৷ সংখ্যালঘু শব্দটা ভাষা হিসেবে বলা হয়, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের সকলের৷ অতএব এ ধরনের সহিংসতার সঙ্গে কেউ যাতে জড়িত না হয় এবং জড়িত থাকাদের পরবর্তীতে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়৷ এই মুহূর্তে সবাই মিলে জনগণের জান-মাল, ইজ্জত, আভ্রু নিরবচ্ছিন্নভাবে পাহারা দিতে হবে৷ সেভাবে আমাদের চলার পথ সুন্দরভাবে যেন গুছিয়ে আনতে পারি আমি সেই প্রত্যাশা রাখছি৷''

সরকার পতনের পর সংখ্যালঘুদের বাড়ি ও উপাসনালয়ে হামলার সঙ্গে কোনো শিক্ষার্থী জড়িত নয় বলে মনে করছেন বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত৷

সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার ডয়চে ভেলেকে রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমার মূল্যায়ন হচ্ছে যারা এ ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে এবং ঘটিয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ এ কাজটি করেছে বলে আমাদের কাছে মনে হয় না৷ অস্বীকারের উপায় নেই বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীরা দেশের রাজনীতিতে একটি ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য কোটা আন্দোলন থেকে কতগুলো দাবিকে তারা সামনে নিয়ে এসেছে৷

‘‘কিন্তু স্থাপনাগুলোতে যারা হামলা করলো, আমাদের যে স্থাপনাগুলো রয়েছে সেগুলোতে যারা হামলা করলো এরা প্রকৃতপক্ষে ছাত্ররা নয় বলেই আমি বিশ্বাস করি৷ এই কাজটি যারা করেছে তারা প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশে একাত্তরকে মুছে ফেলতে চায় এবং এরাই কিন্তু একদিকে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছে, আরেকদিকে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ চালাচ্ছে৷''

তারা প্রকৃতপক্ষে একাত্তরকে মুছে ফেলতে চায়: রানা



রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘শুধু সংখ্যালঘু নয়, তারা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে লুট করেছে৷ এরমধ্য দিয়ে আন্দোলন সম্পর্কে মানুষের যাতে নেতিবাচক ধারণা হয় তারজন্য তারা প্রচেষ্টা চালাচ্ছে বলে আমার কাছে মনে হয়৷''

‘‘বিএনপির তারেক রহমান ও মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ইতোমধ্যে পরিষ্কারভাবে ধ্বংসযজ্ঞ ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সাবধান বাণী উচ্চারণ করেছে৷ এরপরেও দুর্বৃত্তরা হীন কাজ চালিয়ে যাচ্ছে৷ এর পেছনে কারণ হলো এই মুহূর্তে কোনো সরকার নেই, আইনশৃঙ্খলাজনিত কোনো পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার মতো কেউ নেই, এই সুযোগকে তারা গ্রহণ করছে৷ এ রকম অবস্থায় আমরা মনে করি মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধানকে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য সব দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা প্রয়োজন, আমি তাদের কাছে এই আবেদনটা রাখছি৷''

সংখ্যালঘুরা হামলার শিকার হতে পারেন, সেই ধারণা থেকে গত ৩ আগস্ট একটি মনিটরিং সেল গঠন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ৷

ওই সেলের তথ্যানুযায়ী, গত ৪, ৫ ও ৬ আগস্ট দেশের ৩০ জেলা আক্রান্ত হয়েছে৷ ২৫-৩০টি মন্দির আক্রান্ত হয়েছে, লুটপাট হয়েছে৷ ৩৫০-৪০০ বাড়ি আক্রান্ত হয়েছে, হামলা হয়েছে, লুটপাট হয়েছে৷ দুটি হত্যা হয়েছে, জখম হয়েছে অনেক৷

রানা দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘অব্যাহতভাবে অনেকের ভূমি দখল করতে শুরু করেছে, দেশে থাকতে হলে চাঁদা দিতে হবে এ দাবি করা হচ্ছে৷ অনেক জায়গায় এখনো হামলার প্রস্তুতি চলছে৷ লক্ষ্য করা যাচ্ছে ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সংখ্যালঘু মহল্লায় পাহারা দিয়েছে, বিএনপির পক্ষ থেকেও সংখ্যালঘু এলাকায় গিয়ে তাদের শক্তি-সাহস যোগানোর চেষ্টা করছে৷ আমরা এটিকে ইচিবাচকভাবেই দেখতে চাই৷''

গত ৫, ৬ ও ৭ আগস্ট হামলার শিকার সংখ্যালঘুদের কেউ আইনি সহায়তা নিতে পারেনি জানিয়ে রানা দাশগুপ্ত বলেন, থানায় কোনো পুলিশ নেই, আদালত ভবন বন্ধ৷ ম্যাজিস্ট্রেট নেই, জজ নেই৷ এ রকম একটি পরিস্থিতিতে থানায় অভিযোগ দেওয়ার পরিস্থিতি নেই, কোর্টেও যে অভিযোগ দেবেন সেই পরিস্থিতিও নেই৷ আর মামলা করলে তো সংখ্যালঘুরা বিচায় পায় না৷ একটা দায়মুক্তি সংস্কৃতি আমাদের দেশে তো অব্যাহত আছে৷

দুর্বৃত্তদের নিয়ন্ত্রণে আনা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম কাজ হওয়া উচিত বলে মনে করেন রানা দাশগুপ্ত৷

তিনি বলেন, ‘‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নেওয়ার পর পরিস্থিতি তাড়াতাড়ি উন্নতি হবে কিনা আমি বলতে পারব না৷ তবে উন্নতির দিকে যে এগিয়ে যাবে এটি আমি বলতে পারি৷ তবে এটি কত সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক হবে বলা মুশকিল৷ যারা দুর্বৃত্ত তাদেরকে কন্ট্রোল করাই কিন্তু এখন সামনের সরকারের মূল টাস্ক হওয়া উচিত৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য