আশাবাদী তারানকো
১২ ডিসেম্বর ২০১৩বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে তারানকো ঢাকায় আসেন শুক্রবার৷ তাঁর ঢাকা সফরের ফলাফল জানা যায় বুধবার সন্ধ্যায়৷ এক সংবাদ সম্মেলনে তারানকো বলেন, তিনি দুই দলকে এক টেবিলে আলোচনায় আনতে পেরেছেন৷ এখন আলোচনা চালিয়ে যাওয়া তাদের দায়িত্ব৷ তারা আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছেন৷ তারানকো মনে করেন এখনো শান্তিপূর্ণ উপায়ে রাজনৈতিক সংকট নিরসন সম্ভব৷
বুধবার রাজধানীর গুলশানের একটি বাড়িতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপির মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের এক টেবিলে নিয়ে বৈঠক করেন তারানকো৷ আগের দিন মঙ্গলবার তিনি একই বাড়িতে বৈঠক করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে৷ সেই বৈঠকের পর তারানকো জানিয়েছিলেন, দুই দলই ছাড় দিতে রাজি হয়েছে৷ কিন্তু কি সেই ছাড়, বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে সেটা তিনি জানাতে পারেননি, নিশ্চিত করতে পারেননি কোনো সমঝোতার বিষয়৷
জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষক পরিষদ বা জানিপপ এর প্রধান অধ্যাপক ড. নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ ডয়চে ভেলেকে বলেছেন, তারানকোর ৫ দিনের চেষ্টায় সাফল্য যদি বের করতেই হয় তা হলো, দুই দলের দুই মহাসচিবসহ শীর্ষ নেতাদের তিনি অন্তত এক টেবিলে বসাতে পেরেছেন৷ তবে এর বাইরে দুই রাজনৈতিক দলের অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়েছে বলে তিনি মনে করেন না৷ দুই রাজনৈতিক দল যে ‘একমত না হওয়ার ব্যাপারে একমত' তা বুঝতে তারানকোর অসুবিধা হয়নি, বলে মনে করেন তিনি৷ তবুও ড. কলিমুল্লাহ দুই রাজনৈতিক দলকে ধন্যবাদ দেন এই কারণে যে, তারা দুই দিনের জন্য হলেও জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ দূতের সম্মানে এক টেবিলে বসেছেন৷
এদিকে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, তারানকো সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন তা নতুন কোনো কথা নয়৷ দেশের মানুষও মনে করেন, সদিচ্ছা এবং ছাড় দেয়ার মানসিকতা থাকলে রাজনৈতিক সংকট কাটিয়ে সমঝোতা সম্ভব৷ তিনি মনে করেন, দুই দল আলোচনা চালিয়ে যাবে বলে তারানকো যে তথ্য দিয়েছেন তা আসলেই হবে কিনা বুঝতে সময় লাগবে না৷ কারণ মূল বিরোধের জায়গা থেকে দুই দল একটুও সরেনি৷ আর সেটা হলো শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী রেখেই নির্বাচন বনাম শেখ হাসিনাকে বাদ দিয়ে নির্বাচন৷
সংলাপ চলমান রাখতে আন্তর্জাতিক চাপ
বুধবার তারানকো ঢাকায় থাকতেই বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি-মুন৷ তিনি প্রধানমন্ত্রীকে তারানকোর ঢাকা সফরে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানান৷ আর বলেন, যে রাজনৈতিক সংলাপ শুরু হয়েছে তা যেন অব্যাহত থাকে৷ তিনি আশা করেন সব দলের অংশগ্রহণে বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে৷ তিনি বাংলাদেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন৷
এর আগে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি৷ তিনি বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকট নিরসনে চলমান আলোচনা যাতে ভেস্তে না যায় সেজন্য প্রধানমন্ত্রীকে আহ্বান জানান৷ বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনা শুরু করায় তিনি প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে আশা করেন, আলোচনার মাধ্যমে অচলাবস্থা কেটে যাবে৷
এই অবস্থায় নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ এবং ইফতেখারুজ্জামান ডয়চে ভেলেকে জানান এধরণের চাপ আগে থেকেই আছে৷ সেই চাপে দুই দলের মধ্যে এখন পর্যন্ত মনোভাবের কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ আর এখন শেষ মুহূর্তে হবে বলে তারা এমন কোনো বড় আশা করতে পারছেন না৷