শ্বেতাঙ্গ বলাটাও জাতিবাদ
৩১ আগস্ট ২০১৩ফুটবলে মাঠ, স্টেডিয়াম কিংবা তার বাইরে জাতিবাদ ও বর্ণবৈষম্যের নানা প্রতিফলন ঘটে থাকে৷ অথচ ফুটবল খেলার প্রকৃতিই এমন যে, সেখানে নানা ভাষা, নানা মত, নানা পরিধানের মানুষের সঙ্গে নানা বর্ণের মানুষরাও একত্রিত হয় – কি মাঠে, কি স্টেডিয়াম, কি তার বাইরে৷
ফুটবল মানেই আবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা, হারজিত, জয়পরাজয়, বৈরিতা৷ কাজেই মাঝে মাঝে মেজাজ গরম হওয়া, মুখের আগল খুলে যাওয়া, শালীনতা-অশালীনতার ভেদাভেদ ভুলে যাওয়া, এ সব ঘটনাও ঘটে থাকে৷ তারই একটি ঘটেছে আফ্রিকার একটি টিভি শোতে – এবং তাই নিয়ে অভিযোগ গিয়ে পৌঁছেছে জুরিখে ফিফার দোরগোড়ায়৷ ঘটনাটা এই:
আগামী মাসে মালাউয়ি আর নাইজিরিয়ার মধ্যে বিশ্বকাপের কোয়ালিফায়ার৷ খেলাটি হবার কথা দক্ষিণ নাইজিরিয়ার কালাবার শহরে৷ ওদিকে মালাউয়ির কোচ টম সঁফিয়ে মন্তব্য করে বসে আছেন যে, কালাবার ঠিক নিরাপদ ভেন্যু নয়৷ নাইজিরিয়ার কোচ স্টিফেন কেশির রাগটা তাই নিয়ে৷
কিন্তু সেই রাগের অভিব্যক্তি ঘটেছে এইভাবে যে, কেশি ঐ টিভি শোতে বলেছেন, সঁফিয়ে ‘‘পাগল''৷ বেলজিয়ামের মানুষ সঁফিয়ে ‘‘আফ্রিকার লোক'' নন, তিনি একজন ‘‘হোয়াইট ডিউড'' – অর্থাৎ শহুরে ও সৌখিন এক শ্বেতাঙ্গ, যার বেলজিয়ামে ফেরৎ যাওয়া উচিত – বলেছেন কেশি৷
কেশির বিরুদ্ধে জাতিবাদী মন্তব্যের অভিযোগটা সরাসরি পৌঁছেছে ফিফার মুখ্য কার্যালয়ে৷ এ বিষয়ে সঁফিয়ের মন্তব্য হলো: ফিফা যদি ফুটবলে জাতিবাদ রোখার ব্যাপারে আন্তরিক হয়, তাহলে তাকে বিষয়টিকে ‘‘উভয় দিক থেকে গুরুত্ব দিতে হবে''৷ বিবিসির সঙ্গে সাক্ষাতকারে সঁফিয়ে আরো বলেন: ‘‘কোনো ইউরোপীয় যদি একজন আফ্রিকান সম্পর্কে এ ধরনের কিছু বলত, তাহলে বিরাট একটা সমস্যার সৃষ্টি হতো৷ আমি সব দিক থেকেই জাতিবাদের বিরোধী৷''
ফিফা গত মে মাসে মরিশাসে সংগঠনটির বাৎসরিক সম্মেলনে জাতিবাদের বিরুদ্ধে শাস্তি আরো জোরদার করেছে, কেননা তার আগে ইংল্যান্ড ও ইটালিতে কৃষ্ণাঙ্গ খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে জাতিবাদী আচরণের একাধিক ঘটনা ঘটেছে৷ কিন্তু একজন শ্বেতাঙ্গ কোচের একজন কৃষ্ণাঙ্গ কোচের বিরুদ্ধে জাতিবাদের অভিযোগ আনাটা বিরল বললেও কম বলা হয়৷
তবুও ব্যাপারটা ঠিক হেসে উড়িয়ে দেবার মতো নয়৷ জাতিবাদের চেহারাটা কি, সেটা আমরা আন্দাজ করতে পারি৷ কিন্তু জাতিবাদের রংটা কি, সে উত্তরটা কি কারো জানা আছে?
এসি / ডিজি (এপি)