শি-র তৃতীয়-শাসনে চীনাদের প্রতিক্রিয়া কী?
৩ নভেম্বর ২০২২তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর শি তার আরো বেশি অনুগামীকে চীনা কমিউনিস্ট পার্টির উঁচু পদে বসিয়েছেন।
কোনো সন্দেহ নেই, পরিস্থিতি পুরোপুরি শি-র নিয়ন্ত্রণে। তা সত্ত্বেও ক্ষোভ আছে। চীনে অনেক মানুষ দেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তিত। কিছু মানুষ মনে করেন, শি-র শাসনে গত এক দশকে জিনিসের দাম প্রচুর বেড়েছে। কিন্তু মজুরি বাড়েনি। যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের হার গত জুলাইয়ে ছিল প্রায় ২০ শতাংশ। ২০১৮-র পর থেকে সবচেয়ে বেশি।
পূর্ব চীনের বাসিন্দা ৩০ বছর বয়সি চেন বলেছেন, ''গত কয়েক বছরে কলেজ থেকে বেরিয়ে প্রচুর পড়ুয়া চাকরি পাচ্ছে না। আমি চাকরির খোঁজ করছি। পাচ্ছি না। হতাশ হয়ে পড়ছি। আর যে চাকরি আছে, তাতে মজুরি খুবই কম।'' ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''কর্তৃপক্ষ এখন সামাজিক মাধ্যমের উপর কড়া নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে। আমি তাই সেখানে পোস্ট দেয়াও বন্ধ কের দিয়েছি।''
চেন একা নন, আরো অনেক মানুষ তার মতো ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছেন।
মধ্য চীনে থাকেন দুই সন্তানের মা লিন। কথা বলার আগে জানালেন, তার শুধু পদবিটুকুই ব্যবহার করা যাবে। নাম দেয়া যাবে না। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ''তৃণমূল স্তরের মানুষ শি-র দুর্নীতি বিরোধী অভিযান সমর্থন করেন। যেভাবে শি করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করেছেন, তাকে সমর্থন করেন। কিন্তু যে সব নাগরিক রাজনীতি সচেতন তারা শি-র তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হওয়ায় হতাশ।''
কেন এই হতাশা? লিনের ব্যাখ্যা, ''শি পার্টির শীর্ষ নেতাদের সরিয়ে দিয়ে নিজের অনুগামীদেরই শুধু বসিয়েছেন। তাতে আমাদের মতো অনেকেরই মনে হয়েছে, আমরা আবার কালচারাল রেভলিউশনের জমানায় চলে যাচ্ছি। সরকার অর্থনীতির চ্যালেঞ্জকে গুরুত্ব দিচ্ছে না।''
বিদেশে যাওয়ার ভাবনা
চেন এবং লিনের মতো অনেকেই ভাবছেন, তারা দেশ ছেড়ে বিদেশে গিয়ে বসবাস করবেন। চীনে এখন একটা বাক্যবন্ধ ট্রেন্ড হয়েছে, 'রান শুই' মানে পালানোর দর্শন।
চেন জানিয়েছেন, ''আমি অল্পস্বল্প জাপানি জানি, আমি জাপানে যেতে চাই। কিন্তু আমার উপর প্রবলভাবে আর্থিক চাপ আছে। চীন ছাড়তে গেলে প্রচুর ঋণ নিতে হবে।''
লিন আগে থেকেই বিদেশে যাওয়ার কথা ভাবছিলেন। এখন তিনি তার দুই সন্তানকে আগে বিদেশে পাঠাতে চান। লিনের দাবি, ''বিদেশে গিয়ে তারা ভালো পরিবেশ পাবে। আমি চাই, তারা অন্য দেশে থাকার অভিজ্ঞতাও সঞ্চয় করুক। যখন কোনো দেশে আইনের শাসন থাকে না, তখন সেই দেশ ছাড়ার কথাই চিন্তা করা উচিত।''
হুং সাংহাইতে থাকেন। তার বক্তব্য, ''চীনে অনেকে মনে করছেন, তৃতীয় পার্টি কংগ্রেসের পর চীনের সামাজিক উন্নতিতে আরো ভাটার টান দেখা যাবে। মানুষ ক্ষুব্ধ। কিন্তু তাদের হাতে কোনো ক্ষমতা নেই। চীনে প্রবল সেন্সরশিপ চালু আছে। তাই অনলাইনে কেউ সেভাবে মুখ খোলেন না।''
বিদেশের চীনারা যা করছেন
গত দুই সপ্তাহ ধরে বিদেশে বসবাসকারী চীনের অনেক মনুষই শি-র বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন। গত ১৩ অক্টোবর বেজিংয়ে শি-র বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ জানান পেং। তিনি একটা ব্যানার লাগিয়েছিলেন, সেখানে বলা ছিল, 'স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র হলো চীনের মানুষের প্রাথমিক চাহিদা'। অনেকে বাস স্টপে, পাবলিক ইউরিনালে স্লোগান লিখে রাখছেন।
নিউ ইয়র্কে থাকেন তেং বিয়াও। তার মতে, ''মানুষ যে শি-র উপর বীতশ্রদ্ধ তা এর থেকে বোঝা যাচ্ছে। চীনে ন্যূনতম অধিকারও দেয়া হয় না। ফলে ক্ষোভ বাড়ছে।''
বিদেশে বসবাসকারী প্রচুর চীনা পড়ুয়াও সামাজিক মাধ্যমে এই প্রতিবাদের কথা বলছেন। স্লোগান তুলে ধরছেন। ক্যানাডায় থাকা চীনা ছাত্র আভা বলেছেন, ''পেং আমাদের মন থেকে ভয় দূর করতে সাহায্য করেছেন। তিনি যদি বেজিংয়ে এই প্রতিবাদ জানাতে পারেন, তাহলে আমরা কেন পারব না?''
ইনস্টাগ্রামে সিটিজেনস ডেইলি বলে একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সমানে প্রতিবাদের ছবি ছাপা হচ্ছে। তেং বিয়াও-এর মতে, চীনে অল্প কিছু মানুষ প্রতিবাদ করার সাহস দেখাতে পারছেন। এখন তাদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দুনিয়াকে সোচ্চার হতে হবে। না হলে, চীনে ভবিষ্যতের সংগ্রামের ছবিটা খুব একটা উজ্জ্বল হবে না।
উইলিয়াম ইয়াং/জিএইচ