শিল্পে লজ্জা
জীবনে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে, যখন আমরা লজ্জায় মাটিতে মিশে যাই৷ ‘ইনার স্কিন – আর্ট অ্যান্ড শেম’, অর্থাৎ ‘ভিতরের চামড়া – শিল্প ও লজ্জা’ শীর্ষক প্রদর্শনীটিতে লজ্জা নামের শক্তিশালী অনুভূতিটির বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়েছে৷
ক্লেমেন্স ক্রাউস: শিশু হিসেবে আত্মপ্রতিকৃতি (২০১৭)
মাটিতে পড়ে রয়েছে বস্তুত এক তরুণ শিল্পীর শরীর, কিন্তু রাবারের খোলসের মতো দোমড়ানো-মোচড়ানো৷ অস্ট্রিয়ার শিল্পী ক্লেমেন্স ক্লাউসের এই আত্মপ্রতিকৃতি হ্যারফোর্ডের মার্টা মিউজিয়ামে আয়োজিত ‘ভিতরের চামড়া – শিল্প ও লজ্জা’ প্রদর্শনীটির অংশ৷
জন আইজ্যাক্স: আলো আর অন্ধকার মিলে তোমার-আমার ছায়ায় কোনো ফারাক নেই (২০১৬)
ব্রিটিশ শিল্পী জন আইজ্যাক্স-এর শিল্পে মানবদেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে৷ এক পায়ের পাতা অন্য পায়ের উপর দিয়ে মুখ কাঁচুমাচু করে দাঁড়ানোটা লজ্জার অভিব্যক্তি বলেই গণ্য হয়...৷
মিরিয়াম কান: ‘মারে নস্ত্রুম’ (২০১৫)
‘আমি চাই, এখন যা ঘটছে, তা নিয়ে সকলে ভাবুন’, বলেন সুইশ শিল্পী মিরিয়াম কান৷ তাঁর আলোখ্যর উপজীব্য হলো, ভূমধ্যসাগরে উদ্বাস্তুদের পরিস্থিতি৷ কার সেই পরিস্থিতিতে লজ্জা পাওয়া উচিত? ছবিতে যে সব নগ্ন, নিরুপায় মানুষদের দেখা যাচ্ছে? নাকি দর্শকের নিজের?
ব্রুস গিল্ডেন: জেমি (২০১৪)
ছবিটি মার্কিন আলোকচিত্রী ব্রুস গিল্ডেন-এর ‘ফেসেস’ বা ‘মুখ’ পর্যায় থেকে নেওয়া৷ গিল্ডেনের লক্ষ্য ছিল, সমাজ যে সব ‘লজ্জাকর’ প্রতিকৃতি এড়িয়ে চলে, সেগুলিকে তুলে ধরা৷ যেমন এই ছবিটিতে এক কিশোরের ব্রণযুক্ত অবয়ব৷
জুলিয়ান রোজফেল্ড: ‘ডিপ গোল্ড’ (২০১৩-১৪)
শিল্পী জুলিয়ান রোজফেল্ড তাঁর ‘ডিপ গোল্ড’ বা ‘গভীর সোনা’ ফিল্মটিতে একটি সামাজিক রীতিনীতি ও লজ্জাবিহীন জগৎ দেখাতে চেয়েছেন৷ প্রেক্ষাপট বিশের দশকের বার্লিন শহর, তবে যেন কোনো স্বপ্নে বা দুঃস্বপ্নে: মানুষজন নগ্ন; কেউ ফুটপাথে প্রস্রাব করছেন; কেউ কাউকে অকারণে গুলি করে মারছে৷ লুইস বুনুয়েলের ‘‘লা’জ দ’র’’ বা ‘স্বর্ণযুগ’ নামের ক্ল্যাসিক ছবি ছিল নাকি রোজফেল্ডের প্রেরণা৷
ইয়ুর্গেন টেলার: ভিভিয়েন ওয়েস্টউড (২০০৯)
লাস্যময়ীর ভঙ্গিমায় ব্রিটিশ ফ্যাশন ডিজাইনার ভিভিয়েন ওয়েস্টউড৷ ব্রিটেনবাসী জার্মান আলোকচিত্রী ইয়ুর্গেন টেলার ইতিপূর্বে অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিদের ছবি তুলেছেন, কিন্তু এত নামকরা একজন ফ্যাশন আইকনের ছবি তুলতে গিয়ে তিনি নাকি রীতিমতো নার্ভাস হয়ে পড়েছিলেন, বলে জানিয়েছেন টেলার৷ ফরাসি চিত্রকর এদুয়ার্দ মানের কলঙ্ক-বিজড়িত ‘অলিম্পিয়া’ ছবিটি নাকি ছিল ওয়েস্টউডের পোর্ট্রেটের প্রেরণা৷
উলরিকে লিয়েনবাখার: ও.টি. (২০০৭)
মুখ লজ্জায় রাঙা হয়ে যাওয়ার কথাই মনে হয় অস্ট্রিয়ার শিল্পী উলরিকে লিয়েনবাখারের এই ছবিটি দেখলে৷ মানুষের সাথে সমাজের যে সম্পর্ক, তারা নানা রীতিনীতি, বাধ্যবাধকতা, কামনা ও ভয় ইত্যাদি অনুভূতির প্রতিফলন ঘটে মানুষের শরীরে – অন্তত লিয়েনবাখারের অঙ্কণশিল্পে৷
জেমি আইজেনস্টাইন: ‘দ্য আইহোল’ (২০০৬)
দরজায় চাবি ঢোকানোর গর্তে চোখ লাগিয়ে কে জানে কি দেখছেন এই মহিলা৷ মার্কিন চিত্রশিল্পী হয়ত সেই পুরাতন দ্বন্দ্বের প্রতি ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন: কার বেশি লজ্জা পাওয়া উচিত, যাকে দেখা হচ্ছে, নাকি যিনি দেখছেন?
বার্লিন্ডে ডে ব্রয়কেরে: ভি. ইমান (১৯৯৯)
উল্টনো এক টিনের গামলার ওপর দাঁড়িয়ে কেউ একজন, তার মাথার ওপর পর্দার মতো করে একটা চাদর ফেলা৷ শুধু খালি পা আর পায়ের কিছু অংশ দেখা যাচ্ছে৷ এটা কি হাস্যকর কিছু, নাকি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি লজ্জায় মুখ ঢেকেছেন? বেলজিয়ান শিল্পীর শিল্পকলা এ ধরনের নানা দ্ব্যর্থক ব্যঞ্জনায় ভরা৷
এর্ভিন ভুর্ম: ‘ওয়ান মিনিট স্কাল্পচার’ (১৯৯৭)
নিজেকে নিয়ে হাসতে পারা চাই, বলেন অস্ট্রিয়ান শিল্পী এর্ভিন ভুর্ম৷ তাঁর ‘এক মিনিটের ভাস্কর্য’-গুলির জন্য তিনি নাম করেন৷ অচেনা লোকজনকে ধরে তাদের এক মিনিটের জন্য কোনো কিম্ভুত ‘পোজ’ নিতে বলতেন ভুর্ম৷ সেটা কি লজ্জাকর না স্রেফ মজা?