শহিদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তিলগ্নে পাকিস্তান সেনাবাহিনী তাদের সহযোগীদের সহায়তায় দেশের শ্রেষ্ঠ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করেছিল৷ তাঁদের স্মরণে ঢাকার রায়ের বাজারে নির্মাণ করা হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ৷
বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ
ঢাকা শহরের পশ্চিম পাশে রায়েরবাজার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে এই স্মৃতিসৌধটির অবস্থান৷ ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর পাকিস্তানি বাহিনী দেশের প্রতিথযশা শিক্ষাবিদ, চিকিৎসক, সাংবাদিক, লেখক, চলচ্চিত্র পরিচালকসহ অনেক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করে৷ তাঁদের মৃতদেহগুলো ফেলে রাখা হয় রায়েরবাজারের পরিত্যক্ত ইটখোলার জলাশয়ে৷ এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডকে স্মরণীয় করতেই সেখানে নির্মাণ করা হয়েছে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ৷
স্থপতি
স্থপতি ফরিদ উদ্দীন আহমেদ বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করেন পরিত্যক্ত সেই ইটের ভাটার আদলেই৷ এতে লাল ইটের গাঁথুনির প্রাধান্যই বেশি৷ দূর থেকে দেখলে মনে হয় খোলা আকাশের নীচে সৌধের একমাত্র দেয়ালটি নির্ভীক প্রহরীর মতো মাথা উচুঁ করে দাঁড়িয়ে আছে৷
স্থাপত্যিক বৈশিষ্ট
বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধটি নির্মিত হয়েছে সাড়ে তিন একর জায়গাজুড়ে৷ বিশাল চত্ত্বরের মাঝে এর মূল বেদি সড়ক থেকে থেকে অনেকটা উঁচুতে৷ এর প্রধান অংশটি প্রায় ৬০ ফটু উঁচু এবং ৩৮০ ফুট দীর্ঘ একটি ইটের তৈরি বাঁকানো দেয়াল৷ এটি রায়েরবাজারের সেই আদি ইটখোলার প্রতীক, যেখানে বুদ্ধিজীবীদের মৃতদেহগুলি পড়েছিল৷ দেয়ালটির দু’দিক ভাঙা৷ এ ভগ্ন দেয়াল ঘটনার দুঃখ ও শোকের গভীরতা নির্দেশ করছে৷
শোকের প্রতীক
স্মৃতিসৌধের বাঁকা দেয়ালের সম্মুখভাগে একটি স্থির জলাধার আছে৷ জলাধারের ভেতর থেকে উঠে আসা কালো গ্র্যানাইট পাথরের স্তম্ভটি শোকের প্রতীক৷
বুদ্ধজীবীদের স্মরণ
বুদ্ধজীবীদের স্মরণ করতে ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশে পালন করা হয় ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস’৷ এদিন মানুষের ঢল নামে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে৷ জাতির শ্রেষ্ঠ এ সন্তানদের শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করতে সেখানে সমবেত হন তাঁরা৷
অযত্ন আর অবহেলা
সারা বছরই অযত্ন আর অবহেলায় পড়ে থাকে বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধ৷ দিনে-রাতে জায়গাটি দখলে থাকে মাদকসেবীদের৷ ১৪ ডিসেম্বর শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষ্যে বছরে শুধু একবার ধোয়ামোছা হয় এটি৷
শ্রদ্ধার ফুল
শহিদ বুদ্ধজীবী দিবসে শ্রদ্ধার ফুলে ঢেকে যায় বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধের মূল বেদি৷
বুদ্ধিজীবী হত্যার প্রতীকী
শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবসে রায়েরবাজার বধ্যভূমি স্মৃতিসৌধে দেশের সূর্য সন্তানদের হত্যার সেই ভয়াল চিত্র প্রতীকীভাবে তুলে ধরে শিশু সংগঠন খেলাঘর৷