1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শনিবার ভারতজুড়ে ডাক্তারদের কর্মবিরতি, স্তব্ধ হবে পরিষেবা

১৬ আগস্ট ২০২৪

আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে দেশজুড়ে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত আইএমএ-র। শনিবার কার্যত অচল হবে স্বাস্থ্য পরিষেবা।

https://p.dw.com/p/4jY1T
আরজি করের সামনে এখন প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
আরজি কর-কাণ্ডের প্রতিবাদে দেশজুড়ে ২৪ ঘণ্টার কর্মবিরতি পালন করবেন চিকিৎসকরা।ছবি: Subrata Goswami/DW

শনিবার ভোট ছয়টা থেকে রোববার সকাল ছয়টা পর্যন্ত দেশজুড়ে চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন করবেন। জরুরি পরিষেবা ছাড়া আর কিছু খোলা থাকবে না। আউট পেশেন্টস ডিপার্টমেন্ট বা ওপিডি বন্ধ থাকবে। জরুরি নয়, এমন অস্ত্রোপচারও হবে না। দেশের সরকারি, বেসরকারি সব হাসপাতালের চিকিৎসকেরা এই কর্মবিরতিতে যোগদান করবেন বলে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন বা আইএমএ জানিয়েছে। আইএমএ হলো দেশজুড়ে চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন।

দিল্লি মে়ডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (ডিএমএ) জানিয়েছে, তারাও শনিবারের কর্মবিরতিতে যোগ দেবে। ডিএমএ-র তরফে জানানো হয়েছে, আন্দোলনের পরবর্তী পর্বে জরুরি পরিষেবাও বন্ধ রাখা হবে।

সাম্প্রতিক সময়ে পুরো ভারত-জুড়ে চিকিৎসকদের এই ধরনের কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত দেখা যায়নি। কিন্তু আরজি করের ঘটনার পর দেশের চিকিৎসক সংগঠনগুলি সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আর তারা এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করতে রাজি নয়। সেজন্যই প্রতিবাদ জানাতে ও চাকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশজুড়ে কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

আরজি করে চিকিৎসকের ধর্ষণ ও হত্যার পর কলকাতায় জুনিয়র ডাক্তাররা কর্মবিরতি পালন করছেন। এদিন দিল্লির রেসিডেন্টস ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশনও দুপুর দুটোয় নির্মাণ ভবনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছে। সন্ধ্যায় ইন্ডিয়া গেটে মোমবাতি মিছিলও হবে।

মহারাষ্ট্র অ্যাসোসিয়েশন অফ রেসিডেন্টস ডক্টরস জানিয়েছে, তারাও শুক্রবার আজাদ ময়দানে বিক্ষোভ দেখাবে।

আরজি কর হাসপাতালে এখন রোগীর দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে পথকুকুর।
আরজি করের প্রায় সব বিভাগই ফাঁকা। ছবি: Subrata Goswami/DW

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত

কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশিকা জারি করে বলেছে, দেশের কোনো সরকারি হাসপাতাল চত্বরে চিকিৎসক বা চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার ঘটনা ঘটলে ছয় ঘণ্টার মধ্যে এফআইআর করতে হবে। যদি নির্দিষ্ট সময়ে অভিযোগ দায়ের না করা হয় তা হলে সংস্থার প্রধান দায়ী থাকবেন।

বলা হয়েছে, সম্প্রতি চিকিৎসক ও চিকিৎসাকর্মীদের বিরুদ্ধে সহিংসতা অনেক বেড়ে গেছে। তারা মৌখিক ও শারীরিক সহিংসতার শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, রোগী বা তার আত্মীয়রা এই সহিংসতা করছে।

আরজি করে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও হত্যার পর চিকিৎসকরা দেশজুড়ে কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্তের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশিকা এলো।

রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা হাইকোর্টের

আরজি কর হাসপাতালে সেমিনার রুমের কাছে একটি ঘর সংস্কারের জন্য ভেঙে ফেলা এবং বুধবার রাতে দুষ্কৃতী তাণ্ডব নিয়ে রাজ্য সরকারকে ভর্ৎসনা করলো কলকাতা হাইকোর্ট।

আরজি করের জরুরি বিভাগ। দুষ্কৃতী তাণ্ডবের পর কিছু পুলিশ কর্মী ছাড়া কেউ নেই।
শুক্রবার আরজি করের জরুরি বিভাগের ছবি। ছবি: Subrata Goswami/DW

রাজ্য সরকার জানায়, চিকিৎসকদের দাবি মেনে বিশ্রামের জায়গা তৈরি করা হচ্ছিল। তবে ঘটনাস্থল পুরোপুরি সুরক্ষিত আছে। তারপর আদালত জানায়, রাজ্য সরকারকে হলফনামা দিয়ে বলতে হবে সুরক্ষার কী ব্যবস্থা সেখানে আছে।

প্রধান বিচারপতি শিবজ্ঞানমের বেঞ্চ জানিয়েছে, সিবিআই স্বাধীনভাবে হাসপাতালে যেতে পারবে, কোথায় কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা তারা খতিয়ে দেখে আদালতকে রিপোর্ট দেবে। তদন্তের কাজ কতটা এগোলো তা নিয়েও সিবিআইকে রিপোর্ট দিতে হবে।

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে

আদালত পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। রাজ্য সরকার আদালতে জানায়, সেদিন সাত হাজার মানুষ আরজি করের কাছে সমবেত হয়েছিলেন। তারমধ্যে কয়েক হাজার জন গিয়ে হামলা করে।

বিচারপতিরা বলেন, ''একশ জন মানুষ সমবেত হলেই তো গোয়েন্দারা নজর রাখেন। এত মানুষ সমবেত হলেন তখন গোয়েন্দারা কী করছিলেন?''

আদালতের প্রশ্ন, আরজি করে এসব কী হচ্ছে?

পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ''পুলিশ নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না, জনতাকে ঠেকাতে পারছে না, আইন-শৃঙ্খলা কী করে বজায় রাখবে? এরকম ঘটনা ভবিষ্ঠতে হলে পুলিশ কী করবে?''

সাবেক অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের নিরাপত্তা দাবি করেছিলেন তার আইনজীবী। প্রধান বিচারপতি বলেন, ''তিনি প্রভাবশালী মানুষ। তার সঙ্গে রাজ্য সরকার আছে। তিনি বাড়িতে তাকুন। শান্তিতে থাকুন। না হলে, তার জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা বহাল করে দিচ্ছি।''

আগামী বুধবার আবার এই মামলার শুনানি হবে।

পুলিশ যা বলেছে

পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল জানিয়েছেন, ''সেদিন রাতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রচুর মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। প্রচুর পুলিশ তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য ছিলেন। তাদের কোনো নেতা ছিল না। কতজন কোথায় আসবে তা বোঝা খুবই কষ্টকর ছিল।''

কমিশনার বলেছেন, ''আমরা ফেসবুক পাতায় ভিডিও আপলোড করেছি ও দুষ্কৃতীদের ছবি দিয়েছি। আমি অনুরোধ করছি, যারা সেদিন এই কাজ করেছে, তাদের সম্পর্কে কিছু জানলে আমাদের জানান। তারা যে কোনো রাজনৈতিক দলের কর্মী হতে পারেন। আমরা ব্যবস্থা নেব।''

তিনি বলেছেন, ''অনেক রটনা হচ্ছে। তার ভিত্তিতে অনেক বিশ্লেষক মন্তব্য করছেন। মামলা এখন সিবিআইয়ের কাছে। তারা বিজ্ঞানসম্মত তথ্য দেবে। আমরা যথাসাধ্য তদন্ত করেছি। আমার দলের কেউ যদি কোনো ভুল করে, তথ্যলোপাট করতে চায়, তাহলে আমাদেরও শাস্তির মুখে পড়তে হবে। দয়া করে গুজব রটাবেন না।''

কেউ বলছেন, পুলিশ মৃতের পরিবারকে বলেছিল চিকিৎসক আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু পুলিশ একথা বলেনি।

আরজি করের অবস্থা

ডিডাব্লিউর চিত্রসাংবাদিক সুব্রত গোস্বামী জানিয়েছেন, আরজি করের জরুরি পরিযেবা বিভাগ ছত্রভঙ্গ অবস্থায় রয়েছে। সব বিভাগই শুনশান। প্রসূতি বিভাগ-সহ কোনো জায়গাতেই বিশেষ কাউকে দেখা যাচ্ছে না। তবে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। জুনিয়র ডাক্তার ও পড়ুয়ারা আগের মতোই বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। তাদের বিক্ষোভস্থলে দুষ্কৃতীরা ভাঙচুর করেছিল। তারপর তারা আবার তা ঠিক করে বিক্ষোভ বহাল রেখেছেন।

২৫ জন গ্রেপ্তার

আরজি করে বুধবারের তাণ্ডব নিয়ে ২৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এরমধ্যে একজন হলেন সৌমিক দাস। তিনি দমদমের তৃণমূল কাউন্সিলার রাজু সেনশর্মার ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তবে তৃণমূল কাউন্সিলার দাবি করেছেন, ছেলেটি তার ওয়ার্ডে থাকে না। তার ঘনিষ্ঠও নয়।

সৌমিক জানিয়েছেন, তিনি বিক্ষোভে যোগ দিতে গেছিলেন। গিয়ে দেখেন, ভাঙচুর হচ্ছে। তিনিও আবেগতাড়িত হয়ে ভাঙচুর করেন। তিনি ভুল করেছেন।

সৌমিককে লালবাজারে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

দলের নারী সাংসদ, বিধায়কদের নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল।
আরজি কর নিয়ে কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিছিল। ছবি: Satyajit Shaw/DW

মমতাও!

মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, আরজি করের ঘটনার অভিযুক্তর ফাঁসির দাবিতে শুক্রবার মিছিল করবেন। পরে  রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও ব্রায়েন বলেছেন, তিনটি দাবিতে মিছিল করবেন মুখ্যমন্ত্রী। সিবিআইকে প্রতিদিন তাদের তদন্তের অগ্রগতির কথা জানাতে হবে। কলকাতা পুলিশকে ১৭ তারিখের মদ্যে তদন্ত শেষ করতে বলা হয়েছিল। সেটা সিবিআইয়ের ক্ষেত্রেও বলবৎ হওয়া উচিত। কলকাতা পুলিশ একজন অভিযুক্তকে ধরেছিল। সিবিআই বাকি সবাইকে ধরে মামলাটি ফয়সালার জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে পাঠাক। তিনটে নাগাদ সেই মিছিল শুরু হয়েছে কলকাতায়। 

জিএইচ/এসিবি(পিটিআই, এএনআই)