লোহার খাঁচায় মাছ চাষ
উগান্ডার লেক ভিক্টোরিয়ার মাছের মজুদ গত দুই দশকে ব্যাপক মাত্রায় কমে যাওয়ায় ভুগতে হচ্ছে জেলেদের৷ চাহিদা মেটাতে বিকল্প মাছ চাষের দিকে ঝুঁকছেন আফ্রিকার বড় এই হ্রদ অঞ্চলের মানুষেরা৷
চাহিদা বৃদ্ধি
লেক ভিক্টোরিয়ার উপকূল থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরের আমবারকোর্ট মার্কটে ‘নিল পার্চ’ বিক্রি করছেন ব্যবসায়ী বেটি পিমেরি৷ একটি বড় আকারের নীল পার্চ সর্বোচ্চ ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে৷ যদিও এই মাছ লেক ভিক্টোরিয়াতে বর্তমানে অপ্রতুল৷ অবৈধভাবে মাছ শিকার এবং জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে চাহিদা বাড়ায় তৈরি হয়েছে মাছের এই সংকট৷
খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ
মাছের সংকট মোকাবিলায় চীনা পদ্ধতির দ্বারস্থ হয়েছেন ওই এলাকার মানুষ৷ বুগুনগু এলাকার ‘এসওন ফিশ ফার্ম’-এ ভোক্তার চাহিদা মেটাতে ভিন্ন উপায়ে মাছ চাষ চলছে৷ প্রথমে এ ধরনের পুকুরে মাছকে বড় করা হয়, এরপর নেয়া হয় বড় পুকুরে৷ সবশেষে সেগুলোর স্থান হয় লেকের মধ্যে লোহার খাঁচায়৷ সুবিধামত আকার না হওয়া পর্যন্ত খাঁচার মধ্যেই মাছগুলোকে পালন করা হয়৷
পরিবেশের ঝুঁকি
২০০৪ সাল থেকে ২০০৬ সময়ে খাঁচায় মাছ চাষের উদ্যোগ চলে পরীক্ষামূলকভাবে৷ তখন থেকে হাজার হাজার খাঁচা রাখা হয় লেক ভিক্টোরিয়ার কেনিয়া ও উগান্ডা তীরে৷ এভাবে মাছ চাষের সময় রাসায়নিক দেওয়া খাবার ও মাছের মলে পরিবেশের ক্ষতির বিষয়ে সতর্ক করেছেন পরিবেশবাদীরা৷ অবশ্য বিজ্ঞানীরা এক্ষেত্রে আরো উৎকৃষ্ট নীতি গ্রহণ ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো গড়তে চেষ্টা চালাচ্ছেন৷
বিনামূল্যের খাবার
শিকারি পাখির এমন উপস্থিতি এসওন ফিশ ফার্মে মাছের খাঁচা এলাকার পরিচিত দৃশ্য৷ খাঁচার মাছকে খাবার দেওয়ার সময় সেখান থেকে ছিটকে পড়া খাবার খেতে আসে অন্য মাছেরা৷ আর অন্য মাছগুলোক ধরে খায় এসব পাখি৷ একটি বড় খাঁচা ৫ হাজারের মতো মাছ ধারণ করতে পারে৷ আর বৃদ্ধি ভালো হওয়ায় পুরুষ মাছকে গুরুত্ব দেন চাষিরা৷
মাছ নিয়ে বাজারে
রাজধানী কাম্পালার উদ্দেশ্যে মাছ নিয়ে যেতে মেসেসে সমবায় সমিতির চাষিদের সতর্ক প্রস্তুতি নিতে হয়৷ কারণ রাজধানীর দূরত্ব সেখান থেকে ৮০ কিলোমিটার৷ মাছগুলোকে প্লাস্টিকে মোড়ানোর পর সেগুলোতে বরফ দেওয়া হয়ে থাকে৷
নিল পার্চ চলে ইউরোপেও
কাম্পালার উপকণ্ঠের গাবা ল্যান্ডিং সাইটে নিল পার্চ নিয়ে এসেছেন একজন খুচরা বিক্রেতা৷ নিল তেলাপিয়া খাঁচার ভেতরে বাঁচতে পারলেও রাক্ষুসে নিল পার্চ মাছ উৎপাদিত হয় বাইরে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং এশিয়ায় নিল পার্চের বড় বাজার রয়েছে৷
কোনো কিছু ফেলনা নয়
মাছ বিক্রেতারা কোনো কিছুকেই আবর্জনা হতে দেন না৷ উগান্ডার জিনজা এলাকার মেসেসে ল্যান্ডিংয়ে নিল পার্চের মাথা আর মেরুদণ্ড শুকাচ্ছেন সাফিনা নামুকোসে৷ অতীতে মাছের এই অংশগুলো ফেলে দেয়া হলেও বর্তমানে সেগুলোকে লবণ দিয়ে শুকিয়ে দক্ষিণ সুদান, রুয়ান্ডা, কঙ্গোসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়৷