1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

লোকসভার ফলে বঙ্গে বদলাবে সমীকরণ?

পায়েল সামন্ত কলকাতা
২২ জুন ২০২৪

লোকসভা নির্বাচনে বাম ও কংগ্রেস জোট মুখ থুবড়ে পড়েছে। এরপরই প্রদেশ কংগ্রেসে নেতৃত্ব বদলের জল্পনা শোনা যাচ্ছে। তাহলে কি রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণও বদলে যেতে পারে?

https://p.dw.com/p/4hO4A
প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
গত বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও দেশের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম।ছবি: Ravi Batra/ZUMA/IMAGO | Debajyoti Chakraborty/NurPhoto/picture alliance

নির্বাচনী প্রচারে সাড়া জাগালেও বাম ও কংগ্রেস জোট মাত্র একটি আসনে জয় পেয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস বিপুলভাবে জয়ী হওয়ায় প্রশ্নের মুখে জোটের ভবিষ্যৎ। বিশেষত কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় ও প্রদেশ নেতৃত্বের মধ্যে টানাপড়েনে নতুন সমীকরণের ইঙ্গিত মিলছে।

হতোদ্যম বামেরা

লোকসভা নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে ৩০টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল বামফ্রন্ট। ১২টি আসনে লড়েছিল কংগ্রেস। কোচবিহার ও পুরুলিয়া কেন্দ্রে বোঝাপড়া হয়নি ফরওয়ার্ড ব্লক বেঁকে বসায়। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম থেকে শুরু করে অন্যান্য তরুণ প্রার্থীরা প্রচার পর্বে নজর কাড়লেও প্রত্যেকেই হেরে গিয়েছেন। সেই হারের ধাক্কা কি এখনো সিপিএম কাটিয়ে উঠতে পারেনি?

এই প্রশ্ন উঠছে সিপিএম তথা বামফ্রন্ট ২১ জুন উদযাপনে কার্যত হাত গুটিয়ে থাকায়। ১৯৭৭ সালের ২১ জুন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট সরকার। মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন জ্যোতি বসু। সেই জোটের জয়যাত্রা চলেছিল ২০০৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন পর্যন্ত।

সত্তরের দশকে দেশে জরুরি অবস্থা ও রাজ্যে কংগ্রেস সরকারের আমলে হওয়া হিংসার পর বিপুলভাবে ক্ষমতায় এসেছিল বামফ্রন্ট। তাই প্রতি বছর বেশ ঘটা করে ২১ জুন দিনটি পালন করা হত। ২০১১ সালে বামফ্রন্ট সরকারের পতনের পর তৃণমূল ক্ষমতায় এলেও দিনটি গুরুত্ব সহকারে মনে করত বামেরা। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রমী ছবি দেখা গেল।

২১ জুন, শুক্রবার বামফ্রন্ট সরকারের প্রতিষ্ঠা বার্ষিক পালনে আলিমুদ্দিনের তৎপরতা তেমন চোখে পড়েনি। কেন্দ্রীয়ভাবে অনুষ্ঠান হয়নি। জেলা স্তরে প্রতি বছর যে অনুষ্ঠান হয়, তাতেও ভাটার টান। বারবার বড় নির্বাচনে শূন্য পাওয়া সিপিএম কি বিশেষ দিনটি উদযাপনে উৎসাহ হারিয়েছে? এই প্রশ্ন উঠেছে।

সমাজ মাধ্যমে কয়েকটি বার্তা প্রকাশ করা ছাড়া বামেদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। এসব পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে তির্যক মন্তব্য এসেছে। অনেক ক্ষেত্রেই সমালোচনার মুখে পড়েছে সিপিএম। প্রশ্ন উঠেছে তাদের রাজনৈতিক কৌশল নিয়ে।

২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে বাম, কংগ্রেস ও আইএসএফ জোট তৃণমূলের বিরুদ্ধে ভোট প্রাপ্তির নিরিখে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছিল বিজেপিকে সামান্য পিছনে ফেলে। পরের একাধিক উপনির্বাচনে এই প্রবণতা দেখা গিয়েছিল।

কিন্তু এই লোকসভা নির্বাচনে ফিরে এসেছে আগের ছবি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে বামেদের ভোটে ধস নামিয়ে পুষ্ট হয়েছিল বিজেপি। এবারও তাই হয়েছে। কয়েকটি আসনে বাম, কংগ্রেস জোট ভালো ভোট পেলেও বামেরা সারা রাজ্যের হিসেবে ছয় শতাংশ ভোট পেয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক রাজাগোপাল ধর চক্রবর্তী বলেন, "বামেরা কী চাইছে সেটা মানুষের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে না। যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে লড়ে তারা ক্ষমতায় এসেছে, এখন সেই দল সঙ্গী হয়ে উঠেছে। বামেরা তৃণমূলের বিরোধিতা করছে, অথচ ইন্ডিয়া জোটের বৈঠকে তাদের একসঙ্গে দেখা যাচ্ছে। ফলে সমর্থকরা বিভ্রান্ত হয়ে পড়ছেন। মানুষের রুটি, রুজি নিয়ে তারা কথা বললেও সিপিএমের রাজনৈতিক দিশা নিয়ে ধোঁয়াশা থাকায় খাতা খুলতে পারেনি।"

তার বক্তব্য, দক্ষিণবঙ্গের কয়েকটি কেন্দ্রে তৃণমূল বিরোধী সংখ্যাগুরু ভোট কেটে আদতে শাসক দলকে সুবিধা করে দিয়েছেন সেলিমরা। আবার তৃণমূল বিরোধী সংখ্যালঘু ভোটেও বামেরা থাবা বসাতে পারেনি। সেই ভোটের কিছুটা বরং আইএসএফ পেয়েছে।

কংগ্রেসে টানাপোড়েন

লোকসভা ভোটে বহরমপুর কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছেন পাঁচবারের সাংসদ অধীর চৌধুরী। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর গত লোকসভায় দলের নেতা ছিলেন। কঠোর তৃণমূল বিরোধী অধীর পশ্চিমবঙ্গে বাম ও কংগ্রেস জোটের পক্ষে বরাবর সওয়াল করেছেন।

নির্বাচনে অধীর নিজের কেন্দ্র ধরে রাখতে পারেননি। জোটের একমাত্র জয়ী প্রার্থী হিসেবে টিমটিম করছেন মালদা দক্ষিণের সাংসদ ঈশা খান চৌধুরী। জল্পনা শোনা যাচ্ছে, এই বিপর্যয়ের জেরে প্রদেশ সভাপতির পর হারাতে পারেন অধীর।

যদিও এই ধরনের জল্পনা খারিজ করে দিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি। শুক্রবার কলকাতায় কংগ্রেসের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক বসে। সেখানে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত ছিলেন। এই বৈঠকে অধীরের সভাপতিত্ব হারানো বা বাম ও কংগ্রেস জোট বাতিলের বিষয় কোনো সূত্র বেরোয়নি বলেই খবর।

বরং প্রদেশ কংগ্রেসের একাধিক নেতা তৃণমূল বিরোধিতার পথেই থাকার পক্ষে জোরালো সওয়াল করেছেন। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অপসারণের বিরুদ্ধে মত দিয়েছেন একাধিক নেতা। অনড় অধীর বুঝিয়ে দিয়েছেন, তিনি তৃণমূল বিরোধিতার পথ ছাড়ছেন না।

তৃণমূলের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে কংগ্রেসের প্রদেশ ও কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে মধ্যে দ্বন্দ্ব অনেকদিনের। নির্বাচনের পরেও সেই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। কেন্দ্রীয় কংগ্রেস তৃণমূলের প্রতি নরম হলেও প্রদেশ কংগ্রেস খুবই কঠোর। এরই মধ্যে জল্পনায় ঘি ঢেলেছে শীর্ষ কংগ্রেস নেতার সঙ্গে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বৈঠক।

গত বৃহস্পতিবার নবান্নে মমতার সঙ্গে বৈঠক করেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা ও দেশের সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। সূত্রের খবর, ইন্ডিয়া জোটের প্রতিনিধি হিসেবে নবান্নে এসেছিলেন কংগ্রেস নেতা। নির্বাচনের আগে ও পরে এআইসিসি নেতারা বার্তা দিয়েছেন, জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী জোটে তারা মমতাকে চান।

'সোনিয়ার দূত হয়ে নবান্নে এসেছিলেন চিদম্বরম'

এই বৈঠক প্রসঙ্গে সাংবাদিক সুমন ভট্টাচার্য বলেন, "লোকসভা ভোটের ফল বেরোনোর পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেসেজ করেছিলেন রাহুল গান্ধীকে। সোনিয়া পুত্র তার উত্তর দেননি। এর ফলে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের সম্পর্কে শৈত্য তৈরি হয়। ইন্ডিয়া জোটের ভিতরেই ছোট জোট গঠনে উদ্যোগী হয় তৃণমূল। শৈত্য দূর করতে সোনিয়া গান্ধীর দূত হিসেবে নবান্নে এসেছিলেন চিদম্বরম। বরফ গলেছে বলেই কেরলের উপনির্বাচনে প্রিয়াঙ্কা গান্ধীর হয়ে প্রচারে যেতে সম্মতি জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।"

লোকসভা ভোটে ২৯টি আসন পাওয়ার পর মমতার গুরুত্ব ইন্ডিয়া জোটে আরো বেড়েছে। কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টির পর তৃণমূল এই জোটের সবচেয়ে বড় শরিক। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচনে পরাজিত অধীর কতটা তৃণমূল বিরোধিতার ধ্বজা তুলে রাখতে পারবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন আছে।

তাই ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল ও কংগ্রেসের বোঝাপড়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করেন সুমন। তিনি বলেন, "লোকসভা নির্বাচনে দুই দলের বোঝাপড়া হলে বিজেপি সিঙ্গল ডিজিটে নেমে যেত। রায়গঞ্জ, পুরুলিয়া, বিষ্ণুপুরে বিজেপি জিততে পারত না। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভবিষ্যতে বিজেপিকে চ্যালেঞ্জ জানাতে দুই দলের জোট হতে পারে। অধীর চৌধুরী বা অন্য কেউ নন, এআইসিসি ঠিক করবে রাজ্যে কংগ্রেস কার সঙ্গে জোট করবে।''