লেজার’এর ৫০ বছর
১৩ মে ২০১০আইনস্টাইন তাঁর স্টিমিউলেটেড এমিশন তত্ত্বে বলেছিলেন, একটি ফোটন বা আলোর কণা একটি উত্তেজিত অণুকে একটি অনুরূপ ফোটন বার করতে বাধ্য করতে পারে৷ - সেখান থেকে আমাদের যেতে হবে ১৯৬০ সালে, ক্যালিফোর্নিয়ার হিউস রিসার্চ ল্যাবোরেটরিতে৷ সেখানে দেখতে পাবো কিভাবে থিওডোর মেইম্যান নামধারী এক ৩২ বছর বয়সের বৈজ্ঞানিক একটি সুইচ অন করে দেখছেন গোলাপি চুনির স্ফটিক কণা থেকে কিভাবে আলোর স্পন্দন ঠিকরে বেরচ্ছে৷ - অবশ্য মেইম্যানের আগে চার্লস টাউনস বলে এক মার্কিন পদার্থবিদ মাইক্রেওয়েভ ‘মেজার' নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছিলেন৷ সেটা ১৯৫৩ সালের কথা৷
‘ডেথ রে'
১৯৬০-এ লেজার যখন স্বমহিমায় আবির্ভূত হল, তখন ঠাণ্ডা লড়াই চলেছে, চলেছে মঙ্গলগ্রহের মানুষদের পৃথিবী আক্রমণের দুঃস্বপ্ন নিয়ে কল্পনাবিলাস৷ তাই সে-আমলের এক পত্রিকা লেজার'কে ‘ডেথ রে' বা ‘মৃত্যু-রশ্মি' আখ্যা দিয়ে বসেছিল৷ অথচ লেজার যে ঠিক কি করে, তা' বলতে গেলে আজ বলতে হয়, আলোর গতিতে সুবিশাল ব্যাচে ব্যাচে করে তথ্য পাঠায় এবং জমা রাখে, পদার্থের মাপ করে এবং অতিমিলিমেট্রিক নিপুণতা ও নিখুঁততার সঙ্গে তা কাটে৷
বড় উপকারী
সিডি কি ডিভিডি, হলোগ্রাম কি লাইট শো, সবই চলে লেজারে৷ আরো বড় কথা, বিলিতী সুপারমার্কেটগুলোর বার কোড স্ক্যানার চলে লেজারে৷ লেজারকে পাওয়া যাবে হাই-টেক লক্ষ্যসন্ধানী বোমায়, স্নাইপারদের রাইফেলের নিশানা করার ‘সাইটে', নক্ষত্র দেখার টেলিস্কোপে এবং পারমাণবিক ‘ফিউজনে' - যা নিয়ে নাকি এখন উত্তর কোরিয়া বড়াই করছে৷ নয়তো লেজার মোটর গাড়ির বডি কাটতে পারে, ইন্টারনেটকে শক্তি যোগায়, ক্যানসার থেকে শুরু করে চোখ কি ত্বকের অপারেশন, কোন কাজটা লেজার দিয়ে হয় না বলুন তো?
যাত্রাপথ
যাই হোক, সেই ঘন চুনির লেজার কয়েক মাসের মধ্যেই প্রতিদ্বন্দ্বী বেল ল্যাবোরেটরি'র হেলিয়াম নিয়ন লেজারের কাছে হার মানে৷ তার দু'বছর পরে আসে গ্যালিয়াম আর্সেনাইডের তৈরী ডায়োড৷ এখন শোনা যাচ্ছে আসছে ‘‘ফেমটোসেকেন্ড'' লেজার - সেটা কি বস্তু জিগ্যেস করে লজ্জা দেবেন না! ব্যাপারটা যদি অতোই সোজা হতো, তা'হলে এক লেজার নিয়ে দশ-দশজন বিজ্ঞানী নোবেল পুরষ্কার পেতেন না৷ তবে ফেমটোসেকেন্ড লেজার নাকি কম্প্যুটারের হার্ড ডিস্কের কাজের গতি এক লক্ষ গুণ বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে৷
এবং শোনা যাচ্ছে লেজারের নাকি সেখানেই শেষ নয়৷ হবে কি করে? বয়স তো মাত্র ৫০, তা'ও হবে আগামী রবিবার৷
প্রতিবেদক: অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
সম্পাদনা: আরাফাতুল ইসলাম